Select Page

বাস্তবের নায়ক, সিনেমায়ও মুক্তিযোদ্ধা খসরু

বাস্তবের নায়ক, সিনেমায়ও মুক্তিযোদ্ধা খসরু

খসরু

অনেক বেশি জৌলুশ নিয়ে বাণিজ্যিক ছবির নায়ক হননি, হয়েছেন বাস্তবের বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়ে চলচ্চিত্রে তার প্রয়োগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র তারকা।

খসরু ছিলেন বাস্তবের নায়ক। পাকিস্তান আমলেই ছাত্রনেতা ছিলেন। আইয়ুব খানের অপশাসনের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রনেতা সব সময় সোচ্চার ছিলেন। পুরো নাম কামরুল খসরু।

খসরু মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সে অভিজ্ঞতাকেই তিনি চলচ্চিত্রে দেখিয়েছেন। অভিজ্ঞতা থেকে চলচ্চিত্রে রূপায়ণের জন্যই অভিনেতা মাসুদ পারভেজ সোহেল রানার সঙ্গে সহ-প্রযোজনা থেকে নির্মাণ করেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ওরা ১১ জন’। প্রথমে ছবিটি পরিচালনার জন্য ভেবে রেখেছিলেন জহির রায়হানকে কিন্তু জহির রায়হান তখন বড়ভাই শহীদুল্লাহ কায়সার-কে খুঁজতে গিয়ে নিজেও নিখোঁজ হন। পরে এর পরিচালনার দায়িত্ব আসে চাষী নজরুল ইসলামের হাতে।

নির্মিত হলো ‘ওরা ১১ জন’। ছবির প্রথম সিকোয়েন্সে দেশাত্মবোধক গান ‘ও আমার দেশের মাটি’তে দাড়িওয়ালা খসরুকে দেখা যায়। গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি দেখানো হয় গানটিতে। ‘আমায় একটি ক্ষুদিরাম দাও’ এ গানটিও অসাধারণ ছিল। ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের বৈঠকে জাগরণের গান ছিল এটি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অবদান দেখানো হয় ছবিতে। নূতন বন্দী শিবির থেকে বের হওয়ার পর খসরুর কোলে ঢলে পড়ে মারা যায় তখনই বেজে ওঠে কালজয়ী গান,’এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’।

খসরুর ‘সংগ্রাম’ (১৯৭৪) ছবিটিও ছিল চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায়। এ ছবিতে খসরু ছিলেন অন্যতম প্রধান চরিত্রে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্যালুট গ্রহণের একটি দৃশ্য আছে এ ছবিতে। এ দৃশ্যে বঙ্গবন্ধুর কাছে অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে যে টিমটি দেখা করেছিল খসরু ছিলেন সে দলে। বঙ্গবন্ধু রাজি হন অভিনয়ের জন্য। সেট সাজানোর পর কুচকাওয়াজের দৃশ্য শেষে বঙ্গবন্ধু স্যালুট গ্রহণ করেন সশস্ত্র বাহিনীর। খসরু কুচকাওয়াজের সিকোয়েন্সে ছিলেন।

খসরু একবার দৈনিক ইত্তেফাকের কার্যালয়ে এসেছিলেন। সেখানে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে তিনি বলেছিলেন, ‘শোনো, আমাদের সময়টাকে যদি বুঝতে চাও তাহলে তোমার বয়স হতে হবে ৬৫। আমার মতো হতে হবে তাহলে বুঝতে পারবে কী ছিল সেই দিনগুলো। সবকিছুই বাস্তব ছিল আমরা যখন কাজ করেছি।’ খসরুর এ কথাগুলোর তাৎপর্য গভীর বিশেষ করে সেই সব নির্মাতাদের জন্য যারা আজকাল মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র তৈরি করছে ইচ্ছেমতো, কোনো বাস্তবসম্মত বিষয় ছাড়াই।

খসরু বেঁচে থাকবেন মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রের তারকা হয়ে আর এ বেঁচে থাকার গর্বটা সবচেয়ে বেশি কারণ তিনি মুক্তিযোদ্ধা এবং চলচ্চিত্রে সে অভিজ্ঞতাকে দেখিয়েছেন। বিনম্র শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসা তাঁর জন্য।


Leave a reply