Select Page

রিভিউ : হিরোইজম, থ্রিলার ও অতৃপ্তি

রিভিউ : হিরোইজম, থ্রিলার ও অতৃপ্তি

‘আমার সাধ না মিটিল আশা না পুরিল’ গানটা ঈদের ছবি পাসওয়ার্ড (২০১৯) এর জন্য খাটে। মুক্তির আগের প্রচারণা, আকর্ষণীয় কথাবার্তা, হাই রেন্টাল এসব ফ্যাক্টর মিলিয়ে তুঙ্গে ঈদের এ ছবি। তাই সিনেমাহলের অভিজ্ঞতাটা অবশ্যই বেশি প্রত্যাশিত থাকবে।

কি ভাবছেন! ছবির নিন্দা করছি, শাকিব খানের ছবির প্রশংসা করি না, লোক সুবিধার না এসব! না, এসব ভাবার কোনো কারণ নেই। ছবি এনজয়অ্যাবল। এর মধ্যে ঐ যে ‘কিন্তু’ যোগ করলে যা হয় আর কি! আরো কেন ভালো হলো না ছবিটা এটাই।

‘পাসওয়ার্ড’ প্রযুক্তিগত শব্দ। প্রযুক্তির সাথে মানুষের মেধার সমন্বয়ে একটা পাসওয়ার্ড নিয়ে অনেক ঘটনা ঘটে যেতে পারে, বড় কোনো ম্যাসাকার ঘটানো যেতে পারে, টাকা-পয়সার লেনদেন হতে পারে যা অকল্পনীয় পর্যায়ের। ছবির গল্পে পাসওয়ার্ড কোনো ফেসবুক বা ভার্চুয়াল সাবজেক্টে ব্যবহার হয়নি তবে যে সাবজেক্টে ব্যবহার হয়েছে তার উপস্থাপন দর্শকভেদে ভিন্ন ব্যাখ্যা দেবে। একটা পাসওয়ার্ডকে কেন্দ্র করে ছবির বেশকিছু চরিত্রের মধ্যে খেলা চলতে থাকে। এর মধ্যে খুন, কৌশল, বুদ্ধি, তদন্ত, প্রতিশোধ এ ধরনের বিষয় সামনে চলে আসে। তারপর একটা পরিণতির দিকে যায়। অ্যাকশন থ্রিলারের সাথে হিরোইজম যোগ করে ছবি এগিয়েছে। কিন্তু ছবির গল্পে থ্রিলার জমাতে আরো কিছু টার্ন দরকার ছিল, স্পেশালি টুইস্টের ব্যবহারটা মিসিং। তাই অতৃপ্তি কাজ করেছে।

শাকিব খানের গত কয়েক বছরের ছবির বেশিরভাগ গল্পই তাকে ঘিরে তবে ‘পাসওয়ার্ড’-এ গল্পটা অনেকের মধ্যে ভাগ করা হয়েছে। এটা গল্পের ভালো দিক। শাকিব খান-কে দিয়েই ছবির শুরু। তার স্ক্রিনটাইম সবচেয়ে বেশি ছিল না, স্ক্রিনটাইম ভাগাভাগি ছিল অনেকের সাথে। অভিনয়ের দিক থেকে শাকিব খানই ছবির প্রাণ। ক্লোজ কিছু শটে অসাধারণ এক্সপ্রেশন তার। স্টার্টিং-এ তার ব্যাকগ্রাউন্ড ভয়েসও দারুণ ছিল। তবে ছবির গল্পে তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থাতে ইন্টারনাল ব্লিডিং-এর সময়ও চলতে-ফিরতে দেখা গেছে, ফাইট করতে দেখা গেছে যা যৌক্তিক মনে হয় নি। বুবলীকে গানের মধ্যে এক্সপ্রেশনলেস দেখা গেছে কিন্তু ছবিতে ভালো অভিনয় করেছে। মিশা সওদাগর সাইকো ভিলেনে ইন্ট্রোডাকশনটা কমেডিতে নিলেও টিপিক্যাল স্টাইল থেকে বের হতে পারেনি। মিশার রোল কিছুটা টুইস্ট দিয়েছে কিন্তু ছবির গল্পে টুইস্ট আরো দরকার ছিল। চোখে লেন্সের ব্যবহারটা ভালো দেখিয়েছে। অমিত হাসানও সেইম। তার স্লো ডায়লগ ডেলিভারির সমস্যা দিন দিন বাড়ছে ভিলেন রোলে যেটা নায়কের রোলে থাকত না। ইমনের চরিত্রটি কেমন গুরুত্বপূর্ণ দর্শক বিচার করবে দেখার পর। আপাতত দরকার নেই। মালেক আফসারী তার ছবির রেগুলার আর্টিস্ট শাঙ্কোপাণ্ঞ্জাকে টিপিক্যালি ব্যবহার করেছেন, তার অভিনয় বা চরিত্রে চিৎকারসর্বস্ব জিনিসই দেখা গেছে।

