Select Page

শত পরিবারের বাস্তব গল্প ‘মাটির ঠিকানা’

শত পরিবারের বাস্তব গল্প ‘মাটির ঠিকানা’

৪ জুন ২০১১, সেদিন ছিল শনিবার। আমি চট্টগ্রামের আনোয়ারা যাই। পরদিন সেখানে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ছিল। ১০ জুন যখন নিজ বাড়ি আসছিলাম তখন চট্টগ্রাম শহরে শাহ আলম কিরণ পরিচালিত আলমগীর-দিতি, শাকিব-পূর্ণিমা অভিনীত ‘মাটির ঠিকানা’ ছবির পোস্টার দেখি।

সন্ধ্যা সাতটায় যখন মেঘনা এক্সপ্রেস থেকে ফেনী নামলাম। তখন দুলাল সিনেমায়ও ‘মাটির ঠিকানা’র পোস্টার দেখি। সিনেমা দেখার আগ্রহ ছিল না। এপ্রিলের এক তারিখে বাংলাদেশে আসি। আসার পর ফেনীর তিনটি সিনেমা হলে তিনটি ছবি দেখি। হলের ভেতর পতিতাবৃত্তি এবং কাটপিস সংযোজিত হওয়াতে আর ছবি দেখিনি। সিনেমা আর দেখবো না বলে ভাবি।

দু’দিন পর একটি পত্রিকায় ‘মাটির ঠিকানা’ ছবির ওপর আলোচনা পড়ি। আলোচনাটি আমার ভালো লাগে এবং দুলাল সিনেমায় যাই।

ছবির গল্প আমাকে মুগ্ধ করে। ধর্মীয়, পারিবারিক, সামাজিক মূল্যবোধের ওপর নির্মিত ‘মাটির ঠিকানা’ এককথায় অসাধারণ একটি সিনেমা। ছবির শিক্ষামুলক গল্প, সমাজের প্রতি মেসেজ অতুলনীয়।

আলমগীর শাকিবের বড়ভাই আর দিতি ভাবি। এই তিনজন নিয়ে সুন্দর পরিবার। বাবা রেখে যাওয়া ব্যবসায় আলমগীর-শাকিব সমান অংশিদার। ব্যবসা দেখাশোনা করে আলমগীর। শাকিব ব্যবসার বিষয়ে দায়িত্বহীন। তবে শাকিব ভাই-ভাবিকে খুব শ্রদ্ধা করে। তারাও শাকিবকে সন্তান তুল্য স্নেহ করে। আলমগীর-দিতি নিঃসন্তান। তাতে তাদের দুঃখ নাই। শাকিব-ই যেন তাদের সন্তান। আলমগীর সৎ, নীতিবান, পরহেজগার, আল্লাহ প্রতি পূর্ণ আস্থাবান। আখেরাতে পূর্ণ বিশ্বাস রাখেন। নিয়মিত নামাজ পড়েন, রোজা রাখে।  শাকিব সম্পূ্ণ উল্টো। মদ্যপ, বাজে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়। নাইট ক্লাবে যায়। রাতে মাতাল হয়ে ঘরে ফেরে।

আলমগীর শাসন করতে চায় কিন্তু দিতির জন্য পারে না। দিতি দেবরের দোষগুলো অপ্রকাশ রাখে। যদিও প্রকাশ পায় তাহলে ঢাল হয়ে দাঁড়ায়।

আলমগীর বড়ভাই হিসেবে চায় আদরের সঙ্গে সঙ্গে শাসন করতে। যাতে শাকিব ভালো হয়ে যায়। দিতি মনে করে শাকিব ছোট। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু শাকিব আস্তে আস্তে বেপরোয়া হয়ে যায়। দিতির কারণে আলমগীর অনুশাসনে ব্যর্থ হয়।

একদিন আলমগীর বাবার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কাঙ্গালি ভোজের আয়োজন করে। শাকিব বেপরোয়া গাড়িয়ে চালিয়ে বাড়ির উঠানে আসে। ভাগ্য ভালো সবাই সরে যায়। না হয় অনেক মানুষ মারা যেত। বিষয়টি নিয়ে আলমগীর শাকিবকে বকাঝকা করে। শাকিব উত্তেজিত হয়ে আলমগীরের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে।

এই গল্প শত পরিবারের বাস্তব গল্প। পরিবারের প্রধান মা অথবা বাবা চায় তাদের সন্তান সমাজে ও পরিবারে ভালো হয়ে চলুক। সন্তানদের মাঝে যেন মন্দ কিছু না থাকে। অভিভাবক ধর্মীয় অনুশাসন দিয়ে। আদর্শ দিয়ে সন্তানদের সুপথে রাখতে চান। কিন্তু সন্তানরা অসৎ সঙ্গীদের পাল্লায় পরে মদ্যপ,জুয়াড়ি, বখাটে হয়ে যায়।

আমাদের সমাজে যেমন আছে জামান চৌধুরী (আলমগীর) তেমনি আছে কল্লোল চৌধুরী (শাকিব খান)। ছবিতে জামান চৌধুরীর আদর্শ জয়ী হয়। আশা রাখি আমাদের সমাজে, আমাদের পরিবারে সবসময় জামান চৌধুরীদের আর্দশ জয়ী হোক।  তবেই সুন্দর সমাজ পাবো আমরা।

কাহিনীকার গোলাম মোর্শেদ, পরিচালক শাহ আলম কিরণ, প্রযোজক মিত্র দেব নাথ  ও গোলাম মোর্শেদকে জানাই ধন্যবাদ এমন সুন্দর ও বাস্তবধর্মী গল্পের সিনেমা উপহার দেওয়ার জন্য।

আলমগীর ও শাকিব খান যথাক্রমে জামান চৌধুরী ও কল্লোল চৌধুরী রূপে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। আমি এই ছবিতে বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের আমেজ খুঁজে পেয়েছিলাম।

শনিবার, ১৮ জুলাই ২০২০


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

আকবর খসরু

চলচ্চিত্রপ্রেমী ও লেখক

মন্তব্য করুন