![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
রিভিউ/ পাকিস্তানের প্রথম সিনেমাস্কোপ ছবি ‘বাহানা’
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/10/bahana_bmdb_image.jpg?resize=862%2C667&ssl=1)
‘বাহানা’র বুকলেট কাভার। সংগ্রহে মীর শামসুল আলম বাবু
জহির রায়হান পরিচালিত উর্দু ভাষার চলচ্চিত্র ‘বাহানা’ ১৯৬৫ সালের ১৩ এপ্রিল মুক্তি পায়। ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন কবরী, রহমান, গরজ বাবু, জাকারিয়া প্রমুখ। কারিগরি ও বাণিজ্যিকভাবে এ ছবির ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। এটি তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র। এর আগে উর্দু ভাষায় পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি ‘সঙ্গম’ পরিচালনা করেন জহির রায়হান। সেটি তুমুল সাড়া পায়, এ ছবিও দুই পাকিস্তানে বাঙালি চলচ্চিত্রকার হিসেবে বাঙালির নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ১৯৬৫ সালের ২২ এপ্রিল ‘বাহানা’র রিভিউ ছাপা হয় দৈনিক সংবাদে। সেখানে সমালোচকের নাম উল্লেখ ছিল না। শুধু বলা হয় ‘চিত্রসমালোচক’। রিভিউ সংগ্রহ করা হয়েছে অনুপম হায়াৎ সম্পাদিত ‘পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সমালোচনা’ (১৯৫৬-২০০৯) বই থেকে।
পাকিস্তানের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য রঙিন চিত্র ‘সঙ্গম’-এর স্রষ্টা পরিচালক জহির রায়হান এবারকার ঈদে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ছবি উপহার দিয়েছেন। ‘সঙ্গম’-এর মতোই এ ছবিও জহিরকে পাকিস্তানি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট সম্মান ও কৃতিত্বের অধিকারী করেছে। জহিরের এই নবতম সৃষ্টি ‘বাহানা’ পাকিস্তানের প্রথম সার্থক সিনেমাস্কোপ ছবি। কারিগরি উৎকর্ষের ক্ষেত্রে পাকিস্তানি ছবির অগ্রগতির ইতিহাসে ‘সঙ্গম’-এর মতো এ ছবিও একটি বলিষ্ঠ ও সফল পদক্ষেপরূপে পরিবর্তিত হবে।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/10/bahana1_bmdb_image.jpg?resize=1024%2C743&ssl=1)
পাকিস্তানি চলচ্চিত্র জগতের যে গুটিকয়েক পরিচালকের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ঝুঁকি নেওয়ার সাহস আছে তরুণ পরিচালক জহির রায়হান তাঁদের অগ্রগণ্য। তাঁর পূর্ববর্তী প্রত্যেকটা ছবি ‘কখনো আসেনি’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘সঙ্গম’, এর মধ্যে অদম্য অতৃপ্ত প্রতিভাধর তরুণের নতুন কথা বলার, নতুন পথে চলার, নতুন কিছু খোঁজার ও নতুন কিছু করার আকুতি সুস্পষ্ট। ‘বাহানা’তেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
‘বাহানা’র কাহিনী গড়ে ওঠেছে পাকিস্তানের সর্বাধুনিক ও বৃহত্তম নগরী করাচীকে কেন্দ্র করে। জনৈক ধনকুবেরের একমাত্র কন্যা (কবরী) চঞ্চল, আবেগপ্রবণ, বেপরোয়া, একরোখা। বাপের নয়নপুত্তুলী। চিটেগুড়কে ঘিরে যেমন ভনভন করে উড়তে থাকে মাছির ঝাঁক তেমনি এ ধনী কন্যাকেও সর্বক্ষণ ঘিরে থাকে একদল বিত্তশালী প্রেমিক। এদের কেউ কেউ মেয়েটির বাপের বয়সী। এদের অন্তঃসারশূন্য স্তুতি ও স্থূল প্রেম নিবেদনের একঘেঁয়েমি মেয়েটিকে উত্যক্ত ও বিরক্ত করে তোলে। এমন সময় এক দরিদ্র অথচ সৎ ও আত্মসম্মান জ্ঞানসম্পন্ন যুবকের প্রতি নজর পড়ে তার। সঙ্গে সঙ্গে উপরোক্ত প্রেমিকদলকে উপেক্ষা করে দরিদ্র যুবকটির প্রেমে পড়ল সে। এই হচ্ছে কাহিনী।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/10/bahana4_bmdb_image.jpg?resize=460%2C600&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/10/bahana2_bmdb_image.jpg?resize=463%2C628&ssl=1)
