Select Page

মকসুদ জামিল মিন্টু : আধুনিক বাংলা গানের কারিগরদের যোগ্য উত্তরসূরী

মকসুদ জামিল মিন্টু : আধুনিক বাংলা গানের কারিগরদের যোগ্য উত্তরসূরী

ছবির মানুষটিকে হয়তো দেখে অনেকেই চিনতে পারছেন না কিন্তু নাম শুনলে সবাই ঠিকই চিনবেন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ আদর্শ ধারন করা যে কজন গুনী মানুষ আছে তাদের মধ্য উনি অন্যতম যিনি সবসময় থেকেছেন প্রচারের বাহিরে।

আলম খান, আলাউদ্দিন আলী, খন্দকার নুরুল আলম , সত্য সাহা, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, শেখ সাদী খান, আবু তাহেরের পর বাংলা গানে যাকে তাদের যোগ্য উত্তরসুরী মনে হয় তিনি এই মকসুদ জামিল মিন্টু। নামটি কোথায় যেন বারবার দেখেছি বা শুনেছি- এবার নিশ্চয়ই অনেকেই ভাবছেন তাই না?

হ্যাঁ, মকসুদ জামিল মিন্টু নামটি নিয়মিত চোখে পড়তো ৯০ দশকে হুমায়ুন আহমেদের জনপ্রিয় সব নাটকে। এরপর হুমায়ুন আহমেদের প্রায় সব সিনেমায় তিনি কাজ করেছেন।

একুশে পদক প্রাপ্ত সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও নজরুল গবেষক মাহফুজ উল্লাহর সন্তান মকসুদ জামিল মিন্টু বাবার মতো সাংবাদিক না হয়ে সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন। ১৯৭৮ সালে বিটিভিতে গীটার বাদক হিসেবে নিয়মিত বাজাতে থাকেন।এরপর বিটিভিতে একজন কিবোর্ড বাদক হিসেবেও বহুদিন বাজিয়েছেন নিয়মিত। বাজাতে পারেন বেহালাও।

১৯৮২ সালে এন্ড্রু কিশোরের জন্য একটি অডিও ক্যাসেটের সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন কিন্তু এলবামটি প্রকাশ পায় ১৯৯২ সালের দিকে। তার আগে সারগাম থেকে প্রকাশিত শেখ ইশতিয়াকের ‘নীলাঞ্জনা’ অ্যালবামের সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে শ্রোতাদের মন জয় করে নেন। সেই এ্যালবামের ‘নীলাঞ্জনা’, ‘নন্দিতা’, ‘আমার মনের ফুলদানীতে’, ‘ভাগ্যর ডাক্তার’ গানগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

এরপর সারগাম থেকে প্রকাশিত শুভ্র দেবের একক অ্যালবাম ‘কোন এক সন্ধ্যায়’ অ্যালবামেও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে সফল হয়েছিলেন। একই প্রতিষ্ঠান থেকে বেবী নাজনীনের প্রথম একক অ্যালবামের সঙ্গীত পরিচালক তিনি- যে অ্যালবামেই বেবী নাজনীন তারকা খ্যাতি পান। বেবী নাজনীনের সেই অ্যালবামের গানগুলো শ্রোতাদের মুখে মুখে ফিরে বিশেষ করে ‘এলোমেলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ির আঁচল’ গানটি ছিলো সুপারহিট অথচ মকসুদ জামিল মিন্টু থেকে যান প্রচারের বাহিরে।

সেলিম চৌধুরীকে দিয়ে ‘হাছন রাজার গান’ অ্যালবামেও সফল ভাবে সঙ্গীত পরিচালনা করেন যে অ্যালবামটিও সফল একটি অ্যালবাম হয়। এভাবে টুকটাক কাজ করতে করতে ১৯৮৮ সালে বিটিভিতে আল মনসুরের ‘যেখানে দেখিবে ছাই’ নাটকের আবহ সঙ্গীতের কাজ করেন কিন্তু হুমায়ুন আহমেদের তুমুল জনপ্রিয় ‘কোথাও কেউ নাটকে’ আবহ সঙ্গীত পরিচালনা করে আবারও সবার নজর কাড়েন। হুমায়ুন আহমেদের সাথে সেটাই ছিলো মিন্টুর প্রথম কাজ। এরপর থেকে হুমায়ুন আহমেদ এর সব নাটকে তিনিই ছিলেন আবহ সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে। হুমায়ুন আহমেদ মিন্টুকে চিনতে এতটুকুও ভুল করেননি।

১৯৯৩-৯৪ সালে মতিন রহমানের ‘আগুন জ্বলে’ সিনেমায় সর্বপ্রথম পুর্নাংগ কোন চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এরপর আর কোন সিনেমায় কাজ না করলেও বিটিভিতে হুমায়ুন আহমেদের নাটক ও ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে নিয়মিত কাজ করেন।

কথা প্রসঙ্গে একদিন হুমায়ুন আহমেদ মকসুদ জামিল মিন্টুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘মিন্টু, তুমি কী কী পুরস্কার পেয়েছো গানের জন্য?’ জবাবে মিন্টু বললেন তিনি কখনো কোন পুরস্কার পাননি, জাতীয় পুরস্কারও নয়- যা শুনে হুমায়ুন আহমেদ খুবই বিস্মিত হয়ে বলেছিলেন ‘বলো কি! তোমার মতো ব্যক্তি কোন পুরস্কার পায়নি এটা তো সঙ্গীত অঙ্গনের ব্যর্থতা, আমাদের ব্যর্থতা!’

১৯৯৯ সালে হুমায়ুন আহমেদ যখন আবার চলচ্চিত্র পরিচালনায় এলেন তখন ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমার সবগুলো গান ও সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব দেন মকসুদ জামিল মিন্টুকে আর এই সিনেমার জন্যই মিন্টু সর্বপ্রথম জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন। এরপর হুমায়ুন আহমেদের ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘আমার আছে জল’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনার কাজ করেন।

দারুণ মেলোডিয়াস সুরের সুরকার মকসুদ জামিল মিন্টুর সুর করা হুমায়ুন আহমেদের নাটকের একাধিক জনপ্রিয় গান আছে যার মধ্ – প্যাকেজ সংবাদ নাটকের ‘মারো চিকা মারো, চিকা মারো রে’, সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড নাটকে ‘যাই যাই যাই সমুদ্র দেখতে যাই’ গানগুলো অন্যতম ।

মকসুদ জামিল মিন্টুর জনপ্রিয় গানগুলোর লিংক

১. নীলাঞ্জনা-শেখ ইশতিয়াক

২. আমার মনের ফুলদানীতে – শেখ ইশতিয়াক

৩. নন্দিতা তোমার কথা –  শেখ ইশতিয়াক

৪. ভুল করে যদি ডাকো কোনদিন – শেখ ইশতিয়াক

৫. জোছনা রাতে মনটা আমার – শেখ ইশতিয়াক
https://app.box.com/s/30gzep0x5lqcbeplpfq8
৬. এলোমেলো বাতাসে – বেবী নাজনীন

৭. পড়েছি লাল শাড়ী – বেবী নাজনীন

৮. একটা ছিলো সোনার কন্যা – সুবীর নন্দী

৯. ও আমার উড়াল পঙ্খীরে – সুবির নন্দী

১০. মাথায় পড়েছি সাদা ক্যাপ – আগুন

১১. বর্ষার প্রথম দিনে – সাবিনা ইয়াসমীন

১২. চাঁদনী পসরে কে – সেলিম চৌধুরী

 


মন্তব্য করুন