
প্রথম সিজন থেকে কতটা এগিয়ে ‘২ষ’?
২ষ, পরিচালক: নুহাশ হুমায়ূন, চিত্রনাট্য: নূহাশ হুমায়ূন ও গুলতেকিন খান, অভিনয়: মোশাররফ করিম, আফজাল হোসেন, কাজী নওশাবা আহমেদ, চঞ্চল চৌধুরী, সুমাইয়া শিমু, জয়া আহসান, অ্যালেন শুভ্র, রিজভী রিজু, রেফাত হাসান সৈকত, আবদুল্লাহ আল সেন্টু, রাফায়াতুল্লাহ সোহান, টুনটুনি সোবহান, আদনান আদীব খান, সামিয়া অথৈ, অনিমেষ দাস, স্নিগ্ধা দেবী, আর্নিকা দেবী অর্থি, এরফান মৃধা শিবলু ও মাসউদুর রহমান প্রমুখ; প্লাটফর্ম: চরকি

পর্ব এক: ওয়াক্ত
নুহাশের হিউমার নিয়ে নতুন কিছু বলার নাই। এইটাও মনে হয় একবার বলছি, নুহাশ সাবকনটেক্সটে গল্প বলায় এই মুহূর্তে সেরা। অনেকে অনেক প্রতিভা নিয়ে আসে তবে সেটা পর্দা পর্যন্ত আনতে আনতে মাত্রা হারায়। নুহাশের ফিল্মমেকিং প্রসিজার, শট ডিভিশন কিংবা খেলো কিছু মেটাফোর নিয়ে অনেকে ঠাট্টাচ্ছলে কথা বলতেই পারে তবে সে সাবকনটেক্সট তুলে আনায় ‘জিনিয়াস’! ধরেন একটা ছেলে সিঙ্গারা খেতে খেতে দোকানির কাছে একটু সস চাচ্ছে। ঠিক সেই মুহূর্তে তার গায়ে ওপর থেকে এসে পড়লো সসের মত রক্ত। একটা ফোকাসে দুইটা কনটেক্সট ক্লিয়ার!
‘পেট কাটা ষ’ শুধু নুহাশ বা চরকির না, দেশের অন্যতম সেরা সিরিজ। এই সিজনের শুরুটাও খারাপ হলো না। স্পিরিচুয়ালিটি আর ন্যাচারাল পানিশমেন্টই প্রথম পর্ব ‘ওয়াক্ত’-র থিম। পাঁচ বন্ধু টাকা পেয়ে একটা পাপ করে ফেলে আর সেই পাপ ক্যালকুলেটিভলি তাদের তাড়া করে ফেরে৷ পাঁচজনই ভালো করেছে বন্ধুর রোলে তবে অ্যালেন শুভ্র আর সেন্টুর কথা আলাদা করে বলতেই হবে। ভালো করেছেন সাহানা রহমান সুমি, সবচেয়ে ভয় পাইছি উনার প্লেসমেন্টে। ক্যালকুলেশন মেলাতে গিয়ে অবশ্য দুই-এক জায়গায় গোঁজামিল ছিলো তবে ছাড় দিছি। দেখার জন্য রিকমেন্ড করবো।
রেটিং: ৭.৫/১০
পর্ব দুই: ভাগ্য ভালো
অজনপ্রিয় কথা হলেও বলতে হচ্ছে, দ্বিতীয় পর্ব আমার বেশ ভালো লেগেছে। সমস্যা একটাই, ‘হরর’ জনরা বলে চরকি গলা ফাটালেও নুহাশের ‘২ষ’ অনেক বেশি স্পিরিচুয়াল ড্রামা। ‘পেট কাটা ষ’তে চঞ্চল চৌধুরীর এপিসোডটা মনে থাকলে মোশাররফ করিম অভিনীত ‘ভাগ্য ভালো’ লিংক করা যায় সহজেই।
একজন হাত দেখা ফুটপাতে বসা জ্যোতিষীর গল্প। সে নিজের হাত দেখে না, মানা আছে। অন্যের হাত দেখে ভালোই তবে স্বভাবতই মানুষ হেসে উড়িয়ে দেয়। মায়ের কিডনি সমস্যা একসময় খুব ‘ডু অর ডাই’ সিচুয়েশনে আসলে জ্যোতিষী বাধ্য হয় নিজের হাত দেখতে।
মোশাররফ করিম বেশ ভালো। কিছু মুখস্থ এক্সপ্রেশন বাদ দিলে কিছু ফ্রেমে করিম দুর্দান্ত। বিশেষ করে, মায়ের সাথে তার ডায়লগ, হাত দেখার পর ফ্যাসিয়াল গেশ্চার ছিল দারুণ। টুনটুনি সোবহানকেও খুব ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে নুহাশ। বাকিরা অ্যাভারেজ। কালার প্যালেটটা চোখে লেগেছিলো। শুটিং প্লেসমেন্ট খুব একটা ভাল হয় নাই। অনেক সকালে পাবলিক গ্যাদারিং না নিয়ে সাজানো পাবলিকের শুট বোঝা গেছে। মূল ক্যারেক্টার ফোকাসে রেখে বাকিটা ব্লার করা সব জায়গায় বাড়াবাড়ি লেগেছে। তবে নুহাশ এখানেও সিস্টেম, ক্যাপিটালিজম নিয়ে আন্ডারটোনে কথা বলেছে, এনেছে ইবলিশের রেফারেন্স!
