Select Page

নোলক, পাসওয়ার্ড, আবার বসন্ত : কোন সিনেমা কেন আলোচনায়?

নোলক, পাসওয়ার্ড, আবার বসন্ত :  কোন সিনেমা কেন আলোচনায়?

বাংলা সিনেমাপ্রেমীদের জন্য এবারের রোজার ঈদ স্পেশাল। কারণ, এবারই প্রথম ঈদের সবগুলো ছবি ঢাকার দর্শকেরা স্টার সিনেপ্লেক্স এবং যমুনা ব্লকবাস্টারে উপভোগ করতে পারবে। এতে এবারের ঈদের ছবিগুলোর মধ্যে মিনিমাম এক‌টি কোয়ালিটি আশা করা যায়, যা আগের ছবিগুলোতে থাকতো না। দেখা যেতো পাঁচটি ছবি মুক্তি পেলে ২-৩ টি থাকতো মিনিমাম কোয়ালিটির ছবি, বাকি ২-৩ টি থাকতো নিম্নমানের যা মাল্টিপ্লেক্সে চলার উপযোগী না।

এবারের পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে সারা দেশের প্রেক্ষাগৃহে মোট ছবি মুক্তি পাচ্ছে সবমিলিয়ে তিনটি। যদিও প্রায় ৬-৭ টি মুক্তির কথা থাকলেও ভিন্ন ভিন্ন কারণে তারা পিছিয়ে গিয়েছে। বরাবরের মতো এবারের ঈদেও থাকছে শাকিব খানের একাধিক ছবি। তবে নতুন ব্যাপার হলো, এবারে তার একাধিক ছবির মধ্যে যে প্রতিযোগিতা দেখা দিয়েছে, বিগত কয়েক বছরে সেরকম কোনো প্রতিযোগিতা দেখা যায়নি।

এবারের ঈদে সবথেকে বেশি হাইপে থাকা সিনেমা হলো “পাসওয়ার্ড”। পরিচালক হলেন অভিজ্ঞ মালেক আফসারী, একসময় যার নামে সিনেমা হাউজফুল যেতো। আশির দশকের “ক্ষতিপূরণ” কিংবা নব্বই দশকের “এই ঘর এই সংসার”, এক এক করে ক্যারিয়ারের শুরু থেকে মাঝ অব্দি দারুণ সব কোয়ালিটি কমার্শিয়াল ছবি উপহার দিয়েছেন। নব্বই দশকের শেষ দিকে ঢালিউডের অন্ধকার যুগ শুরু হলে তিনিও সেই হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দেন। এরপর থেকে তার নির্মাণে সেই আগের জৌলুস আর পাওয়া যায়নি, যদিও এখনো যারা নিয়মিত হলে আসা-যাওয়া করে তারা এখনো বিশ্বাস করে তাকে দিয়ে কোয়ালিটি ছবি সম্ভব। এটি তার পরিচালিত ২৪ তম ছবি।

“পাসওয়ার্ড” ছবিতে শাকিবের সাথে আছেন শবনম বুবলী, এছাড়া রয়েছেন ইমন, মিশা সওদাগর, অমিত হাসান, শিবা সানু, ডন সহ আরো অনেকে। শাকিব খান এবং মোঃ ইকবালের প্রযোজনায় এই ছবিটি সর্বোচ্চসংখ্যক ১৭৫ টি হলে মুক্তি পাচ্ছে। এ্যাকশন-থ্রিলার জনরার এছবিটির ট্রেইলার বলছে বেশ হাইস্কেল বাজেটে নির্মিত ছবি এটি। যদিও ট্রেইলারের সাথে একটি তেলেগু ছবির বেশকিছু সিন মিলে যাওয়ায় তুমুল সমালোচনা হয়েছে, কারণ ট্রেইলার মুক্তির আগে ছবি সংশ্লিষ্টরা আশ্বস্ত করেছিল এবার তারা কোনোপ্রকার চুরি/নকলের আশ্রয় নিচ্ছেন না। নতুন গল্পের ইন্টারন্যাশনাল মাপের ছবি উপহার দিবেন। তবে সেই সমালোচনা সামলাতে না পারা এবং মিডিয়ার সামনে এসে প্রযোজকের বেফাঁস মন্তব্য করায় ছবিটিকে তুমুল নেতিবাচক সমালোচনায় নিয়ে যায়। এর পাশাপাশি রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচালকের অতিরঞ্জিত কথাবার্তা, যা ছবিটির প্রতি এক শ্রেণির দর্শকদের যেমন আগ্রহ সৃষ্টি করেছে, তেমনি আরেক শ্রেণির দর্শকদের চরম বিতৃষ্ণার স্বাদ দিয়েছে।

তবে যত যাই হোক, একদমই প্রমোশন না করা এছবিটি নিয়ে জনমানুষের নেতিবাচক সমালোচনা দিনশেষে ভালো প্রচারণা করে দিয়েছে, যার প্রমাণ ছবির ট্রেইলার এবং গানে কয়েক মিলিয়ন ভিউস। অবশ্য এতে এছবির গানসংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদের অবদানও কম নয়! পাশাপাশি ছবির গানগুলোকে চকচকে-তকতকে করতে যে দু’হাত ভরে পয়সা ঢালা হয়েছে, তা স্ক্রিনে স্পষ্ট।

