Select Page

নাম্বার ওয়ান মডেল মৌ

নাম্বার ওয়ান মডেল মৌ

নব্বই দশকে বিটিভিতে বাংলা ছায়াছবি দেখার ফাঁকে যে বিজ্ঞাপন হত সেগুলোতে বিরক্তি আসত না। বরং ছবির ফাঁকে বিজ্ঞাপনও দেখতাম আমরা। বিজ্ঞাপনে তখন সবচেয়ে পরিচিত মুখ ছিল মৌ তার সাথে নোবেল। এ জুটি আদর্শ ছিল।

সেই আদর্শ মডেল মৌ-এর জন্মদিন ২১ জুন। ১৯৭৬ সালে। মৌ মডেলিং এর এমন একটি নাম যে নামের মুখটি স্নিগ্ধতা ছড়ায়। কেয়া-র ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে মৌ সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। ‘কেয়া’ নামটি আনলেই নোবেল-মৌ জুটির মুখটা ভাসে। ইউটিউবে এখনো সে বিজ্ঞাপনগুলো দেখলে এক ঝটকায় নব্বইয়ের রঙিন সময়টাতে চলে যাই আর তখন মনে হয় শৈশব-কৈশোরটা কেন আরো দীর্ঘ হলো না!

মৌ-এর বিজ্ঞাপনী জিঙ্গেলের মধ্যে নির্বাচিত কিছু জিঙ্গেল-

* অনুরাগের ছোঁয়া ভালোবাসার ছোঁয়া কেয়া লিপজেল কেয়া – কেয়া লিপজেল

* জীবন মানেই পাগলা ঘোড়া হয়ে ছুটে চলা/ জীবন শুধু ভালোবাসার কথা বলা – কেয়া লন্ড্রী সাবান

* রূপসীর রেশমী চুলে, দোলে গো কেয়া দোলে। চুলের ঐ মেঘ কাজলে, দোলে গো কেয়া দোলে – কেয়া কোকোনাট হেয়ার ওয়েল

* জীবন মানেই পাগলা ঘোড়া হয়ে ছুটে চলা, জীবন শুধু ভালোবাসার কথা বলা – কেয়া লন্ড্রী সাবান

* স্বপ্নীল চোখে ভীরু ভীরু বুকে প্রিয়া, এসো স্বর্ণালী সুখে বর্ণালী সুখে প্রিয়া, প্রিয়ার মনের কথা যেন মৌচাক জুয়েলার্স – মৌচাক জুয়েলার্স

* ঢেকে রাখো চাঁদমুখ রূপসী, চুরি হয়ে যাবে রূপ তা জানো কি, রূপ যদি চুরি হয় ভয় কি, রঙে রঙে হয়েছি আমি রূপসী, রঙ লাগল মনে রঙ লাগল প্রাণে, শাহজাদী মেহেদির রঙে – শাহজাদী মেহেদী

* হাত ধরেছে বৃষ্টির ফোঁটা, আজকে এল খুশির দিন, মন ময়ূর আজ পেখম মেলে, নাচে শুধু তা ধিন ধিন, এত খুশি রাখি কোথায়, আমার পানে মন উড়ে যায় কারণ অকারণ  – ডেকো নুডুলস

আপন জুয়েলার্স, মৌচাক জুয়েলার্সের বিজ্ঞাপনগুলো পাওয়া যায় না। কিছু বিজ্ঞাপনে জিঙ্গেল ছাড়াই সিনেমাটিক আবহ ছিল যেমন ‘পাকিজা প্রিন্ট শাড়ি।’ বিজ্ঞাপনের শেষে বলা হয়-‘নারীর প্রথম ভালোবাসা পাকিজা প্রিন্ট শাড়ি।’ এ বিজ্ঞাপনে অসাধারণ লুক ছিল নোবেল-মৌ জুটির। স্যুট ছিল সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপে। ‘লাক্স’ এর ধারাবাহিক বিজ্ঞাপনে মৌ-এর রূপের রহস্য জানতে চাওয়া হয় মৌ বলে-‘সবার আগে সুন্দর ত্বক।’ কিছুদিন আগে ‘রবি’ মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপনে পনেরো বছর পরে নোবেল-মৌ কাজ করেছে। নোবেল বিজ্ঞাপনে বলে সে রিলেশনশিপের ব্যাপারে খুব সিরিয়াস থাকবে। সে ফিরতে চায় তখন মৌ বলে-‘ফিরতে হলে রবিতেই ফেরো।’ তারপর সব অফারের কথা বলে। এ বিজ্ঞাপনের সাক্ষাৎকারে দুজনই গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলেছে। মৌ নতুনদের ধৈর্য নিয়ে কাজ করতে বলেছে। নোবেল মৌয়ের সাথে যোগ করে বলেছে-‘ধৈর্যই আসল। একটা ভালো কাজ করলে দশটা ভালো কাজের অফার আসবে।’

মৌয়ের বাবা সাইফুল ইসলাম একজন শিল্পী আর মা রাশা ইসলাম নৃত্যশিল্পী ছিল। মায়ের কারণেই মৌয়ের সফল ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল মৌ নিজে এটা বলেছে। ১৯৮৮ সালে মৌ যখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল বাটেক্সপোর একটা শো-এর জন্য মডেল দরকার ছিল। তার দুলাভাই বলেছিল মৌ কাজটা করুক। সেখান থেকেই মডেলিং-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। টেলিভিশনে প্রথম মডেলিং ‘বাউন্স শ্যাম্পু’-র বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। প্রথম পারিশ্রমিক পেয়েছিল ৭৫ হাজার টাকা। মৌ সফল একজন নৃত্যশিল্পী ছিল। অভিনয়ে মৌয়ের কিছু দুর্বলতা থাকলেও নাচে আদর্শ। মঞ্চে রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্রাঙ্গদা, শ্যামা, চণ্ডালিকা, মায়ার খেলা’ নাটকগুলোতে অভিনয় করেছিল। বিশেষ করে বাফা-র বুলবুল ললিতকলা একাডেমি-র মঞ্চ নাটকে মৌয়ের পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ।

মৌয়ের প্রথম নাটক ‘অভিমানে অনুভবে’ প্রচারিত হয় ১৯৯৪ সালে টনি ডায়েসের বিপরীতে। নোবেলের বিপরীতে ‘কুসুম কাঁটা’ খুব আলোচিত নাটক ছিল।

অন্যান্য নাটক – অন্য তেপান্তর, পাথরে ফোটাব ফুল, হঠাৎ বৃষ্টি, অতঃপর সুদক্ষিণা, কে সে, বাউন্ডুলে এক্সপ্রেস, আড়াল, বোকা মানুষ, তখন হেমন্ত, শ্রাবণের বৃষ্টি, সেই চোখ, হাইওয়ে, লাভ ফাইনালি, মন খারাপের দৃশ্যাবলী, আয়নার গল্প, ত্যাগ ইত্যাদি।

মৌয়ের বিয়ে হয়েছে দেশের শীর্ষ জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসানের সাথে। এই তারকা দম্পতি ভীষণ জনপ্রিয়।

আজকালকার বেশিরভাগ বিজ্ঞাপনে আসে বিরক্তি আর নব্বই দশকে যখন মৌ কাজ করত তখন বিজ্ঞাপনও ভালো লাগত এখানেই বোঝা যায় বিজ্ঞাপনের ধরন কি হওয়া উচিত এবং মৌ কত বড় সম্পদ ছিল। অনেকেই মৌ-কে নায়িকা হিসেবে দেখতে চাইত। মৌ-এর জন্য অনেক ভালোবাসা।


মন্তব্য করুন