Select Page

রহস্যে ঘেরা রোমান্সে ভরা – মন জানেনা মনের ঠিকানা

রহস্যে ঘেরা রোমান্সে ভরা – মন জানেনা মনের ঠিকানা

pori-moni-sirin-shila in mon jane na moner thikana
সিনেমার রিভিউ লেখার সময় স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে দুইটি। তার একটা – বাংলা ছবির পোস্টার বা প্রমো দেখে কস্মিতকালেও বুঝে উঠতে পারলাম না আসলে ছবিটা কোন বিষয়ের উপর। অন্যটি হচ্ছে- ছবির নামকরণ; কাহিনীর সাথে নামের শিরোনাম যে সমন্বয় রাখা খুব দরকার সেটা পরিচালকরা কেন বোঝেন না কে জানে। যাই হোক, মন জানে না মনের ঠিকানা যে একটি তরতাজা রহস্য গল্প তা বুঝলাম ছবি আরম্ভ হবার ঠিক দশ মিনিটের মাথায়। একদম অন্যরকম একটি গল্প নিয়ে কাহিনীর শুরু, যমোজ দুই বোন যাদের শরীর কোমরের সাথে লাগানো। যে ভাবেই হোক তাদের জাদরেল মামা (শহীদুল আলম সাচ্চু) খুন হয়ে যান। আর এই খুনের রহস্য একাই উদ্ধার করেন ব্যারিস্টার শিরীন (মৌসুমী)।

ছবির শুরু থেকে শেষ অব্দি কিন্তু একটি নারী চরিত্রকেই পরিচালক এপিঠ-ওপিঠ করে চালিয়ে গেছেন। মৌসুমী একাধারে ব্যারিস্টার, পাশাপাশি সি আই ডি-র মতোন তথ্য উদ্ঘাটনে একদম স্পটে গিয়ে মারামারি করছেন, ছবির একপর্যায়েতো রীতিমতোন বার ড্যান্সার হয়ে নাচানাচিও করে ফেললেন। কিন্তু কেন? একজন তুখোড় ব্যারিস্টার কি কেবল মেধা দিয়ে কোন খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনা? বারে নাচার জন্যতো একটা নাচনেওয়ালী চরিত্র অনায়াসেই আনা যেত। ইমপ্রেসের আর্থিক ভাবে কোন সমস্যা আছে বলেতো আমার জানা নেই। তবে এই দেশে নারী চরিত্রকে যে কোন ভাবেই কাপড় উন্মোচন করানোর জন্য পরিচালক সদা প্রস্তুত। বিষয়টা এমন যেন পাবলিক পয়সা খরচ করে সিনেমা হলে যায় নারীর নগ্ন নৃত্য দেখতে। মৌসুমী তার তুখোড় অভিনয় গুনেই কেবল এই কঠিন চরিত্রটি উতড়ে যেতে পেরেছেন। তা না হলে কথা নেই বার্তা নেই হঠাত বারে গিয়ে অযাচিত রঙ্গীলা রঙ্গীলা করা কি কোন ব্যারিস্টারের কর্ম? মেয়েরা কেবল বুদ্ধি দিয়েই রহস্য উদঘাটন করতে পারে-এই স্বাভাবিক ব্যাপারটি কেন যেন বাংলা সিনেমায় আসেনা যা খুবই অবাক করা ঘটনা।

বিরতী অব্দি টান টান একটা উত্তেজনা থাকলেও ছবির অর্ধেকে গিয়ে পুলিশ খালিদের (তানভির) সাথে মায়ার (পরী মনি) আচমকা প্রেম দর্শককে চিন্তায় ফেলে দেয়। কারাগারে থাকা কয়েদির সাথে রক্ষকের শুরু হয় বৃষ্টির মধ্যে মাখামাখি দৃশ্য।এমন অসাধারণ একটি রহস্য গল্পে হঠাত করেই রগ্রগে রোমান্টিক দৃশ্য- আমিসহ আরো আপাশের দর্শক ঠিক নিতে পারছিল না। কেবল পুলিশ না,অন্য দিকে ডাক্তার ইমরান (সাজ্জাদ) হাবুডুবু খেতে থাকে অন্য বোন শিলার সাথে। তাদের প্রেমের মধ্যে বাগড়া বাঁধে আরো একটি চরিত্র যার মৃত্যূ হয় সেই রহস্য জনক খুনির হাতেই। রহস্য উপন্যাস মাঝ পথে এসে মোড় নেয় ত্রিভুজ প্রেমের গল্পে।পরিচালক অবশ্য দক্ষতার সাথেই শেষ অব্দি খুনিকে কৌশলে শনাক্ত করিয়েছেন ব্যারিস্টার শিরীনকে দিয়েই,সে জন্য তাকে সাধুবাদ না জানালেই নয়।

