Select Page

‘র’ নীল মুকুট

‘র’ নীল মুকুট

যতদিন সিংহ নিজে তার গল্প না বলবে ততদিন শিকারীর গল্পই শুনতে হবে – আফ্রিকান প্রবাদ

কামার আহমাদ সাইমন নির্মিত তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘নীল মুকুট’ (২০২১)। তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘শুনতে কী পাও’ মুক্তি পেয়েছিল ২০১২ সালে। এরপর আসে ‘একটি সুতার জবানবন্দি’। বেশ বিরতি রেখেই এবারের কাজটি তিনি করলেন।

পরিচালক কামার আহমাদ সাইমন

‘নীল মুকুট’ একটি ডকু-ফিকশন। ১ ঘণ্টা ৪২ মিনিট দ্যৈর্ঘ্যের কাজটি মূলত টার্গেট অডিয়েন্স বেইজড, যার জন্য (হয়তো) সব দর্শকের ভালো লাগবে না। যাদের এ ধরনের কাজ সম্পর্কে আইডিয়া আছে বা দেখে অভ্যস্ত তাদের ভালো লাগবে দেখতে।

যে বিষয়ের ওপর ‘নীল মুকুট’ নির্মিত হয়েছে এ ধরনের ডকু-ড্রামা সেভাবে আগে কখনো হয়েছে কিনা দেখার বিষয়। পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ জনগণের যে ধারণা আমাদের দেশে তার বড় একটি অংশই হয় নেগেটিভ। এটি বাস্তবতা বলাই যৌক্তিক। সেই বাস্তবতা থেকেই যদি বলা হয় ‘নীল মুকুট’ খুব কাছ থেকে পুলিশ বাহিনীর একটা সেনসেটিভ টপিককে সামনে নিয়ে এসেছে।

নির্মাতা বলেছেন, ‘এ চলচ্চিত্রে কোনো গল্প নেই’, কিন্তু গল্প শেষ পর্যন্ত থাকেই চলচ্চিত্রে— তাই এতেও আছে। দেশ থেকে বিদেশে পুলিশের যে যাত্রা সেখানে কত পরিশ্রম, ত্যাগ, দৈনন্দিন দুঃখ-কষ্ট, পারস্পরিক বন্ধনের গল্প থাকে সেটাই এ চলচ্চিত্রের গল্প। দেখতে দেখতে গল্প যত এগোবে হার্ট টাচিং একটা পরিস্থিতি আসবে শেষ হতে হতে।

নির্মাণের কথা বললে ডকু-ড্রামার ‘র’ প্যাটার্নে কাজটি হয়েছে। আপনি আমি সাধারণভাবে কথা বলা, খাবার খাওয়া, হাসি-ঠাট্টা করা, ব্যক্তিগত বা পারিবারিক দুঃখ-বেদনা শেয়ার করা যেভাবে ঘটে হুবহু তাই তুলে ধরা হয়েছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং বিষয় হচ্ছে যাদের ক্যামেরায় অনুসরণ করা হয়েছে তারা সবাই সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং তাদের ন্যাচারালভাবে দেখানো চ্যালেঞ্জের ছিল। নির্মাতা ক্যাজুয়্যালি তাদের প্রেজেন্ট করেছেন। সাদা চোখে দেখা যাকে বলে।

’নীল মুকুট’ ছবির একটি দৃশ্য

বাংলাদেশ থেকে হাইতির আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বড় একটা আয়োজন রেখে ডিটেইল কাজ দেখানো হয়েছে। পুলিশ ট্রেনিং থেকে শুরু করে সিলেকশন, বিনোদন, গোলাবারুদ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান প্রদান এগুলো ধারাবাহিকভাবে এসেছে।

প্রধান দুটি চরিত্রের নাম বলা হয়েছে শাহানা আফরোজ চৌধুরী ও মোনালিসা আউয়াল। সংলাপের কথা বললে প্রথমে বর্ণিত সংলাপটি সেরা ছিল। এছাড়া একজন মোবাইলে বলেছিল, ‘মোটর সাইকেলে জড়িয়ে ধরে বসলেই ভালোবাসা হয় না, ভালোবাসা অনেক…’ এ সংলাপটি অর্থবহ ছিল।

চলচ্চিত্রটির নামকরণ ‘নীল মুকুট’ কেন এটা গভীর মনে হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে যা মনে হয়, কাছের মানুষদের ছেড়ে নিজের দেশের সুনাম অর্জনের জন্য পুলিশ বাহিনীর আন্তর্জাতিক পরিসরে যে আত্মত্যাগ সেই দূরত্বকে বেদনার নীল রঙে তৈরি মুকুটে প্রতীকী করা হয়েছে। দর্শকভেদে ভিন্ন অর্থও থাকতে পারে। চলচ্চিত্রটি অসাধারণ তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে এবং নির্মাতা কামার আহমেদ সাইমন তাঁর প্রথম চলচ্চিত্রের মতোই সিলেক্টিভ টপিকে কাজ করেছেন।

রেটিং: ৮/১০


মন্তব্য করুন