রেটিং: ৭/১০
পর্ব তিন: অন্তরা
নুহাশরে ছাড় দেয়ার কিছু নাই, সে আলাদা একটা স্টাইল অব মেকিং আয়ত্ত্ব করতেছে এইটা স্বীকৃতি দেয়াই যায়। খেয়াল করলে দেখবেন, আজকাল আর বাপের সাথে তারে জড়ায়া খুব একটা কথা হয় না। কারণ, হুমায়ূনের মেকিংয়ে অনেক আগেই নুহাশ গৌরবের সাথে ওভারটেইক করছে। আর এই কাজে গুলতেকিন খানের নামটা ভুইলেন না। ‘২ষ’তে রাইটার হিসেবে মাকে নুহাশ কেন রাখছে কিছুটা আন্দাজ করা যায়৷ এই সিজনের প্রতিটা পর্বে হিউম্যানিটি, ওইম্যানিজম কিংবা সারকামস্টেন্সিভ ফ্রেইম খুব ভালোভাবে আছে, আছে ডায়লগে ভালো কিছু মেটাফোর। তৃতীয় পর্বে আইসা নুহাশ খোলাখুলিভাবেই জানালো, প্রথম সিজনের ‘মিষ্টি কিছু’র সাথে সে একটা ভার্স ক্রিয়েট করতে চায়, তাতে কানেকশন হিসাবে আমি দ্বিতীয় পর্ব ‘ভাগ্য ভালো’কেও রাখবো।
এখানে অন্তরা নামে একজন গৃহিণীকে দেখানো হচ্ছে, প্রতিদিন লেখক স্বামীর সাথে তার রুটিনবাঁধা জীবন। লেখক স্বামীও প্রতিদিনকার চা খেয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে এক রহস্যময় দিনলিপি মেনে চলেন। হঠাৎ অন্তরার মনে হয়, সে তার অতীত মনে করতে পারছে না। তার স্বামীর আচরণও ঠিক মানুষের মত মনে হয় না। কী করবে সে!
নওশাবা আউটস্ট্যান্ডিং। আফজাল হোসেনের মতো লেজেন্ডারি অ্যাক্টরের সাথে পায়ে পা রেখে যেভাবে পারফর্ম করলেন, বেশ ভালো লাগলো। বিশেষ করে শেষ দৃশ্যগুলোতে আফজালকেও ছাপিয়ে গেছেন তিনি। শিশুশিল্পী, শিল্পী সরকার অপু সবাই মোটামুটি ভালোই। তবে অন্তরা নামভূমিকায় নওশাবার এই পারফরম্যান্স মনে থাকবে। ভালো ছিল বিজিএম, ডায়লগের ডেপথ, সেট এবং ফিনিশিং। তবে অতীতের সাথে কানেকশন করতে গিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা রাখা আছে যেইটা হেভি লাগতে পারে। গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স হিসাবে যে আছে, সে সবসময় এসব চরিত্র ভালো করে।
রেটিং: ৮/১০
পর্ব চার: বেসুরাৱ
‘বেসুরা’ ভালো লাগলো না। ওভারল আমি ‘২ষ’-কে ‘পেট কাটা ষ’ থেকে পিছিয়েই রাখব। তবে এই সিজনের ‘ভাগ্য ভালো’ ও ‘অন্তরা’ বেশ ভালো।
নুহাশ এই এপিসোডে ভিন্নতা এনেছে। গল্পটা পিচ করা হয়েছে পাহাড়ি একটা সংগীতময় অঞ্চলে যেখানকার মানুষও ছন্দ মিলিয়ে কথা বলে। সেখানে একটা বয়সের মধ্যে বাচ্চাদের গলায় আসতে হয় সুরের ধারা, অন্যথায় তাকে ভাবা হয় বেসুরা, অভিশপ্ত। তাকে দেয়া হয় শাস্তি। তেমনই এক বেসুরা মেয়েকে নিয়ে বিপদে পড়ে তার মা, মেয়েটি ভয়ে পালিয়ে বনে।
ছন্দ মিলানো ডায়লগ বেশ অভিনব তবে সিচুয়েশন ধরে খুব জমাতে পারেনি। তাই বেসুরা কিছু হয়ে থাকলে ডায়লগের এই ছন্দ মেলানোটাই হইছে। একটা সারপ্রাইজিং কাস্ট আছে তবে আমি খুব একটা সারপ্রাইজড হই নাই। বরং এই জায়গায় উনাকে মিসকাস্টেড লাগলো। ধর্মীয় আদিতত্ত্ব ও নারীত্বের আদিরূপকে খুব খোলাখুলিভাবেই আনা হলো, যেটা আগের এপিসোডে খুব আর্টিস্টিক ওয়েতে আসছে। সুমাইয়া শিমুর কামব্যাক সুখকর তবে তার ক্যারেক্টারে আহামরি কিছু নাই। সবচেয়ে ভালো করেছে শিশুশিল্পী। ইসলাম উদ্দিন পালাকারও ভালো করেছে। প্রীতমের সাথে তার মিউজিক সিঙ্ক ভালো ছিল। এরফান মৃধা শিবলু ও কসাইয়ের দলের মুখে আরোপিত ও বেমানান ডায়লগ দেয়া হয়েছে। তবে রাইটার গুলতেকিন খান পুরো সিরিজজুড়েই প্রশংসার দাবিদার।
রেটিং: ৪/১০