এই সিনেমায় অনবদ্য অভিনয় যারা করেছেন তাদের মধ্যে শহীদুল আলম সাচ্চু, তারপর পুলিশ চরিত্রে তানভির, সব শেষে ঠান্ডা চরিত্রে ডা: মোজাফফর। তানভির বাংলা সিনেমায় পুরোপুরি সময় দিতে পারলে বেশ ভালো করবে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু পরিমনীর মতন স্বল্প বসনা নায়িকার সাথে যদি লাগাতার অভিনয় করতেই থাকে তাহলে তার ফাইটিং বা বডি স্ট্রাকচার কোন গুণই কাজে আসবে না। এক সালমান শাহ একাই প্রিয় নায়ক হননি, তার সাথে শাবনূর এবং মৌসুমীর মতোন বড় মাপের অভিনেত্রী ছিলেন। সুতরাং ,জুটি বাঁধতে হলে অনেক সাবধানী হতে হবে।অন্যদিকে সাজ্জাদ আগের ছবিতে যতোখানি সাবলীল ছিল, শিলার সাথে তাকে ততোটাই ম্লান লেগেছে। হতে পারে তাদের কেমিস্ট্রি ঠিক রোমান্টিক না ,কেমন যেন সন্দেহ সন্দেহ আভাস ছিল। যাই হোক,যৌন আবেদনময়ী হিসেবে পরিমনীকে ১০০ তে ১০০ দেওয়া যায় নিশ্চিন্তে যদিও এই ধরনের সিনেমায় এইরকম গলগলানো বৃষ্টি ভেজা দৃশ্য একেবারেই অপ্রয়োজনীয় ছিল।

বহু দিন পর শামস সুমনের বাংলা ছবিতে সাবলী অভিনয় ভালো লেগেছে, পাশাপাশি চানাচুর নামে আফজাল শরীফ সমান তালে সুঅভিনয়ের জন্য ধরে রাখতে পেরেছেন দর্শকদের।(মাঝ পথে কেউ উঠে যায় নি) মোদ্দা কথা, গল্পটা যতোনা রহস্যের উদ্রেক করঞ্ছে তার চাইতে বেশি মাত্রায় আগ্রহী করে তুলেছিল চরিত্রের সংলাপ গুলো। সব গুলো সংলাপ স্পষ্ট এবং যুক্তিযুক্ত ছিল। যারা নিয়মিত সি আই ডি বা ক্রাইম পেট্রোল দেখেন তারা বেশ ভালো করেই বুঝে ফেলতে পারবেন আসল খুনি কে। কিন্তু, গোছানো সংলাপ ব্যবহারে বেশ সতর্কতার সাথেই সবকটা দৃশ্যের সুনিপূন সমাপ্তি ঘটে।

এই ছবির বেশির ভাগ শ্যুটিং ইনডোরে, তাই হয়তো অনেক সময় একটু একঁঘেয়ে মনে হতে পারে। তবে মাঝে মাঝে নায়ক নায়িকার কাল্পনিক নৃত্য দর্শককে কিছুটা হলেও রিফ্রেস করতে পারবে বলে মনে হয়। তবে আমার বিবেচনায় মনে হয়েছে জোর পূর্বক ইমোশনাল সিকুয়েন্স না এনে একটি স্বয়ংসম্পূর্ন ডিটকটিভ ছবি করলে পূর্নাংগ রহস্যময় সিনেমার স্বাদ পেতাম। প্রযুক্তি এখন এতোটাই সবার হাতের মুঠোয় যে মোটা মেয়ের নৃত্য পাবলিক ঠিক আগের মতোন পছন্দ করে না, তার উপর আবার সেই প্রাচীন কাল থকে নায়ক গুলো অর্ধ নগ্ন নারীর শরীর কোলে নিয়ে হেঁটেই চলেছে,আর কতো? সময় এসেছে নতুন কিছু ভাব্বার,নতুন কিছু দেখাবার।

পরিশেষে পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজারকে অশেষ ধন্যবাদ নতুন শিল্পীদের গুরূত্পূর্ন চরিত্রে সুযোগ দেবার জন্য। যদিও ফেরদৌস হাসান এখানে অতিথি শিলী এবং এই চরিত্র পুরোটাই পি এইচ ডি -তেই আটকে গেছে তারপরো মৌসুমীর কল্পনার “ভালোবেসে কাছে এসে” গানটি হাবিব আর ন্যান্সির কন্ঠে অসাধারণ লেগেছে।কেবল সিনিয়র এই শিল্পীদের প্রতি সবিনয় অনুরোধ নিজেদের মেদ সম্পর্কে সতর্ক থাকুন, আপনাদের আমরা আরো বহু বছর এভাবেই দেখতে চাই। আরো অনেক ভালো সিনেমা আপনারা দিতে পারবেন সে ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই।


মন্তব্য করুন