বলাবাহুল্য, নতুন কিছু করার পক্ষে কাহিনীটা খুবই দুর্বল। চিত্রপরিচালক জহির রায়হানের খ্যাতির অঙ্গনে প্রথম প্রবেশ ঘটেছিল ভালো গল্প ও উপন্যাসকার হিসেবে। স্বভাবতই তার ছবিতে লোকে ভালো গল্পও প্রত্যাশা করে। এবং চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রচুর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারও নিশ্চয়ই জানা আছে যে, গল্পহীন ছবি, নাটকহীন চিত্রনাট্য ও সুরহীন গান একই বস্তু। আরেকটা কথা এখানে বলা দরকার যে, গল্পটা তিনি শুরু করেছেন হাল্কা ব্যঙ্গাত্মক সুরে। ছবির প্রথমার্ধে এ সুর পুরাপুরি বজায় ছিল। নগরাশ্রয়ী প্রাচুর্য ও বিত্তশালী সমাজের তথাকথিত আধুনিকতা ও আলোকপ্রাপ্ত ন্যাকামিকে তীব্র তীক্ষ্ণ বিদ্রূপে ক্ষত-বিক্ষত করেছেন এবং তারই পাশাপাশি নিচতলার জীবনের নিরাভরণ বলিষ্ঠতা ও সুস্থতাকে প্রশংসনীয় দক্ষতার সাথে তুলে ধরেছেন। কিন্তু শেষাংশে তিনি কেন গল্পটাকে হঠাৎ মুচড়ে দিয়ে মেলোড্রামার আমদানি করতে গেলেন তা বোঝা গেল না। বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, মেলোড্রামার আমদানি অপরিহার্য ছিল না। একে শেষ অবধি মনে হচ্ছে প্রক্ষিপ্ত, অপ্রয়োজনীয়। ছবির সাফল্যকেও এ কিছুটা ব্যাহত করেছে। কিন্তু গল্পের এ ত্রুটি বা দুর্বলতাকে প্রয়োগ নৈপুণ্য উপস্থাপনার নতুনত্ব ও পরিচালনার মুনশিয়ানা দ্বারা তিনি অনেকখানিই কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন।
একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, ‘বাহানা’ একটি কমার্শিয়াল ছবি। কিন্তু কমার্শিয়াল ছবি হওয়া সত্ত্বেও এ শিল্পরস বর্জিত নয়। অন্যান্য পাকিস্তানি ছবির মতো স্থূল যৌন আবেদনের ছড়াছড়ি কিম্বা নগ্নতার বাড়াবাড়ি এতে নেই। এটি সর্বাংশে একটি পরিচ্ছন্ন ও শালীনতামণ্ডিত ছবি। এবং সস্তা অনুকৃতি বা অন্ধ গতানুগতিকতা থেকেও এ মুক্ত। আজকের দিনে এ বিশিষ্টতা হেলাফেলার বস্তু নয়।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/10/bahana3_bmdb_image.jpg?resize=855%2C679&ssl=1)
অভিনয় সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় নায়িকার ভূমিকায় মিষ্টি মেয়ে কবরীর অভিনয়ের কথা। ‘সুতরাং’-এর কবরীকে যে ভূমিকায় অভিনয় করতে হয়েছে ‘বাহানা’র ভূমিকা তার সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী। এ ভূমিকা এক উগ্র আধুনিকা ডানপিটে আদুরে ধনী কন্যার। স্বভাবতই কবরীর জন্য ভূমিকাটি সহজ ছিল না। ছবির প্রথম দিকটায় কবরীকে আড়ষ্ট মনে হয়েছে। অবশ্য শুধু কবরী নহেন, নায়ক রহমানসহ অন্যান্য শিল্পীরাও প্রথম দিকে আড়ষ্ট। এ থেকে ধারণা হয়, পরিচালক যেন শিল্পীদের নিকট থেকে প্রথম দিকটায় পুরাপুরি সহযোগিতা পাননি। পরবর্তী অংশে অবশ্য সকলের অভিনয় অনেক বেশি জড়তামুক্ত ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। কবরীও চরিত্রানুযায়ী অভিনয়ের চেষ্টা করেছেন। উর্দু ছবির দর্শকদের কাছে কবরীর মিষ্টিমুখ আকর্ষণীয় প্রমাণিত হবে বলে আশা করা যায়। রহমানের অভিনয়ে তার দৈহিক অসুবিধাকে জয় করার চেষ্টা ও নিষ্ঠা ফুটে ওঠেছে। পার্শ্বচরিত্রে উল্লেখযোগ্য অভিনয় করেছেন জাকারিয়া।
চিত্রগ্রহণে ক্যামেরাম্যান আফজাল চৌধুরী চমৎকার নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন। তার ফটোগ্রাফি এ ছবির অন্যতম সম্পদ। সঙ্গীতে খান আতাউর রহমান গতানুগতিকতাকে এড়াতে পারেননি। শব্দগ্রহণ ও মিশ্রণে কিছু ত্রুটি রয়েছে যা সংশোধন করা যেতে পারে। সব মিলিয়ে এ একটা সপরিবারে দেখার মতো ছবি।