Select Page

বিউটি সার্কাস: অভিনয় যে সিনেমার মূল আকর্ষণ

বিউটি সার্কাস: অভিনয় যে সিনেমার মূল আকর্ষণ

স্পয়লার: এ চলচ্চিত্রের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গল্পের কিছু অংশ প্রকাশ করা হয়েছে। ‘বিউটি সার্কাস’ না দেখে থাকলে রিভিউটি পরিহার করতে পারেন। সিনেমাটি দেখে আপনিও আমাদের মতামত জানাতে পারেন। লিখতে পারেন রিভিউ।

বেশিরভাগ বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে একটি পূর্ণাঙ্গ গল্প সিনেমায় গতি আনে, অনেক সময় চমৎকার কিছু গানের জন্যে প্রেক্ষাগৃহ হাউস ফুল হয়ে যায়, আবার প্রচারণার কারণেও সিনেমায় গতি সঞ্চার হয়। মাহমুদ দিদারের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ‘বিউটি সার্কাস’ এমন একটি সিনেমা যার মূল আকর্ষণ তারকা শিল্পীদের অভিনয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

গল্পের মধ্যে তেমন নতুনত্ব নেই শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় চরিত্র বিউটির অসাধারণ পারফরম্যান্স ছাড়া। এক কথায় বলতে গেলে অভিনয়শিল্পীদের অভিনয় দক্ষতা দর্শকদের সিনেমার শেষ অব্দি আটকে রেখেছে।

বিউটি সার্কাসকে মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র লিখলেও ভুল হবে না। কারণ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রাজাকারের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন দ্য বেঙ্গল সার্কাসের মালিক। তারই কন্যা বিউটি বছরের পর বছর ধরে তার নিজ যোগ্যতায় সার্কাস দলটি টিকিয়ে রেখেছেন। জঙ্গিরা বহুভাবে বিউটিকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাবা হত্যার প্রতিশোধ নিতে সফল হয় সে।

গল্পটি খুবই সাদামাটা, আর দশটা যুদ্ধের গল্প বলা চলে। সেটাকে যথেষ্ট দীর্ঘ করা হয়েছে, তবে কোথাও গিয়ে আটকে যায়নি কারণ বিউটি চরিত্রে জয়া আহসান বিভিন্ন রূপে ফ্রেমে আসেন, দেখতে মোটেও বিরক্ত বা একঘেয়ে লাগেনি।

জয়া আহসানের অভিনয় দক্ষতা সম্পর্কে নতুন করে কিছু লেখার নেই আমার, এবার জানলাম তিনি দূর্দান্ত সব সার্কাসের স্টেপ দিতে জানেন; অনেক সময় মনে হয়েছে- এখনি বুঝি রশি ছিঁড়ে পড়ে যাবেন; কিন্তু তা হয়নি।

নাদের মোল্লা চরিত্রে গাজী রাকায়েতকে বহুদিন পর একটি নেতিবাচক চরিত্রে দেখলাম। হুজুর বেশে উনি যেভাবে উপস্থিত হয়েছেন পর্দায়, বোঝার উপায় ছিল না সামনে কী হতে যাচ্ছে। তার সাথে তাল মিলিয়ে সমানে সমান অভিনয় করেছেন শতাব্দীর ওয়াদুদ; ‘আমার কোন ধর্ম নাই, টাকাই আমার ধর্ম’ তার মুখে এই সংলাপ শুনে যে কেউ চেয়ারে নড়েচড়ে বসবে। কোন সংলাপে কতটা হাসতে হবে,শরীরের ভঙ্গিমা কী হবে তা তিনি দারুণ বোঝেন। কুদরত চরিত্রকে ভীষণ বিশ্বাসযোগ্য করেছেন এই অভিনেতা। বিগত সিনেমাগুলোতে যে অভিযোগ ছিল ‘বিউটি সার্কাস’ দেখার পর শতাব্দী ওয়াদুদের ওপর থেকে আপাতত তুলে নিলাম। 

উল্লেখ করবার মতো অভিনয় করেছেন প্রয়াত হুমায়ূন সাধু; তার জন্য দর্শকের মনে একটা নরম জায়গা তৈরি হয় শুরুতেই। ফেরদৌস দিয়েছেন প্রত্যাশার চাইতে বেশি, জমিদারের নাতি হিসেবে যতটা ইগো হার্ট করবার কথা, তাকে যেন বউটি সবটাই করতে সক্ষম হয়েছেন। অনবদ্য উপিস্থিতি ছিল তৌকীর আহমেদের, ভুলভাল ইংরেজি বলে দর্শক হাসিয়েছেন, তার সিরিয়াস কথা মুখায়বব আমার ভালো লেগেছে৷

