Select Page

পাঠান: মাল্টিপ্লেক্সে ‘উন্মাদনা’, সিঙ্গেল স্ক্রিনে ফাঁকা সিট

পাঠান: মাল্টিপ্লেক্সে ‘উন্মাদনা’, সিঙ্গেল স্ক্রিনে ফাঁকা সিট

রোজ রোজ ছোট পর্দায় হিন্দি সিনেমা দেখা হলেও এখন দেশীয় প্রেক্ষাগৃহ বাঁচাতে বড় পর্দায়ও দেখার আয়োজন হয়েছে। অনেক আলোচনার ঝড় তুলে গতকাল ১২ মে মুক্তি পেয়েছে শাহরুখ খানের ‘পাঠান’।

সিনেমাটির প্রথম দিনে মাল্টিপ্লেক্সে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দর্শকদের ‘উন্মাদনা’ দেখা গেছে। অন্যদিকে সিঙ্গেল স্ক্রিন কোথাও হাউজফুল হয়নি। অনেক হলে অর্ধেক সিটও ভরেনি।

প্রথমদিন ৭টি শাখায় ৩৪টি শো চালিয়েছে স্টার সিনেপ্লেক্স। শুক্রবার সন্ধ্যায় মাল্টিপ্লেক্স চেইনটির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ জানান, ৩৪টি শোর মধ্যে বেশির ভাগ শো হাউজফুল হয়েছে। ৯০ শতাংশ হলেই হাউজফুল ধরা হয় বলেও জানান তিনি।

রাজধানীর আরেক মাল্টিপ্লেক্স ব্লকবাস্টার সিনেমাসেও দর্শকের ভিড় দেখা গেছে। প্রেক্ষাগৃহটির ৩টি হলে ৯টি শো চলেছে। ব্লকবাস্টার সিনেমাসের বিপণন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, মোটামুটি ভালো। এখনো কোনো শো হাউজফুল হয়নি, তবে হাউজফুলের কাছাকাছি।

মাল্টিপ্লেক্সের ভিড় নিয়ে ‘কিন্তু’ রয়েছে। কারণ আগে কখনো দেখা না গেলেও এই সিনেমা নিয়ে রাতারাতি গজিয়ে উঠেছে শাহরুখ খানের ফ্যান ক্লাব। তারা একই রকম টি-শার্ট পরে, কেক কেটে উদযাপন করছেন ‘পাঠান’-এর মুক্তি। দিচ্ছেন সাক্ষাৎকার। ধারণা করা হচ্ছে, এ সব ইভেন্ট প্রচারণার অংশ। এ ছাড়া ফেসবুক গ্রুপ ভিত্তিক পরিচিত পিআর-দের অনেককেই বাংলা কনটেন্টের মতো ‘পাঠান’ নিয়ে সক্রিয় রয়েছে। মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে অবস্থাসম্পন্ন দর্শকদের ভিড়ে বিভিন্ন ‘ইভেন্ট’ করা দর্শক রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে স্পন্সরের প্রসঙ্গও চলে আসে। এমন উম্মাদনা সপ্তাহজুড়ে চলবে বলে অনেকের মন্তব্য।

অবশ্য ঢাকার অদূরে কেরানিগঞ্জের লায়নস সিনেমাসে প্রত্যাশা অনুযায়ী দর্শকের দেখা মেলেনি। সেখানকার সহকারী ব্যবস্থাপক (অপারেশন) হাসিব-উর-রহমান শনিবার বলেন, “আমাদের এখানে গতকাল সাতটি শো চলেছে পাঠানের। দর্শক যা এসেছিল তার অধিকাংশ ‘পাঠান’ দেখতেই এসেছিল। তবে সেই সংখ্যাটা আমাদের আশানুরূপ না। তবে আমরা সন্তুষ্ট। কেননা, অনেকে বিভিন্ন মাধ্যমে দেখার পরও ছবিটি দেখতে আসছেন দর্শক। আজকের অবস্থা দেখে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।”

