Select Page

রিফিউজি হয়ে কেউ বাঁচতে চায় না

রিফিউজি হয়ে কেউ বাঁচতে চায় না

২০০৭ সাল, স্বাধীনতার ৩৬ বছর পালিত হওয়ার জন্য এক মিলায়তনে একত্রিত হয়েছে সবাই। মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন আজ ভীষণ চাপে আছেন, তাকে তার মতাদর্শের বিরুদ্ধে গিয়ে মঞ্চে বলতে হবে, অসুস্থ হয়েও এসেছে পুলিশ অফিসার মারিয়া, তার মধ্যে রয়েছে উৎকন্ঠা। আর রয়েছে দুইজন বিহারী, দুজনের উপস্থিতির উদ্দেশ্য ভিন্ন। আর যে এইখানে আসেনি, সেই মূলত এইসবের কারণ!

‘রিভিউজি’, হইচইয়ে সদ্য মুক্তি পাওয়া ওয়েব সিরিজ। এর গল্প বিহারীদের নিয়ে। ঢাকা আর সৈয়দপুরে আটকে পড়া বিহারীদের গল্প আমরা কম বেশি সবাই জানি। তাদের দেহ এই দেশে রইলেও মন প্রাণ পড়ে থাকে পাকিস্তানে, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের ভূমিকা ছিল বিতর্কিত, তারা নিজেরাই অনেক মানুষ মেরেছে। কিন্তু সেই দেশ তাদের গুরুত্ব মনে করে না। এইদিকে তারা এইদেশের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম তো এইসবের মধ্যে ছিল না, কিন্তু তারাও পূর্বসূরিদের অপরাধের ফল বয়ে বেড়ায়। ফলে সময় যত বেড়েছে তাদের সাথে বেড়েছে তত দূরত্ব, পরিস্থিতির চাপে যুক্ত হচ্ছে মাদক ব্যবসা সহ নানান অপরাধ কাজে। তেমনি একজন ইকবাল, তার ভাই বিনা অপরাধে জেল হাজতে বন্দী। এই বিহারী ক্যাম্পেই লুকিয়ে আছে কার্বন নামের একজন উগ্রবাদী লোক। তাকে ধরতেই যেই গল্পের ডাল পালা বিস্তার করে, তাই নিয়ে এই সিরিজ।

বিহারীদের নিয়ে এর আগেও টুকটাক কিছু কাজ হয়েছে, ওটিটিতে এইবারেই প্রথম। রচয়িতা ও নির্মাতা ইমতিয়াজ আহমেদের গল্প ভাবনা বেশ ভালো, তবে সিরিজকে উপভোগ্য করার জন্য যে প্রাঞ্জল চিত্রনাট্যের প্রয়োজন, সেটা ফুটিয়ে তুলতে পিছিয়ে গেছেন। এই ব্যাপারটায় আরো সচেতন হলে আরো পূর্ণতা পেত, সঙ্গে অভিনয়শিল্পীদের ডাবিং। বেশিরভাগ অভিনয়শিল্পীই উর্দু ভাষায় কথা বলেছেন, কিন্তু খারাপ লাগলেও সত্যি কারোরই যেন ঠিকঠাকভাবে হয়নি, কিছু কিছু অংশ তো বেশ কানে লেগেছে।

একমাত্র শরীফ সিরাজ বাকিদের চেয়ে ভালো, অভিনয়টাও বেশ ভালো করেছেন। চরিত্রের মধ্যেও একটা দ্বন্ধমুখর ব্যাপার এসেছে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছেন সোহেল মন্ডল, বিহারী বিপথগামী যুবকের চরিত্রে ভালোভাবেই মানিয়ে গেছেন। এক্সপ্রেশনেই তিনি অনেকখানি এগিয়ে যান। পুলিশ অফিসারের চরিত্রে আবারো মম, অন্যান্য সিরিজের চরিত্রের চেয়ে ব্যতিক্রমী কিছু নয়। তবে তিনি ভালো করেছেন। কার্বন চরিত্রে আছেন আফজাল হোসেন, উনি অভিনয়ে নিয়মিত হয়েছেন এটাই আনন্দের সংবাদ। ঝুনা চৌধুরী, শাহেদ আলী, নাম না জানা বিহারি নেতা এরা ভালোই। মনির খান শিমুল আজকাল মুখ দেখানোর জন্য অভিনয় করেন, এটাতেও তেমন কিছু করার ছিল না। তবে একজন উর্ধ্বতন পুলিশ অফিসার হয়েও নারী পুলিশ অফিসারকে এইভাবে সংলাপ প্রক্ষেপণটা খুবই দৃষ্টিকটু।

এই সিরিজের প্রযোজক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ, এই নামটিতেও আগ্রহ বেড়ে যায়। সাদ পরিচালক না হলেও তার কাজের চিত্রগ্রাহক তুহিন তমিজুল ছিলেন চিত্রগ্রাহকে, রঙ এবং আলো অন্ধকারের এক রহস্য রুপ দেখিয়েছেন, শুরুর উর্দু গা টাও জমেছে।

রিফিউজি হয়ে আসলে কেউ বেঁচে থাকতে চায় না, কিন্তু রাজনীতির কুটিল প্যাঁচে পড়ে এইসব সাধারণ মানুষ নিজেদের করে দেয় অসামাজিক। সাধারণ মানুষরাও তাদের আর আপন করে নিতে চায় না। তবুও, এতসব দ্বন্দ্বের মধ্যেও আশা করি, যে দেশে তাদের জন্ম,সেই দেশ যেন তাদের আপন করে নেয়। আর তারাও যেন তাদের জন্মভূমিকে ভালোবাসে। এটুকুই প্রত্যাশা।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

চলচ্চিত্র ও নাটক বিষয়ক লেখক

মন্তব্য করুন