Select Page

‘পর্যটক পরিচালক’ আজিজুর রহমান বুলি

‘পর্যটক পরিচালক’ আজিজুর রহমান বুলি

বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে আধুনিক ধ্যান ধারণার যত গুণী মানুষ ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম আজিজুর রহমান বুলি

বাংলাদেশের নাটক, টেলিফিল্ম ও চলচ্চিত্রের জন্য শিল্পী ও কলাকুশলীরা আজ বিদেশে যায় ডালভাত খাওয়ার মতো সহজে। অথচ আজ থেকে ৪২ বছর আগে শুটিংয়ের জন্য বিদেশে যাওয়া খুব সহজ ছিল না। ওই সময় বাংলাদেশের যে প্রযোজক-পরিচালক এই কঠিন কাজটা সহজ করেছিলেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বপ্রথম যিনি পুরো চলচ্চিত্র দেশের বাহিরে চিত্রায়ণ করেছিলেন তিনি হলেন আজিজুর রহমান বুলি।

বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে আধুনিক ধ্যান ধারণার যত গুণী মানুষ ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম বুলি। তার প্রযোজনা বা পরিচালনা মানেই জমজমাট গল্পের বিদেশে লোকেশনে চিত্রায়িত ব্যয়বহুল সিনেমা। তাই দর্শকদের কাছে তিনি ছিলেন ‘পর্যটক পরিচালক’।

প্রযোজক হিসেবে আজিজুর রহমান বুলি চলচ্চিত্রে যুক্ত হোন। সেই ছবি ছিল ‘নাচের পুতুল’। আর পরিচালক হিসেবে প্রথম ছিল ‘শেষ উত্তর’। দুটো চলচ্চিত্রই কালজয়ী ও দর্শকপ্রিয় হিসেবে সমাদৃত হয়েছিল।

প্রথম ছবি ‘শেষ উত্তর’ শাবানার সঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চনের জুটি হয়ে একমাত্র সিনেমা। এ ছবি নিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলছিলেন, আজিজুর রহমান বুলি বরাবরই তাঁ প্রযোজিত ছবির কাস্টিংয়ে নতুনত্ব আনতেন। আমি তখনো স্টার হইনি, হুট করে বললেন কাঞ্চন ভাই আপনাকে আর শাবানা ম্যাডামকে নিয়ে একটা ছবি বানাব। এবার আমিই পরিচালনা করব। আমি তো অবাক! শাবানা ম্যাডাম আমার সঙ্গে ছবি করবেন কেন? তিনি সে সময় রাজ্জাক, আলমগীরসহ বড় তারকাদের সঙ্গে কাজ করছেন। ভাবলাম, বুলি ভাই আমাকে শুধু শুধু স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। এক সপ্তাহ পর হঠাৎ আমাকে তাঁর ওয়ারীর বাসায় ডাকলেন। বললেন, শাবানা ম্যাডামকে চুক্তিবদ্ধ করেছি। আপনি শুটিংয়ের প্রস্তুতি নেন। আমি সেদিন জীবনের সেরা উপহার পেয়েছিলাম। ছবির একটি গান ছিল ‘দুনিয়ারে বলে দেরে’। গানটি আমার স্ত্রী জাহানারা প্রায়ই গুনগুন করে গাইত।

‘লাভ ইন সিঙ্গাপুর’ হলো আজিজুর রহমান বুলির সেই মাইলফলক চলচ্চিত্র যা ছিল বাংলাদেশের সর্বপ্রথম বিদেশে চিত্রায়িত। ববিতার ক্যারিয়ারে ‘লাভ ইন সিঙ্গাপুর’ আজও স্মরণীয় হয়ে আছে, সেই চলচ্চিত্রের ‘ওগো সিঙ্গাপুরী ম্যাম, তুমি করবা নাকি প্রেম’ গানটি ছিল মানুষের মুখে মুখে।

সিঙ্গাপুর থেকে বুলি কখনও চলে যান নেপালে দর্শকদের ‘নেপালী মেয়ে’ দেখাতে আবার কখনও চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে ‘দেশ বিদেশ’ দেখাতে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সর্বপ্রথম যুক্তরাষ্ট্রকেও তুলে ধরেন এই বুলি ‘দেশ বিদেশ’ চলচ্চিত্রে।

হাসপাতালে আজিজুর রহমান বুলির পাশে অঞ্জনা

আজিজুর রহমান বুলির ‘পর্যটক মন’ নিয়ে স্মৃতিচারণে সাংবাদিক মুজতবা সাউদ বলেন, স্বাধীনতার পর যাদের নেতৃত্বে দেশের চলচ্চিত্র শিল্প বলিয়ান হয়েছে তিনি তাদের অন্যতম একজন। এ দেশের প্রাচীন প্রকাশনা সংস্থা ওসমানিয়ার তিনি ছিলেন অন্যতম উত্তরাধিকারী। তবে আজিজুর রহমান বুলি নিজে তাঁর এই ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করতেন না। চলচ্চিত্রে দেশের সৌন্দর্য তুলে ধরার জন্য তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন প্রত্যন্ত এবং দুর্গম অঞ্চলে। বেশ কয়েকবার তার সঙ্গে যাবার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। সে সময়ের দুর্গম লালাখাল, সীমান্ত ঘেঁষা বালিশেরা চা বাগান, পাহাড়ি উপত্যকায় খাসিয়া পুঞ্জি, মাধবকুণ্ড, গগণটিলা, হবিগঞ্জের বিশাল হাওড়ে গিয়ে সেখান থেকে কৈ মাছ কেনা এমন সব অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার।

প্রযোজক ও পরিচালক দুই পরিচয়েই বুলি ছিলেন পুরোপুরি সফল। যার প্রমাণ প্রযোজক হিসেবে নাচের পুতুল, মতিমহল, হিম্মতওয়ালী, জুলি, শাদী মোবারক ও সমস্যা এবং পরিচালক হিসেবে শেষ উত্তর, লাভ ইন সিঙ্গাপুর, নেপালী মেয়ে, দেশ বিদেশ, বাপের বেটা, বাপবেটা ৪২০, লালু সর্দার, আজকের শয়তান চলচ্চিত্রগুলো।

বুলি ছিলেন পাক্কা বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং দর্শকদের বিনোদনের কথা চিন্তা করেই তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ কর‍তেন। যার ফলে বুলির নির্মিত প্রায় সবগুলো চলচ্চিত্র ব্যবসা সফল হয়েছিল।

আজিজুর রহমান বুলির আপন ছোট ভাই হলেন ৮০ দশকের সুদর্শন নায়ক মাহমুদ কলি এবং সাবেক স্ত্রী ছিলেন ৮০ দশকের জনপ্রিয় নায়িকা ও নৃত্যশিল্পী অঞ্জনা।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

কবি ও কাব্য

আমি ফজলে এলাহী পাপ্পু, কবি ও কাব্য নামে লিখি। স্বর্ণযুগের বাংলাদেশী চলচ্চিত্র এবং বাংলা গানকে এ যুগের সকলের কাছে পৌছে দেয়ার আগ্রহে লিখি।

মন্তব্য করুন