![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
দুইদিনের জন্য কলকাতা গিয়ে ফিরলেন ২২ বছর পর!
বলা হয়ে থাকে, নতুন নায়িকাদের আবিভার্বে ১৯৯৬ সালে দেশ ছেড়ে কলকাতায় থিতু হন অঞ্জু ঘোষ। এমন অনুমান নিয়ে প্রশ্ন উঠাই স্বাভাবিক। কারণ, ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ইতিহাসের মাত্র ৬ বছরের মাথায় এভাবে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘটনা বিস্ময়কর।
টানা ২২ বছর পর তিনি আবারও দেশে আসলেন। পা রাখলেন প্রিয় কর্মস্থল এফডিসিতে। শিল্পী সমিতির অফিসে বসে প্রকাশ করলেন নিজের আবেগ-অনুভূতির কথা। যদিও ঘুরে ফিরে উপস্থিত সাংবাদিকদের কৌতূহলী জিজ্ঞাসা ছিল, কোন ক্ষোভে, অভিমানে তিনি দেশ ছেড়েছেন?
কিন্তু প্রশ্নকর্তাদের অবাক করে দিয়ে অঞ্জু ঘোষ বেশ স্পষ্ট ভাষায় জানালেন, দেশ ছাড়ার বিষয়ে তার কোনও অভিমান কিংবা ক্ষোভ নেই। তার ভাষায়, ‘আমার কোনও দিন কারও প্রতি ক্ষোভ ছিলো না। ফলে বিশেষ কোনও কারণ কিংবা ব্যক্তির কারণে আমি পালিয়ে যাইনি। মজার বিষয় হলো, আমি ওখানে (কলকাতায়) দুই দিনের জন্য গিয়েছি। এরপর ফেঁসে গেছি। আর ফেরা হলো না। এর পেছনে আর কোনও কিন্তু নেই।’
একটু থেমে তিনি আরও বললেন, ‘এটা আমার দেশ। এখান থেকেই নিঃশ্বাস নিয়ে বড় হয়েছি। সেই নিঃশ্বাস নিয়েই বেঁচে এখনও আছি। যেখানেই থাকি বাংলাদেশ আমার হৃদয়ে আছে।’
নিজের তারকা জীবন প্রসঙ্গে বলেন, ‘তারকা বলতে কিছু নেই। আমার কাছে মনে হয়, পৃথিবীতে যত রকমের শ্রমিক আছে সবচেয়ে বড় শ্রমিক আমরা, যারা শিল্পী। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। এটাও মনে রাখা দরকার, হাজার কোটি টাকা মানুষ আমাদের ওপর লগ্নি করে। আমি প্রায় সাড়ে তিনশ ছবি করেছি। একবার ভাবুন, প্রযোজকরা আমার ওপর ভরসা করে কত বড় লগ্নি করেছেন? সেই ভরসার মূল্যটা তো ফেরত দিতে হবে। তাই নিজেকে তারকা ভাবিনি, শ্রমিক ভেবেছি সবসময়। আগেও শ্রমিক ছিলাম, এখনও আছি। এখনও পরিশ্রম করে যাচ্ছি।’
কথা কথায় অঞ্জু ঘোষ দুঃখ প্রকাশ করেন দুই বাংলার সিনেমার চলমান বেহাল দশার কথা উল্লেখ করে। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় এসে আমি যে ভাই-ভাবির বাসায় উঠেছি সেখানকার একটা কথা বলি। গতকাল সন্ধ্যার কথা। ড্রইংরুমে বসে ভাবি একটা সিরিয়াল দেখছিলেন। আমিও বসে আছি। অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ করলাম, ভাবি কেমন মনোযোগ দিয়ে সিরিয়ালটা দেখছিলেন। আমি সিরিয়াল না দেখে ভাবিকেই দেখলাম মুগ্ধ হয়ে। একই দৃশ্য দেখি কলকাতাতেও, ঘরে ঘরে। এসব দেখে বুক চিন চিন করে। ভাবতে কষ্ট হয়, এই মানুষগুলো সিনেমাটাকে এখন আর এভাবে দেখে না। যেটা আমাদের সময়ে দেখতো। দুই বাংলাতেই সিনেমার অবস্থা খুব খারাপ। মানুষ এখন সিরিয়াল দেখে, সিনেমা না। এসব নিয়ে আমাদের ভাবা দরকার।’
জানালেন, এই সফরে তার মায়েরও আসার কথা ছিল ঢাকায়। কিন্তু ক’দিন আগে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। অথচ ঢাকায় আসা নিয়ে মা-মেয়ের পরিকল্পনা ছিল অনেক।
এরপর বলেন, ‘মায়ের কথা বেশি বললে আমার কান্না আসবে। আমি চাই না এই আনন্দ দিনে কাঁদতে। আজ সবচেয়ে ভালো লাগছে আমার মাতৃভূমিতে পা দিতে পেরেছি। এরচেয়ে বড় সুখ বড় আনন্দ আর কিছুতে নেই। অনেক প্রবলেম হয়েছে আসতে। সব ভুলে গেছি। আপনারা আমার জন্য আশীর্বাদ করবেন।’
এর আগে বেলা সাড়ে তিনটায় শিল্পী সমিতির অফিসে ফুলের মালা দিয়ে অঞ্জু ঘোষকে বরণ করে নেন তারই সহশিল্পী ইলিয়াস কাঞ্চন। এ সময় সঙ্গে ছিলেন সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির আমন্ত্রণে টানা ২২ বছর পর ৬ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন অঞ্জু ঘোষ। আজ ৯ সেপ্টেম্বর তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় এফডিসিতে। এ সময় অঞ্জু ঘোষ ও ইলিয়াস কাঞ্চন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানসহ অনেকেই। আগামীকাল তিনি আবার ফিরে যাবেন কলকাতায়।
বাংলা ট্রিবিউন অবলম্বনে।