![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
যে সব কারণে দেখতে পারেন ‘মহানগর’
সত্যি বলতে, আমি আশফাক নিপুণের ভক্ত হই অনেক পরে। ‘দ্বন্দ্ব সমাস’ (২০১৭) নাটক দেখার পর। বার বার মনে হচ্ছিল, এরকম সাহসী নাট্যকার, নির্মাতাই তো আমাদের প্রয়োজন। এরপর ফেরার পথ নেই, সোনালী ডানার চিল, মিস শিউলী, এই শহরে, আগন্তুক, অযান্ত্রিক, ভিকটিম, ইতি মা, মুখ ও মুখোশের গল্প, কষ্টনীড় দেখে মুগ্ধতা বেড়ে যায় দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ, তিনগুণ থেকে শতগুণ।
প্রতিটি কাজ দেখার পর মনে হয়, এই কাজটিই যেন সেরা। এবারো তাই হলো।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2021/06/mahanagar_bmdb_image.jpg?resize=750%2C422&ssl=1)
‘মহানগর’ দেখলাম হইচই থেকে। শেষ কবে বাংলাদেশের কোনো নির্মাতার কাজ দেখে এতটা মুগ্ধ হয়েছি, মনে পড়ছে না। কলকাতার এক রিভিউয়ার লিখেছেন, যেখানে আমাদের (কলকাতার) নির্মাতারা পড়ে আছেন বৌদি-দিদিদের রসালো গল্প নিয়ে, সেখানে বাংলাদেশের পরিচালকরা একের পর এক বোমা ফাটাচ্ছেন।
পশ্চিমবঙ্গের আরেক রিভিউয়ার লিখেছেন, হিন্দি ‘ফ্যামিলি ম্যান টু’ থেকে যতটা বোর হয়েছি, ততটা মুগ্ধ হয়েছি বাংলাদেশের ‘মহানগর’ দেখে। এই মুগ্ধতার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই।
’মহানগর’ নিয়ে রিভিউ করতে চাই না। শুধু যারা এখনো ‘মহানগর’ দেখেননি, তাদের বলবো, সময় বের করে হইচই থেকে এই ওয়েব সিরিজের ৮টি পর্ব দেখার জন্য। কারণ—
• ওয়েব সিরিজে যা হওয়া উচিত; প্রতিটি চরিত্র আলাদা গুরুত্ব পাবে। ‘মহানগর’-এ তাই হয়েছে। এখানে গল্পই ’হিরো’। এখানে প্রায় প্রতিটি চরিত্রই রক্ত-মাংসে গড়া ধূসর রঙের মানুষ।
• এমন সাহসী কনসেপ্ট, সংলাপ বাংলা ওয়েব সিরিজে আমি অন্তত সাম্প্রতিককালে দেখিনি।
• ওয়েব সিরিজ মানেই যে দ্রুত গতিতে থ্রিলার/ সেনসেশনালাইজ একটা গল্প বলা, তা নয়। ‘মহানগর’ ধীর গতিতে মনের মধ্যে জেঁকে বসবে। ভাবতে বাধ্য করবে।
• মিউজিক নিয়ে বাড়াবাড়ি নেই। কিন্তু ‘মহানগর’ দেখার দুদিন পরও বিজিএম কানে বেজে চলেছে অবিরাম।
• সম্পাদনা, রং বিন্যাস, সাউন্ড, চিত্রগ্রহণ— সবকিছু মিলিয়ে ’মহানগর’ লুফে নেয়ার মতো একটা প্যাকেজ।
• যারা ওয়েব সিরিজে অভিনয়শিল্পীদের অভিনয় যুদ্ধ দেখতে চান, তাদের জন্য ‘মহানগর’ দারুণ একটা ট্রিট। মোশাররফ করিম কিংবদন্তী কি নন-কিংবদন্তী, সে বিতর্ক করতে যারা ব্যস্ত থাকতে চায়, তারা ব্যস্ত থাকুক। কিন্তু মাঝখান দিয়ে তিনি যে নিজের সেরা একটি কাজ দেখিয়ে ’দ্য মোশাররফ করিম’কে ভুলিয়ে শেষ পর্যন্ত ওসি হারুন হয়ে ছিলেন, এই কৃতিত্ব যেমন নির্মাতার, ঠিক তেমনি মোশাররফ করিমেরও।
