বোকা জহির রায়হানের এত অধপতন!
জহির রায়হান বাংলা সিনেমার ইতিহাসে বিরল এক নির্মাতা। নিজের কালে তিনি একটি প্রতিষ্ঠান আকারে আবির্ভূত হয়েছিলেন। একাধারে লেখক, পরিচালক ও প্রযোজক।
তার হাত ধরে একদল গুণী মানুষ একত্রিত হয়েছিলেন। জহির তাদের জন্য লিখেছেন, প্রযোজনা করেছেন। পরবর্তীতে জহিরের অন্তর্ধানের পর তারা বাংলা সিনেমাকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছিল।
হারিয়ে যাওয়া এ মানুষটির আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নির্মাণের বৈচিত্র্য। শিল্পপ্রধান ছবি যেমন বানিয়েছেন, তেমনি বাণিজ্যিক ছবিতেও সফল। পাকিস্তানের সিনেমা রঙিন হয়েছে তার ধরেই। এ রকম অনেক কিছুতেই তিনি প্রথম।
তবে তার এই পথ কখনো সহজ ছিল না। অন্তত তার বন্ধুরাই তার সফলতা-ব্যর্থতাকে দেখেছেন অন্যভাবে। যখন বাণিজ্যিকভাবে অসফল শিল্পপ্রধান ছবি নির্মাণ করেছেন, তখন তারা বোকা বলেছেন। আবার যখন বাণিজ্যিক সফল সফল ছবির নির্মাতা তকমা পেলেন তখনও নিন্দা শুনেছেন।
বিষয়টি নিয়ে জহির রায়হান এভাবে বলছিলেন—
আমার প্রথম তিনটে ছবি। কখনও আসেনি। সোনার কাজল। কাঁচের দেয়াল। ছবিগুলো এদেশে চলেনি।
চলেনি বলে আমার বন্ধুরা অনেক দুঃখ পেয়েছে। সহানুভূতির সঙ্গে বলেছে, ‘বোকা কোথাকার। কী হবে এসব ছবি বানিয়ে? বাদ দাও। তারচেয়ে লোকে যেমনটি চায়, তেমনটি বানাও। কিছু টাকা পয়সা রোজগার করো।’
তাই বানালাম।
বানালাম সঙ্গম, বাহানা, অবশেষে বেহুলা। ছবিগুলো ভালো চলেছে। লোকে ভিড় করে দেখেছে। দু’পয়সা রোজগারও হয়েছে। আর আমার বন্ধুরা অশেষ দুঃখ পেয়েছে তাতে। সম্মুখে না হোক, আড়ালে আফসোস জানিয়ে আক্ষেপ করেছে, ‘আহা, জহিরটার এত অধপতন হবে ভাবিনি।’
জহির রায়হান নিজের জীবন দিয়ে অনেক কিছু প্রমাণ করেছেন। তেমনি উপরের কথাগুলোও বাংলা সিনেমা নিয়ে আজো সত্য। ঢাকাই চলচ্চিত্র এমন দ্বিচারিতার কারণে এক পা এগোয় তো দুই পা পিছিয়ে যায়।