![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
প্রথম ছবির প্রথম শো’তে সালমানকে দেখার স্মৃতি
নব্বই পরর্বতী সময়ে একঝাঁক নতুন মুখ সিনেমা হলের রূপালি পর্দাকে রঙিন আলোয় আলোকিত করে তোলেন। তারা দৃঢ প্রত্যয়ে রাঙিয়ে দেন কিশোর-যুবা থেকে মাঝ বয়সী সব দর্শকদের। আর সেই প্রত্যয়ের একজন সাক্ষী ছিলেন ইমন নামের একটি ছেলে, পর্দায় যার নাম উঠেছিল সালমান শাহ।
ওই দশক তো বটেই আমার ছবি দেখার শুরু আশির দশক থেকেই। প্রতি শুক্রবার দুটি কাজে খুবই পারদর্শী ছিলাম, যার একটি ছিল হলে নতুন নতুন ছবি দেখা ও পাশের সেলুনে খুব সকালে ইত্তেফাকের সিনেমার পাতা দেখা। যা ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাবা-মার কড়া শাসনও আটকাতে পারতো না, যে কোন এক ফাঁক ফোকরে ঠিকই বাসা থেকে বেরিয়ে যেতাম সিনেমা হলের সামনে। ব্যাপারটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, পাশের পাড়ার ভালো লাগার মেয়েটিকে এক নজর না দেখলেও চলবে কিন্তু সিনেমা মিস করা যাবে না। হা হা হা…
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2021/09/salman_shah_bmdb_image.jpg?resize=754%2C1024&ssl=1)
যাই হোক… তেমনি এক সময়ে পত্রিকার পাতায় জানতে পারলাম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আনন্দ মেলা সিনেমা তৎকালীন বোম্বের চারটি সুপারহিট ছবির কপিরাইট এনে রিমেক করবে— কেয়ামত সে কেয়ামত তক, দিল, সাজন ও সনম বেওয়াফা। যার সবকটিরই পরিচালনা করবেন সোহানুর রহমান সোহান সাহেব। সেই হিসেবে তারা প্রথমে ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ও ‘সনম বেওয়াফা’ ছবি দুটিকে নির্বাচন করলেন এবং নায়ক নির্বাচনে প্রথমে আমিন খানকে ঠিক করলেও পরর্বতীতে সালমান শাহ চূড়ান্ত হন।
অনেকেই জানেন না, ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ নয় বরং ‘সনম বেওয়াফা’ তারা প্রথমে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চুজি সালমান প্রথম থেকেই গোঁ ধরে ছিলেন ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ আগে করবেন। যুক্তি হিসেবে বললেন ‘ছবিটি আগে করলে তা বাম্পারহিট করবে’, হয়েছিলও তাই। সে দিনের সেই দূরদর্শী ভাবনায় সালমান প্রথম দিনেই সফল ছিলেন, যার পরেরটা ছিল ইতিহাস। ছবি নির্বাচনের তার দক্ষতা ছিল, তার চিন্তা-ভাবনা তাই বলে দেয়।
নবাগত সালমান-মৌসুমী জুটির সেই বিখ্যাত ছবি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেয়েছিল। আমি তখন রাজশাহী থেকে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে এসেছি, মফস্বল শহর তার উপর নতুন ছবি আসা নিয়ে ছিল শঙ্কা। হলোও তাই! দীর্ঘ্ প্রতিক্ষীত সেই ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ঠিকই মানিকগঞ্জের কোন হলে আসলো না, তবে ঢাকার খুব কাছে হওয়াতে তেমন আফসোসও হলো না। ঈদের দিন ঠিকই সকাল সকাল বেরিয়ে একেবারে হাজির ঢাকার আনন্দ সিনেমায়।
চারিদিকে মানুষ আর মানুষ! আমি ভাবতেও পারিনি এতটা দর্শক উপস্থিত হবে। ছবির দুই নতুন মুখ সালমান-মৌসুমীকে তারা বরণ করতে এসেছেন। দর্শকদের বাড়তি চাপ আর ব্ল্যাকারদের খপ্পরে পড়ে বহু কষ্টে বাড়তি পয়সা গুনে রিয়াল স্টলের একটি টিকিট কিনে নিলাম এবং অনুভব করলাম যেন রাজ্য জয় করলাম। পকেটে যে বাড়ি ফেরার ভাড়া নাই সেদিকে কোন খেয়ালই নাই!
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2016/09/salman-mousumi.jpg?resize=664%2C924&ssl=1)
বারোটার শো দেখতে এসেছি, কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হলেও হলের গেট খোলার খবর নেই। অবশেষে গেট খোলা হলো। নির্ধারিত আসনের অতিরিক্ত চাপে বসানো হলো ডেকোরেশনের চেয়ার। এদিকে আবার কিছু দর্শক দাঁড়িয়ে গেল আর এরই ফাঁকে পর্দায় পড়লো রঙিন আলো। সঙ্গে সঙ্গে পুরো হল মুখরিত হয়ে উঠলো দর্শকদের হাততালিতে।
ছবি শুরু হয়ে গেল আর এক সময় পর্দায় ভেসে আসলো দুটি সুন্দর মুখ, অনিদ্য সুন্দরী মৌসুমী আর বাংলা চলচ্চিত্রের রাজপুত্র সালমান শাহ্। আরেকবার পুরো হল করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠলো, কেউ শিষ বাজিয়ে কেউ চিৎকার দিয়ে উৎফুল্ল প্রকাশ করলো, যার যার মনের অনুভূতি দিয়ে তাদের বরণ করে নিলো। যার প্রভাব পাওয়া গেল ছবি শেষ হবার পর। প্রতিটি দর্শকের চোখে-মুখে আনন্দ ও তৃপ্তির ছাপ। আর তরুণ দর্শকদের মুখে সালমান-মৌসুমীদের প্রশংসার বাণী যেন বলে দিচ্ছে মনে ধরেছে তাদের।
বলতে দ্বিধা নেই, প্রথম ছবির প্রথম দিন থেকেই যেন একজন সালমান দর্শকদের মনে গেঁথে গিয়েছিলেন।
সালমানের সব ছবিই হলে বসে দেখেছি। সেই হিসেবে তার অভিনয়ের যে ভ্যারিয়েশন তা বেশ চোখে পড়েছে, নিজের অভিনয়ে নিজেই ভাঙতেন, নিজেকে সব সময়ই ভিন্নভাবে উপস্থাপনে চেষ্টা করতেন, তৈরি করেছিলেন নিজস্ব এক সুস্থ স্টাইল। অবাক করা বিষয় হলো তার স্টাইলগুলো কখনই ফালতু মনে হতো না। তখনকার তরুণদের ফ্যাশন আইকন মানেই ছিল সালমান। এটাও একটা অবাক করার বিষয়। তার কারনও আছে… বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তরুণরা অন্য দেশের তারকাদের ফ্যাশন ফলো করে। কিন্তূ সালমান তার নিজস্ব ধারা দিয়ে সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে এনেছিলেন তার নিত্য নতুন গেটআপ দিয়ে। আমার যদি ভুল না হয়, তাহলে সালমানই একমাত্র তারকা যিনি এই অনন্য কাজটি করতে পেরেছিলেন।
আজ সালমান নেই, তারপরও এখনও লাখো-কোটি ভক্ত তাকে মনে রেখেছে, ভালোবাসে ও সম্মান করে মনের অন্তস্থল থেকে।