রাজধানীর জনপ্রিয় সিঙ্গেল স্ক্রিন শ্যমলীতেও হাউজফুল যাচ্ছে না ছবিটি। তারপরও সন্তুষ্ট হল কর্তৃপক্ষ। শনিবার হাউজম্যান আহসান উল্লাহ বলেন, ‘মোটামুটি দর্শক হচ্ছে। গতকাল ৪০-৪৫ শতাংশ দর্শক উপস্থিতি ছিল। আজও সেরকম মনে হচ্ছে। তবে যতটা আশা করেছিলাম ততটা হচ্ছে না।’

মধুমিতা হলে  পাঁচটি শো চালানো হয়েছে, হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদের ভাষ্যে, দর্শকের সংখ্যা প্রত্যাশা চেয়ে কম ছিল। গড়ে ৪০ ভাগ দর্শক সিনেমাটি দেখেছেন। বলেন, ‘ছবিটি বেশ পুরোনো হয়ে গেছে, ফলে দর্শক কম এসেছেন। তারপরও আমরা আশাবাদী, শাকিব খান ছাড়া বাকি বাংলা সিনেমার চেয়ে ভালো দর্শকের উপস্থিতি দেখা গেছে।’

অন্যান্য সিঙ্গেল স্ক্রিনের মতো ‘পাঠান’ সিনেমার টিকিটের দাম বাড়িয়েছে মধুমিতা। ৮০ টাকার টিকিট ১০০, ১৫০ টাকার টিকিট ২০০ এবং ২৫০ টাকার টিকিট ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। যা অনেকটা সিঙ্গেল স্ক্রিনের নিয়মিত দর্শকের আওতার বাইরে এই দাম।

দেশের সবচেয়ে প্রেক্ষাগৃহ যশোরের মণিহার। হলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল ইসলাম শুক্রবার বলেন, ‘এরই মধ্যে অনেকে ইন্টারনেট থেকে সিনেমাটি দেখে নিয়েছেন। যে কারণে ১ হাজার ৪০০ আসনের বিপরীতে ১০০ থেকে ১৫০ জন দর্শক হয়েছে প্রতি শোতে।’

ব্যবস্থাপক তোফাজ্জেল হোসেনের ভাষ্যে, ‘ দর্শকের উপস্থিতি যেমনটা আশা করেছিলাম, তেমনটা হচ্ছে না। বাংলা সিনেমার মতো “পাঠান”-এর দর্শকও গতানুগতিক।’

চট্টগ্রামের সুগন্ধা সিনেপ্লেক্সে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রেক্ষাগৃহটির এক হলে তিনটি শো চলেছে। প্রতি শোতে ৭০ ভাগের মতো দর্শকের উপস্থিতি ছিলেন।

খুলনার শঙ্খ সিনেমা হলেও দর্শক নেই ‘পাঠানে’র। ম্যানেজার রেজাউল করিম বলেন, ‘যেমনটা ভেবেছিলাম তেমন না। খুব কম মানুষ দেখতে আসছেন। এভারেজ বলা যায়। তারপরও আমরা সন্তুষ্ট।’

সব মিলিয়ে প্রেক্ষাগৃহ–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সাধারণত প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের উপস্থিতি বেশি থাকে। কিন্তু এই দিনেও পাঠান সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের খরা চলে।

ঢাকার বাইরের চিত্র জানতে চাইলে সিনেমার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা অনন্য মামুন বলেন, মোটামুটি ঠিকঠাক আছে। খুব বেশি ভালো নয়, খুব বেশি খারাপও নয়।

২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি ঢাকার সিনেমা হলে সালমান খানের সিনেমা ‘ওয়ান্টেড’ মুক্তির পর হিন্দি সিনেমার প্রদর্শন বন্ধে কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথে নেমেছিলেন শিল্পী ও নির্মাতারা। সেই আন্দোলনের পর দেশের সিনেমা হলে আর কোনো হিন্দি ছবি মুক্তি পায়নি।

সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ এপ্রিল সাফটার আওতায় নতুন করে উপমহাদেশীয় ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। ‘পাঠান’-এর বিপরীতে ভারতের রপ্তানি করা হয়েছে ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শাকিব খানের সিনেমা ‘পাঙ্কু জামাই’।

সূত্র: প্রথম আলো, বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর


মন্তব্য করুন