Select Page

ভেঙ্কটেশের আগমনে কার কী হিসেব

ভেঙ্কটেশের আগমনে কার কী হিসেব

দেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবেই বাংলাদেশে প্রবেশ করতে যাচ্ছে ভারতের শীর্ষ সিনেমা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস। তাদের চূড়ান্ত প্রস্তুতি সব সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন আনুষ্ঠানিক ঘোষণাই বাকি। এ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন ছেপেছে দীর্ঘ প্রতিবেদন। আলাউদ্দিন মজিদের লেখাটির শিরোনাম ‘ঢাকায় ভেঙ্কটেশ ফিল্মস : কার লাভ কার ক্ষতি?

প্রতিবেদনে জানানো হয়, নামেমাত্র বাংলাদেশি শিল্পীদের নিয়ে ছবি নির্মাণ করবে তারা। আর সেই ছবি বাংলাদেশে মুক্তি দেওয়া হবে। এরপর সাফটা চুক্তি মোতাবেক সেই ছবি বাংলাদেশি ছবি হিসেবে ভারতে যাবে। বিনিময়ে আরেকটি ভারতীয় ছবি মুক্তি পাবে বাংলাদেশে। হয়তো দেখা যাবে ভেঙ্কটেশেরই ভারতীয় ছবি এনে চালানো হবে এখানে। বিষয়টি অনেকটা কৈ-এর তেলে কৈ ভাজার মতো।

ইতোমধ্যে এর চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে তারা। শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশের শাকিব খানকে দুই বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ করেছেন তার। এর মধ্যে কলকাতার নির্মাতা রাজীব বিশ্বাস পরিচালিত নাম চূড়ান্ত না হওয়া একটি ছবির শুটিং মার্চের মাঝামাঝি শুরু হওয়ার কথা। এই ছবিতেই শাকিবের বিপরীতে কলকাতার কোয়েল মল্লিকের অভিনয় করার কথা শোনা যাচ্ছে। আর ছবিটি বাংলাদেশে মুক্তিসহ নানা বিষয় দেখাশোনার জন্য ঢাকার মতিঝিলে একটি অফিসও নিয়েছে ভেঙ্কটেশ ফিল্মস। অফিসের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভিএফএস ওয়ার্ল্ড স্টুডিও প্রাইভেট লিমিটেড’। আর এই অফিস পরিচালনা করবেন ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের নির্বাহী কর্মকর্তা ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রযোজক বিজয় খেমকা।

বিজয় খেমকা জানান, যৌথ আয়োজনে না হলেও, ছবিটি দুদেশের জন্যই নির্মাণ হবে। শিগগিরই ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তাসহ ছবির পরিচালক ঢাকায় আসবেন এবং এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা দেবেন।

এক সূত্রে জানিয়েছে, ভেঙ্কটেশের আগামী ছয়টি ছবিতে শাকিব খান চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। ছবিগুলো যৌথ প্রযোজনার নয়। এসব ছবিতে শাকিবের বিপরীতে কলকাতার নায়িকা, শিল্পী এবং কলাকুশলীরা কাজ করবেন।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্র পাড়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন সিনিয়র নির্মাতা বলছেন, ভেঙ্কটেশের  প্রযোজনায় এসব ছবি প্রথমে কলকাতায় প্রদর্শন হবে না। ভারতীয় চলচ্চিত্র এদিক দিয়ে দুভাবে লাভবান হবে। প্রথমত কলকাতায় এখন বাংলা ছবির ব্যবসা মন্দ। তাই বাংলাদেশে তাদের ব্যবসার বাজার তৈরি করছে। অন্যদিকে বিনিময় চুক্তির আওতায় একই ছবি পরে নামে মাত্র কলকাতায় নিয়ে তার বিপরীতে আরেকটি ভারতীয় ছবি এ দেশে রপ্তানির মাধ্যমে একঢিলে দুই পাখি শিকার করা হবে। এতে বাংলাদেশের টাকা অবলীলায় ভারতে চলে যাবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প কতটা লাভবান হবে তা এখন প্রশ্নের মুখে। তাদের কথায় বর্তমানে যৌথ প্রযোজনার নামে নির্মিত ছবিগুলোর কারণে এ দেশের শিল্পী-কলাকুশলীদের কাজ কমে গেছে। এই অবস্থায় ভেঙ্কটেশ যদি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করে আর ভারতীয় শিল্পী-কলাকুশলীদের অগ্রাধিকার দেয় তাহলে অচিরেই দেশের শিল্পী-কলাকুশলীরা একেবারে বেকার হয়ে যাবে। বিষয়টিকে ঢালিউডের জন্য চরম অশনি সংকেত বলে মনে করছেন সিনেবোদ্ধারা।

চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন বলেন, শুনেছি বিনিয়োগ বোর্ড থেকে অনুমোদন নিয়ে ভেঙ্কটেশ ফিল্মস এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বিনিয়োগ বোর্ডে এ ধরনের নিয়মনীতিও নাকি আছে। তাই যদি হয় তাহলে আমার দাবি হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে আমাদের শিল্পী কলাকুশলী নিয়ে ছবি নির্মাণ করতে হবে। আমার জানা মতে, তারা লোকাল প্রোডাকশন করবে এবং তাদের মেশিন দিয়ে এখানে ছবি চালাবে। যদি এভাবে কাজ হয় তাহলে উদ্বেগের কিছু দেখি না। কারণ দীর্ঘদিন ধরে আমাদের চলচ্চিত্র নির্মাতারা একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। ওই প্রতিষ্ঠানটি তাদের ছবি দিয়ে সব সিনেমাহল দখল করে রাখে। তাদের মাধ্যমে না হলে কেউ ছবি মুক্তি দিতে পারে না। তা ছাড়া মেশিন ভাড়ার নামে অযৌক্তিকভাবে মনোপলি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ক্ষেত্রে কাউন্টার হিসেবে হলেও অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এসে যায় তা হলে আশঙ্কার কিছু নেই। তবে ভেঙ্কটেশের ছবি মুক্তির পর যদি দেখা যায় তারা এ দেশের চলচ্চিত্রের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড করছে তাহলে অবশ্যই তখন তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।

চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির নেতা খোরশেদ আলম খসরু বলেন, আমি সবসময় ভারতীয় ছবির বিপক্ষে। শুনেছি ভেঙ্কটেশ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বিনিয়োগ করবে। তাদের ব্যবসার পলিসি না দেখে এখনই কিছু বলতে পারছি না। আমাদের চলচ্চিত্রে কোনো প্রকার ক্ষতি হয় এমন কিছু কখনো মেনে নেওয়া হবে না।

চলচ্চিত্র প্রযোজক ও মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখারউদ্দিন নওশাদ বলেন, আমাদের নির্মাতারা এখন পর্যাপ্ত ছবি দিতে পারে না। যা নির্মাণ করে তার বেশির ভাগই মানের অভাবে দর্শক দেখে না। ফলে বছরের পর বছর বিশাল অঙ্কের লোকসান গুনে এখন আমরা অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছি। সেক্ষেত্রে ভেঙ্কটেশের উদ্যোগকে আমি পজিটিভভাবেই দেখছি।

কথা হয় শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিষয়টিকে আমি পজিটিভভাবেই দেখছি। কারণ উন্মুক্ত বিশ্বায়নের যুগে নিজের ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে বসে থাকলে নিজেরাই অন্ধকারে থেকে যাব। যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণের মাধ্যমে আমাদের ছবি এখন সারা বিশ্বে মুক্তি পাচ্ছে ও প্রশংসিত হচ্ছে। ভেঙ্কটেশ বর্তমানে যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে আমাদের চলচ্চিত্র বিশ্বায়নের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। কারণ প্রতিষ্ঠানটি তাদের নির্মিত ছবি শুধু বাংলাদেশ আর ভারতে নয়, সারা বিশ্বে মুক্তি দেবে। আমি অতীতে কোনো অযৌক্তিক কাজ মেনে নেইনি। আন্দোলনেও নেমেছি। বর্তমানে যদি মনে হয় কারও কোনো কাজ আমাদের দেশ এবং চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য ক্ষতিকর বা স্বার্থবিরোধী তাহলে সবাইকে নিয়ে অবশ্যই তা রুখে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। ’


মন্তব্য করুন