অবশেষে রঙ্গলাল চরিত্রে এবিএম সুমন একেবারেই ভিন্ন রকম আমেজ ভিন্ন রকম উপস্থিতি যেন দূর গ্রামে কোন এক রাজ কুমার। খুবই ছুঁয়ে গেছে জয়া আর সুমনের ফ্রেম শেয়ার। গতানুগতিক নিয়মে চলা জীবনকে কিছু সময়ের জন্যে হলেও বুঝিয়ে দেওয়া- নারী শক্তিময়ী; চাইলেই নারীর পথকে ধর্মের দোহাই দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না।

‘বিউটি সার্কাস’ দেখতে দেখতে জানি না কেন ইরানে চলমান হিজাব বিরোধী আন্দোলনের কথা খুব মনে পড়ছে। নিয়ম গুলো কী বিচিত্র তাই না? সব নিয়ম যেন সৃষ্টিই হয়েছে নারীর চলার স্বাভাবিক পথকে অবদ্ধ করে রাখবার জন্যে আর তা প্র‍য়োগ করতে গিয়ে ধ্বংসের সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ। নিজেদের বানানো নিয়মে পৃথিবীর মানুষ আজ নিজেরাই পরাভূত।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

রোদেলা নীলা একজন স্বাধীনচেতা মানুষ, তার কবিতায়, তার প্রবন্ধে অথবা গল্পের প্রত্যেকটি শব্দের মধ্যে আছে আধুনিকতার ছোঁয়া এবং নিজের মুক্ত চিন্তাকে মেলে ধরবার আকাঙ্ক্ষা। কবিতা তার প্রিয় বিষয়ের মধ্যে অন্যতম একটি, এর বাইরেও তিনি নিয়মিত আর্টিকেল লেখেন দেশের এবং দেশের বাইরের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে। ঘুরতে পছন্দ করেন বলেই তার গল্পের ভাঁজে ভাঁজে আছে ভ্রমণ পিয়াসীদের জন্য অজানা অনেক তথ্য। বেতার বাংলা পত্রিকায় ছাপার অক্ষরে প্রথম প্রকশিত হয় তার লেখা গল্প- নীল শাড়ি। এরপর থেকে তার গল্প কবিতা প্রবন্ধ জায়গা করে নেয় দৈনিক জনকন্ঠ, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক কালের কন্ঠ,দৈনিক নয়া দিগন্ত, অনন্যা পাক্ষিক ম্যাগাজিন, মাসিক রোদসী, ত্রৈমাসিক পত্রিকা জয়তী, নিউ ইওর্কের দেশ পত্রিকা থেকে আরম্ভ করে বহু অনলাইন প্লাটফর্মে। এর বাইরেও বাংলা ব্লগ গুলোতে তার সারাক্ষণ পদচারণা থাকে । শব্দনিড় ব্লগ, সামহোয়্যারইন ব্লগ, বিডিনিউজ২৪ ব্লগ, মুভি ডাটা বেজ ব্লগে নিয়মিত লিখে আসছেন কবি এবং কথা সাহিত্যিক রোদেলা নীলা। শুধু বাংলাদেশে নয়, পাশের দেশ ভারতের কোলকাতাতেও তার অনেক ভক্ত পাঠক রয়েছে। ২৬শে ফেব্রুয়ারী ১৯৭৭ সালে ঢাকায় কবি’র জন্ম, বাবা মরহুম আব্দুল হামিদ ; পেশায় ছিলেন সরকারী কর্মকর্তা। তাদের আদি নিবাস টাঙ্গাইলে হলেও ঢাকাতেই লেখকের বেড়ে ওঠা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাশ করেছেন। মা মাজেদা বেগম সব সময় লেখালেখির বিরোধিতা করে আসলেও প্রকাশিত সব বই খুঁটিয়ে পড়েন এবং ভুল ধরে দেন । লেখকের ইচ্ছে আছে কিছু পয়সা কড়ি জমাতে পারলে জীবনের শেষ সময়টা বিশ্ব ঘুরে কাটাবেন। রোদেলা নীলা’র প্রকাশিত বই : কবিতা : ফাগুনঝরা রোদ্দুর(২০১০) ,ভাষাচিত্র প্রকাশনী পঞ্চপত্রের উপপাদ্য (২০১২) , এক রঙ্গা এক ঘুড়ি প্রকাশনী দ্বৈত কবিতার বই – নীলপদ্ম (২০১৫) ,যমুনা প্রকাশনী। নিমগ্ন গোধুলি ( ২০১৬) , অন্যধারা প্রকাশনী চায়ের কাপে অপেক্ষা (২০১৯) , বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ড একক গল্প গুচ্ছ : রোদ্দুরের গল্প (২০১৫ ), আলপনা প্রকাশনী চলতি পথের গপ্পো (২০১৬) , বিদ্যা প্রকাশ গল্পগুলো কাল্পনিক নয় ( ২০২২) , কারুবাক প্রকাশনী ভ্রমণ গল্প : পিয়াইন নদীর স্রোতে (২০১৬) , জয়তী প্রকাশনী মেঘ বালিকার দেশে (২০১৭) , মহাকাল প্রকাশনী ময়ামায়া থেকে কাশ্মীর(২০২৩),কারুবাক প্রকাশনী

মন্তব্য করুন