![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
মোশাররফ করিমের ‘চোখ নামিয়ে ফেলার মুহূর্ত’ ভীষণ আলাদা
বাংলাদেশে আমার সবচেয়ে পছন্দের অভিনেতা মোশাররফ করিম। তার প্রথম দিকের কাজ ‘ক্যারাম’ আমি এখনও দেখি। বিশেষ করে সেই সংলাপটা— ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো একটি গতিশীল বিজ্ঞান। এর জনক এরিস্টটল। যদিও রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কে বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের মতভেদ আছে। কেউ কেউ বলতে চেয়েছেন এটা সমাজবিজ্ঞানের একটা অংশ। আবার কেউ কেউ বলতে চেয়েছেন— না, এটা সমাজবিজ্ঞানের অংশ না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কাজ হচ্ছে এর গতি, প্রকৃতি, বিধি-নিষেধ, ধর্ম, পররাষ্ট্রনীতি …।’
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/08/mosarraf_karim_bmdb_image.jpg?resize=856%2C392&ssl=1)
আমি মনে করি না, টেলিভিশনে এরচেয়ে বেশি রোমান্টিক কোনও সংলাপ আর কোনও অভিনেতা এখন পর্যন্ত বলেছেন। অবশ্য তিনি যে সময় টেলিভিশনে নিয়মিত হয়েছেন, তখন দেশে স্যাটেলাইট চ্যানেলের রমরমা বাজার। এই সময় তারকাখ্যাতি পাওয়ার গুরুত্ব অনেক।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বুঝতে পারি, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন একটা চ্যানেল থাকার কারণে তারকাখ্যাতি পাওয়া বেশ সহজ ছিল। যেহেতু পর্দায় একবার মুখ দেখালেই দেশের মানুষ চিনে ফেলত। তাই বলে আগের প্রজন্মের অভিনেতাদের প্রতিভা কম তা নয়। কিন্তু দুই ডজনের বেশি চ্যানেল থাকলে তখনকার অনেকেই বর্তমান সময়ে তারকাখ্যাতি পেতেন না। মোশাররফ করিম ঠিক এই জায়গায় অনন্য।
রিমোট হাতে আসার পর বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে দর্শকরা চ্যানেল থেকে চ্যানেলে ছুটে বেড়াচ্ছেন। পলাতক দর্শকদের বড় আশ্রয় হয়ে উঠেছে ইউটিউব, সোশ্যাল মিডিয়া। আর ঠিক এই সময় একের পর স্মরণীয় কাজ করেছেন মোশাররফ করিম। একইসঙ্গে নাম লিখিয়েছেন সিনেমায়, ওটিটিতে।
অভিনেতা মোশাররফ করিম কতটা ক্ষমতাবান ও ধারাবাহিক তা জানেন সবাই। কিন্তু তিনি কতটা সহজাত তা দেখেছিলাম ‘হাউজফুল’-এ। গল্পে বোনের সংসারে থাকা ইফতি ঘর ছাড়ার উদ্যোগ নেন। উদ্দেশ্য একটাই, বোন-ভাগনিরা তাকে থাকার জন্য জোর করছে কিনা দেখা। ভালোবাসার পরীক্ষা নেওয়া ইফতি একপর্যায়ে সবার ঘরে গিয়ে বিদায় নিতে শুরু করেন। আর তার মুখে লেগে থাকে লাকী আখন্দের সেই বিখ্যাত গান— আমায় ডেকো না, ফেরানো যাবে না …।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2018/09/mosarraf-karim.jpg?resize=867%2C496&ssl=1)
এই দৃশ্যটা গান ছাড়াও হতো। কিন্তু এভাবেই তিনি দর্শকের সঙ্গে কানেক্ট করেন। ভরসা দেন, তিনি ঘর ছেড়ে যাচ্ছেন না। সবার পরীক্ষা নিচ্ছেন। এর সঙ্গে গান যুক্ত করে দর্শকের ঠোঁঠের ফাঁকে তৈরি করেন মিষ্টি হাসি।
আবার পলিটিক্যাল সিরিয়াল ‘৪২০’-তে যখন স্ত্রীর কাছে মন্টু’র চরিত্রটির বুজরুকি ধরা পড়ে যায়, তার গালে স্যান্ডেল দিয়ে মারা হয়— কেউ কি ভেবে দেখেছেন বাংলাদেশের কজন পুরুষ অভিনেতা নারীর হাতে জুতাপেটা খাওয়ার দৃশ্যে এভাবে রাজি হবেন? অথচ পুরুষত্বে চড় মারা ওই দৃশ্য মোশাররফ করিম অনায়সেই করতে পারেন।
আমি প্রায় দুই দশক ধরে মোশাররফ করিমের অভিনয় দেখছি। তাই জোর দিয়ে বলতে পারি, অভিনেতা হিসেবে একটা জায়গায় তিনি ভীষণ আলাদা। আর সেটা হলো, চোখ নামিয়ে ফেলার মুহূর্তে। ধরা যাক, এমন কোনও প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে যেখানে চরিত্র চোখে চোখ রাখতে পারছে না। এড়িয়ে যেতে চাইছে। ঠিক এখানে মোশাররফ করিম যা করতে পারেন, তা খুব কম অভিনেতার ক্ষমতা আছে করার।
তিনি অবশ্য এরকম আরও অনেককিছুই পারেন। সে সব আলোচনা অন্যদিন হবে। আজ যেহেতু তার জন্মদিন; আমি বব মার্লের মতো বলতে চাই— ওহ মায়েস্ত্রো, ইজ দিজ লাভ, ইজ দিজ লাভ, ইজ দিজ লাভ— দ্যাট আই অ্যাম ফিলিং?