শ্যামল মাওলাকে স্ক্রিনে দেখতে আমার সবসময়ই ভালো লাগে। ‘মাইনকার চিপায়’ বা ‘কষ্ট নীড়’ দেখার পর ভালো লাগার পাল্লাটা আরেকটু পোক্ত হয়েছে। ’মহানগর’ দেখার পর বলতে দ্বিধা নেই, শ্যামল তার ক্যারিয়ারের সেরা সময়টুকু কাটাচ্ছেন এবং প্রতিটি চরিত্রে নিজের সেরাটুকু মেলে দেয়ার চেষ্টা করছেন।
জাকিয়া বারী মম স্ক্রিনে যতটুকু ছিলেন, বিশ্বাসযোগ্য ছিলেন। ভীষণ শক্তিশালী ছিলেন। এক বিন্দু হাসির রেখা ছিল না পুরো সিরিজে, অথচ কী পরিশীলিত, কী সুন্দর! এই চরিত্রে একজন নারীকে এবং সঠিক অভিনয়শিল্পীকে নির্বাচন করার জন্য পরিচালক নিপুণ বাড়তি হাততালি পাবেন।
খায়রুল বাশার এ প্রজন্মের অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল। যে কোনো আলোচনায় আমি খায়রুল বাশারের নামটি প্রায়ই নেই। শুরু থেকেই মনে হয়েছে, লম্বা রেসের ঘোড়া খায়রুল। ধীরে ধীরে সেটিই প্রমাণ করছেন তিনি। ‘মহানগর’ সর্বশেষ উদাহরণ।
মোস্তাফিজুর নূর ইমরানের নামটি এখনো অনেকেরই অজানা। অথচ দিনের পর দিন প্রতিটি কাজে কী অবিশ্বাস্য অভিনয় করে যাচ্ছেন তিনি, না দেখলে বোঝা যাবে না। সর্বশেষ ’আকাশ ভরা তারা’ বা ‘আলফা’ চলচ্চিত্রে বিস্মিত হয়েছিলাম তার অভিনয় দেখে। এবার ‘মহানগর’ সিরিজে তিনি আবারো দেখিয়ে দিলেন, যে কোনো চরিত্রে তিনি আলো ছড়াতে পারেন।
দম বন্ধ অস্বস্তিকর গল্পের মাঝে নাসিরউদ্দিন খান এই সিরিজের breathing space. তার অভিনয় যে কোনো শ্রেণীর/ মেজাজের দর্শককেই আনন্দ দেবে।
শাহেদ আলী ইদানিং প্রায় সব বড় কাজের সাথেই থাকেন। তবে সব কাজে শাহেদ আলীকে ভুলিয়ে দেয়ার সুযোগ পান না। ‘মহানগর’-এ পেয়েছেন এবং শতভাগ ব্যবহার করেছেন। জীবন রায়কে আগে কখনো চিনতাম না, আমার ব্যর্থতা। এই সিরিজে চিনেছি, মুগ্ধ হয়েছি। একইভাবে বিশ্বাসযোগ্য অভিনয় করে মুগ্ধ করেছেন লুৎফর রহমান জর্জ থেকে নিশাত প্রিয়ম, নওশাবা, চমক-প্রত্যেকেই। নিশাত প্রিয়ম, চমকের খুব একটা কাজ দেখিনি আগে। তবে ’মহানগর’-এ নিজেদের চরিত্রে তারা এতটা বিশ্বাসযোগ্য ছিলেন, দুজনেরই পরবর্তী কাজ দেখার অপেক্ষায় আমি।
এক রাতের গল্প দিয়ে যে ৮ পর্ব’র জমজমাট ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করা যায়, ’মহানগর’-এর মাধ্যমে আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখলাম। বেশিরভাগ অভিনয়শিল্পীই একটি মাত্র কস্টিউম পরে পুরো ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছেন। অথচ গল্পের উত্তেজনায় কোনো কিছুই একঘেয়ে মনে হয়নি। ধন্যবাদ হইচই। ধন্যবাদ লেখক, পরিচালক আশফাক নিপুণ।