Select Page

রিভিউ/ আমার ঘর আমার বেহেশত: চলচ্চিত্র মহলের গালে চপেটাঘাত

রিভিউ/ আমার ঘর আমার বেহেশত: চলচ্চিত্র মহলের গালে চপেটাঘাত

 [বোম্বের জনপ্রিয় ‘দিল’ সিনেমার রিমেক বা অনুমোদিত বাংলা পুনর্নির্মাণ ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’। মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে। কেয়ামত থেকে কেয়ামত ও স্বজনের পর আনন্দমেলা সিনেমার ব্যানারে এটি সোহানুর রহমান সোহানের তৃতীয় রিমেক। এ সিনেমার প্রধান দুই চরিত্রে ছিলেন পপি ও শাকিল খান। এটি শাকিলের অভিষেক সিনেমাও। ওই সময় সংবাদমাধ্যমে ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’-এর রিভিউ করেছিলেন বদর বখতিয়ার। সেই লেখায় নানা ধরনের বক্রোক্তি আছে। আছে বডি শেমিংও। তবে আর্কাইভ হিসেবে বিএমডিবি লেখাটি হুবহু-ই প্রকাশ করছে।]

বলে-কয়ে যিনি নকল ছবি বানান তার নাম সোহানুর রহমান সোহান, আর পিছন থেকে এই কর্মে মদদ জোগায় আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেড। যে ছবি নকল করেন অর্থাৎ মূল ছবির খ্যাতির কারণে দর্শকরাও ছবিগুলো দেখে ফেলে। উৎসাহিত হয়ে সোহান গং কপিরাইটের ধুয়ার অন্তরালে তাদের এই চৌর্যবৃত্তি চালিয়েই যাচ্ছে। ঠিক ছবিও বলা যাবে না। কারণ তারা তো যা করার জানিয়েই করছে, তাই বরং একে ডাকাতি বলাই ভালো। কেয়ামত থেকে কেয়ামত তক, স্বজনের পর এবার বোম্বের জনপ্রিয় ‘দিল’ ছবিটি মেরে দিয়ে বানানো হয়েছে ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’। লক্ষণীয় ব্যাপার, আগের দুটো ছবির নাম হুবহু বসালেও এবার নামটা একটু অন্যরকম। আসলে তা না করে উপায়ও ছিল না। কারণ ছবি ডাকাতি হওয়ার অনেক আগেই এই নামটা আরেক দল ডাকাতি করে ফেলেছে। তাই ‘দিল’ ছবির বাংলা নাম ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’। তার আবার একটা ইংলিশ নাম আছে, ‘Love makes love live’ জাতীয়। চিন্তা করুন, ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ ছবির নাম Love makes love live বা ভালোবাসা ভালোবাসাকে জীবন্ত করে তুলেছে। বাংলা ছবির ইংরেজি নামকরণ হতে পারে পিএইচডি করার বিষয়। ‘দাগী সন্তান’ ছবির নাম হয় ‘Love and bullet’, ‘ধর্ম আমার মা’ হলো ‘The mother’, এদের জ্ঞান যে কোন অভিধানলব্ধ। বলছি না যে, ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ ছবির নাম অবশ্যই হতে হবে ‘My house my heaven’। কিন্তু আক্ষরিক অর্থ এবং ভাবার্থের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেই নামকরণ করা উচিত।

‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ এখানে কার ঘর কার বেহেশত? নায়ক শাকিলের বাবা তারিক আনাম খানের টাকা ও গয়নায় ভাসতে থাকা ঘরটি নাকি নায়িকা পপির বাবা আহমেদ শরীফের প্রাসাদটি, নাকি বাবা-মাকে চরমভাবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করে নির্লজ্জ নায়ক-নায়িকা দূরদেশে গিয়ে যে বাঁশ-বেতের ঘরটি বানিয়েছিল, সেটি? সেই ঘরটিতে অদ্ভুত কিছু বালখিল্যতা হয়, তারপর নায়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মৃত্যুশয্যায় যায় এবং তখন নায়কের বাবার চক্রান্তে নায়িকা নায়কের কাছে থেকে দূরে সরে যেতে বাধ্য হয়। কয়েক মিনিটের অপারেশনে নায়ক সুস্থ হয়ে ফিরে এসে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে সেই ঘর ভেঙে ফেলে। যে ঘর থেকে নায়ক-নায়িকার বিচ্ছেদ হয়, সে ঘরকে আর যাই হোক বেহেশত বলা যায় না।

