Select Page

বাংলা চলচ্চিত্রের সংগ্রাহক দোহা আর নেই

বাংলা চলচ্চিত্রের সংগ্রাহক দোহা আর নেই

বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য নিবেদিত প্রাণ সংগ্রাহক শামসুদ্দোহা মতিন আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

দোহা নামে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে খ্যাতি পেয়েছিলেন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা।

শামসুদ দোহা মতিন। ছবি: ফেসবুক

ঘনিষ্ট সূত্রে জানা যায়, করোনা আক্রান্ত হয়ে দোহা শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।

তবে তার মৃত্যু নিয়ে বিস্তারিত তথ্য মেলেনি।

দুর্বল ইন্টারনেট যোগাযোগের মাঝেই প্রায় এক দশক আগে ‘দোহা ফ্রম বাংলাদেশ’ নামের ইউটিউব চ্যানেলের মাঝে বাংলা চলচ্চিত্রের দুর্লভ অনেক গান ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।

পরবর্তীতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় হয়ে চলচ্চিত্রের অনেক তথ্য ও এলপি রেকর্ড থেকে নানান দুর্লভ অনেক সামগ্রী তুলে ধরেন। মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও অনলাইনে সক্রিয় ছিলেন। ঈদুল আজহা উপলক্ষে পরিচিতজনকে ইনবক্সে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি।

দোহার মৃত্যুর খবরে চলচ্চিত্র বিষয়ক সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে শোক ছড়িয়ে পড়ে।

চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখক ও সংগ্রাহক আরিফুল হাসান লেখেন, অনেকেই জানেন না ইউটিউবে আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের ষাট, সত্তর, আশি ও নব্বই দশকের জনপ্রিয় এবং হারিয়ে যাওয়া গানের ভান্ডার খুলেছিলেন দোহা নামের একজন। যিনি ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেই সাথে একজন গান পাগল এবং গান সংগ্রাহক মানুষ। উনার পুরো নাম সামসুদ দোহা মতিন, আর আমাদের কাছে ছিলেন প্রিয় একজন দোহা ভাই হয়ে।

আরও বলেন, ইউটিউব যখন আস্তে আস্তে সবার কাছে পরিচিত হচ্ছে তখন থেকেই তিনি সেখানে আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালী সব গান সংগ্রহ করার কাজে নেমে পড়েছিলেন, তিনি তার ‘doha from bangladesh’ নামের চ্যানেল থেকে নিয়মিত হারিয়ে যাওয়া সব গানগুলো আপলোড দিতে থাকলেন। সেটি আজ থেকে প্রায় বারো-তেরো বছর আগের কথা, যখন ছিলো না কোন ওয়াইফাই, শুধুমাত্র মোবাইলের সামান্য স্পীডের ইন্টারনেট দিয়ে একেকটি গান আপলোড করে গেছেন ঘন্টার পর ঘন্টা ধৈর্য্য ধরে। ভাবুন একবার কতটা গান পাগল মানূষ হলে এতটা ধৈর্য্য ধারণ করতে পারে একজন মানুষ।

আরেকজন লেখক আকবর খসরু লেখেন, আমি ষাট, সত্তর, আশি ও নব্বই দশকের সিনেমার দর্শক এবং আমি সোনালী দিনের ছায়াছবির গানের শ্রোতা পাগল শ্রোতা। ২০১৩ সালে আমি তখন কুয়েতে প্রবাসী। আমি তখন নোকিয়া ফোন ব্যবহার করতাম। আমি ইউটিউবে সোনালী দিনের ছায়াছবির গান দেখতাম, শোনতাম এবং ডাউনলোড করে মেমোরি কার্ডে সেইভ করে রাখতাম। সেইসব গানের মাঝে কিছু কিছু গানে ‘doha from bangladesh’ লেখাটি ভেসে উঠতো।

চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখক ফজলে এলাহী লেখেন, ২০১০-২০১৪ সাল পর্যন্ত আমি যখন ইউটিউবে নিয়মিত আমার চ্যানেলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের স্বর্ণালি সময়ের বিভিন্ন সিনেমা ও গান আপলোড করতাম তখন একটি “Doha Motin” নামের একটা চ্যানেল আমাকে বিস্মিত করেছিলো। সাদা-কালো যুগের অসংখ্য চলচ্চিত্রের যে গানগুলো আর কখনও দেখতে পাবো না বলে আক্ষেপ করতাম মতিন ভাইয়ের চ্যানেলে সেসব গানের ভিডিও ক্লিপসের ছড়াছড়ি। খুব জনপ্রিয় একটা চ্যানেল ছিলো যা পরবর্তীতে ইউটিউবের কপিরাইট বিধিমালার প্যাচে পড়ে বন্ধ হয়ে যায়। ইউটিউবে আমার চ্যানেলটি দ্রুত দেশ বিদেশী দর্শক শ্রোতাদের নজর কাড়ে, মতিন ভাইয়ের নজরেও পড়লো আমার চ্যানেলটি। আমরা একে অপরের ইউটিউব ফ্রেন্ড হলাম। 

আরও বলেন, ইউটিউব থেকে তা ফেসবুক পর্যন্ত বিস্তৃত লাভ করে। বাংলা চলচ্চিত্র ও গান নিয়ে অনেক কথা হতো মতিন ভাইয়ের সাথে। মাঝে মাঝে বিস্মিত হতাম যে একজন বৃদ্ধ বয়সী মানুষের কী পরিমাণ দেশের শিল্প ও সংস্কৃতি নিয়ে ভালোবাসা থাকলে দিনের পর দিন অনলাইনে তা আপলোড করার মতো ধৈর্য্য ধারণ করতে পারেন তা ভেবে। যে কাজটি করার কথা ছিলো সরকারের কিংবা শিল্প ও সংস্কৃতির সাথে সরাসরি যারা প্রভাব রাখেন তাদের সেই কাজটিই ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজের জায়গা থেকে মতিন ভাই করে গেছেন। এই মতিন ভাইয়ের কারণে ইউটিউবে, ফেসবুকে বর্তমান প্রজন্ম অনেক হারিয়ে যাওয়া চলচ্চিত্রের গান খুঁজে পেয়েছে। 


মন্তব্য করুন