শাকিব খান-বুবলী রসায়ন ‘পাসওয়ার্ড’-এ মন্দ না। টিপিক্যাল রোমান্স ছবির অনেকটা জুড়েই দেখানো হয় নি। বাংলা ছবিতে তরমুজ রোমান্স সম্ভবত তারাই প্রথম দেখালো। তাদের গানগুলো দর্শক ইতোমধ্যে দেখেছে।

অ্যাকশন ছবিতে ডায়লগ বেসিস অ্যাকশন বড় ব্যাপার। শাকিব খানের মুখে শুধু ‘পাসওয়ার্ড দিয়েছি ক্যাশ করাতে পারবি না’ এটাই ছিল স্ট্রং ডায়লগ অথচ আরো থাকার দরকার ছিল। মিশার দুটি ডায়লগ ছিল যার মধ্যে ‘নো ফিয়ার ভিক্টর ইজ হেয়ার’ বলার মতো। ডায়লগের অভাব থেকে গেছে ছবিতে।

ছবির অ্যাকশন পার্টে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক চমৎকার ছিল। কিন্তু টিপিক্যাল আর্টিস্টদের দিয়ে অপ্রয়োজনীয় কিছু ভাঁড়ামো কমেডি করতে গিয়ে ছবির আধঘণ্টা নষ্ট না করে যদি সেখানে থ্রিলার বা টুইস্ট নিয়ে ভাবা যেত ছবির গল্পটা আরো স্ট্রং হত। সরকারের গুণগানের সিকোয়েন্স কৌশলে ঢুকিয়েও সমালোচনাকেই স্বাগত জানানো হয়েছে। এর কোনো দরকার ছিল না। ছবির ফাইটিং-ও অ্যাকশন ছবির স্ট্যান্ডার্ডে হয়নি, আরো চোখ ধাঁধানো হবার দরকার ছিল। লোকেশনের ক্ষেত্রেও ভালো-মন্দ আছে।

ঈদের ছবিতে ঈদের গান ‘ঈদ মোবারক’ ব্যবহারের পাশাপাশি ফিনিশিং-এও ঈদের রেশ দেখানো হয়েছে। ঈদের একটা আমেজ হয়তো অনেকে পাবে।

‘আন্তর্জাতিক মানের ছবি’ বলে প্রযোজক শাকিব খান যে কথাটি বারবার বলে তার প্রতি পরামর্শ থাকবে সেই মানগুলো কিভাবে অ্যাকশন থ্রিলার ছবিতে কাজে লাগানো উচিত সেটা স্টাডি করা তাহলে পরে এ ধরনের ছবি আরো করতে চাইলে হেল্প হবে। ‘পাসওয়ার্ড’ তার প্রযোজনায় ইন্ডাস্ট্রির মন্দা সময়ে ভালো উদ্যোগ এবং অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। কিন্তু, পরিপূর্ণ তৃপ্তি দিতে তাকে ছবির জরুরি দিকগুলোতে নজর দিতে হবে। পরের ছবিগুলোতে আশা করি তা থাকবে।

‘পাসওয়ার্ড’ সফল হোক।


মন্তব্য করুন