মূল ছবি অর্থাৎ ‘দিল’-এ শুরুতে বেশ চমক আছে। অথচ এই চমকগুলোকে এতো ব্যাপকভাবে চিত্রায়ন হয়েছে যে, ‘দিল’-এর নির্মাতারা ছবি দেখলে হাসতে হাসতে মরবেন, আর না হয় কাঁদতে কাঁদতে সাগর বানাবেন। একটা বক্সিং প্রতিযোগিতা আছে, যেখানে শর্ত হলো জয়ী বক্সার নায়িকাকে চুমু খাবে আর পরাজিতজনের চুমু খেতে হবে মিস লিলিকে। দৃশ্যটার অদ্ভুত চিত্রায়ণ সেটাকে হাসির দৃশ্য নয়, হাস্যকর দৃশ্যে পরিণত করেছিল। ভিলেন বক্সারের বাড়াবাড়ি, শাকিলের আনাড়ি অভিনয় এবং পপির সামঞ্জস্যবিহীন এক্সপ্রেশন দৃশ্যটাকে মার খাইয়ে দিয়েছে পুরোপুরি।

যাই হোক, এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে পপি তার ইজ্জত লুটতরাজের অভিযোগ করে শাকিলের বিরুদ্ধে। শাকিলকে বের করে দেওয়া হয় কলেজ থেকে। সে পাল্টা প্রতিশোধ নিতে মহাবীর রুস্তমের শক্তিতে সবার মাঝ থেকে পপিকে তুলে আনে। কিন্তু ধর্ষণ করতে গিয়েও করে না, বরং তার জায়গায় এমন কয়েকটা ডায়ালগ ছাড়ে তাতেই দেমাগি পপি একদম তার প্রেমে মাতোয়ারা। তারপর সে কী প্রেম, সে কী গান আর সে কী নাচ।

পপি পোশাক-আশাকের ব্যাপারে বড়ো উদার। সেই উদারতা দিয়ে তিনি এই ছবির নির্মাতা দর্শকদের কৃতার্থ করেছেন। দর্শকরা আরো কতার্থ হতো যদি নাচে অন্তত যেতে পারতেন মাধুরীর কাছাকাছি। লাফঝাঁপ করে বেশ চেষ্টা করেছেন বটে তবে চেষ্টা করলেই তো হয় না, ভিতরে জিনিস লাগে। দীর্ঘাঙ্গী এই নায়িকার শরীরের একটা জায়গায় মাংস বড়ো বেশি। ঐ জায়গার মাংস প্রতি ছবিতেই বাড়ছে। খেয়াল না করলে ক্রমান্বয়ে তিনি এমন ফিগার ধারণ করবেন যে, নায়িকার চরিত্র বাদ দিয়ে মহিলা কমেডিয়ান হতে হবে। সালমান শাহর শূন্যতা দূর করতে এখন ঝাঁকে ঝাঁকে ভাগ্যান্বেষী তরুণ ছুটছে এফডিসির পানে। এদের একজন শাকিল। চেহারা-সুরত খারাপ নয় কিন্তু অভিনয়ে এতো বেশি কাঁচা যে এই চেহারা উপস্থাপিত হয়েছে ‘ভ্যাবদা’ না, অভিনয়ের অ-আ জ্ঞানও তার নেই। ধর্ষণ করতে যাওয়ার সময় তাকে যেমন ধর্ষণোদ্যত মনে হয়নি, তেমনি রাগ করার দৃশ্যগুলোতে তাকে একটুও রাগী মনে হয়নি। হাত-পা দুলিয়েছেন অকারণে এবং প্রায় সব ক্ষেত্রেই একইভাবে। হয়তো এসব প্রতিভাহীন ‘ভ্যাবদা’ ছেলেরা দুদিনেই বিরাট তারকা বনে যাবে যে দেশের ছবির নায়ক-নায়িকাদের এই হাল, সে দেশে ৮ বছরের পুরোনো নকল ছবি তৈরি হবে না তো কোন দেশে হবে!

মূল ছবির সুনাম এবং সাফল্য ভাঙিয়ে এই ছবি হিট করে ফেলেছে। আমাদের চলচ্চিত্রমহলের গালে এটা একটা শক্ত চপেটাঘাত। এই চপেটাঘাতে এরা হয়তো ব্যথা পাবেন কিন্তু লজ্জা পাবেন না এবং কিছু শিখবেনও না।

  • চলচ্চিত্র বিষয়ক একটি গ্রুপে রিভিউটির পেপার কাটিং শেয়ার করেছেন কাব্য হোসাইন।


মন্তব্য করুন