তবে এতোকিছু করেও ছবিটি সহসাই ব্যবসায়িক লাভ ঘরে তুলতে পারছে না। কারণ, তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে শাকিব খানেরই আরেক ছবি “নোলক”। ফ্যামিলি-ড্রামা ঘরানার এছবিটি মহরত থেকেই ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তার কারণ এছবিতে শাকিব খান তার ক্যারিয়ারের সর্বাধিক পারিশ্রমিক গ্রহণ করেছিলেন! এছাড়া ছবিটি পরিচালক-প্রযোজক দ্বন্দ্বে অনেক বেশি আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে, যার সমাধান করতে মামলা-মোকদ্দমার সম্মুখীন পর্যন্ত হতে হয়েছে। আদালতের রায় অনুসারে নোলক মুক্তিতে কোনো বাধা না থাকায় পরিচালকের ক্রেডিটে “সাকিব সনেট এন্ড টিম” ট্যাগলাইন বসিয়ে এবারের ঈদে মুক্তি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রযোজকের ভাষ্যমতে, যেহেতু ছবিটিতে চরমভাবে পরিচালকের গাফিলতি ছিল, তাই সম্পূর্ণ টিমওয়ার্কের সহযোগিতার এই ছবিটি সম্পূর্ণ করা হয়েছে। এতো বড় সহযোগিতার পর এই ক্রেডিট তার পুরো টিমের প্রাপ্য।

“নোলক” এর যত সমালোচনা তা এছবির পরিচালক-প্রযোজক দ্বন্দ্ব নিয়েই। কিন্তু কন্টেন্টের দিক দিয়ে এছবি সর্বমহলেই এখন অব্দি প্রশংসা পাচ্ছে। “পাসওয়ার্ড” এর মতো ওতটা বাজ তৈরী করতে পারেনি, কিছুটা পিছিয়ে আছে। তবে একেবারে কোনঠাসা অবস্থায় নেই। প্রায় ৭৫ টির মতো হল পেয়েছে ছবিটি, যা বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বেশ ভালো শুরু। এছাড়া ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে জাজ মাল্টিমিডিয়া এছবিটির সাথে আছে। পাশাপাশি এও নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে, ছবিটি সম্পুর্ণ মৌলিক গল্পের। তাই এবারের ঈদে এইছবি “পাসওয়ার্ড” এর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়াবে, এ কথা বলাই যায়। শাকিব খানের সাথে এছবিতে আছেন ইয়ামিন হক ববি; অন্যান্য চরিত্রে আছেন তারিক আনাম খান, নিমা রহমান, রেবেকা রউফ, শহীদুল ইসলাম সাচ্চু, ভারতের রজতাভ দত্ত, রাজু দত্ত, সুপ্রিয় দত্ত সহ আরো অনেকে।

তৃতীয় ছবিটি একটু অন্যরকমের। “আবার বসন্ত”, অনন্য মামুনের ছবি। অনন্ত জলিলের ব্যবসাসফল সুপারহিট ছবি “মোস্ট ওয়েলকাম” এর পরিচালক ছিলেন তিনি। এছাড়াও তিনি নুসরাত ইমরোজ তিশাকে নিয়ে “অস্তিত্ব” উপহার দিয়েছিলেন, যে ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিশা জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। এছাড়া তিনি কাহিনীকার হিসেবেও ঢালিপাড়ায় বেশ সমাদৃত, শাকিব খান এবং অনন্ত জলিলের বেশ কিছু ছবির কাহিনী-চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন তিনি। এবার তিনি আসছেন এক অসম প্রেমের গল্প নিয়ে, বাইরের দেশে এরকম কনসেপ্ট নিয়ে যথেষ্ট ছবি হলেও আমাদের দেশে এরকম আইডিয়ার ছবি খুজেঁ পাওয়াও দুষ্কর!

“আবার বসন্ত” ছবির প্রধান চরিত্রে আছেন তারিক আনাম খান এবং নবাগতা অর্চিতা স্পর্শিয়া। এছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে আছেন মুকিত জাকারিয়া, আনন্দ খালেদ, নুসরাত জাহান পাপিয়া, ইমতু রাতিশ, কবরী মিজান, মনিরা মিঠুসহ আরো অনেকে। ছবিটি এবারের ঈদে সবচেয়ে কম সংখ্যক ৭টি হলে মুক্তি পাচ্ছে। দেখা যাক ভিন্ন ধারার এছবিটি কেমন দর্শক রেসপন্স পায়।

ঢাকার বাসিন্দা হলে ঈদের তিন ছবিই দেখুন, ভালোমন্দ যাই লাগুক সবার সাথে শেয়ার করুন। আর ঢাকার বাহিরের দর্শকেরা সামর্থ্য ও সুবিধায় যেটা পোষায়, সেটা দেখুন। আপনাদের সবাই ঈদ শান্তিতে কাটুক!

আবারো ঈদ মোবারাক! ❤


মন্তব্য করুন