Select Page

শুধুই রোমান্টিক নায়ক নন সালমান শাহ

শুধুই রোমান্টিক নায়ক নন সালমান শাহ

লিজেন্ড সোহেল রানার কথায়, সালমান শাহ শুধু রোমান্টিক ছবি করেছে। কিংবা তাঁর পাশাপাশি দর্শকের মধ্যেও অনেকে মাঝে মাঝে এ কথা বলে বা দাবি করে থাকে। তাদের জন্য এ লেখা। চলুন, দেখে নেয়া যাক সালমান শাহ শুধুই প্রেমের ছবির নায়ক নাকি আরো ছবির নায়ক।

বিচার হবে চলচ্চিত্রে আসাদের সঙ্গে সালমান শাহ

বিক্ষোভ: ক্যারিয়ারের প্রথমদিকেই দুর্দান্ত পলেটিক্যাল ছবিতে সালমান শাহ নিজের সচেতন ছবি সিলেকশন করেছিল। সালমানের চরিত্রটি ছিল তখনকার সময়ের উদীয়মান ছাত্রনেতাদের স্বপ্নের চরিত্র যারা শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস দেখতে চায় না, চায় বৈষম্যহীন ক্যাম্পাস।

সত্যের মৃত্যু নেই: সত্য প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে শাবানা তার ছেলে সালমান শাহকে উৎসর্গ করে দেয়। ফাঁসি যখন ঘনিয়ে আসে তখন সত্য বের হয়ে আসে এবং তার ফাঁসি স্থগিত হয়। পুরো ছবিতে দুর্দান্ত ফ্যামিলি ড্রামা আর টান টান উত্তেজনার ক্লাইমেক্স।

বিচার হবে: গ্রাম ও শহর মিলিয়ে সালমান শাহর কমপ্যাক্ট অসাধারণ পারফরম্যান্স। গ্রামের সহজ-সরল ছেলে যেমন বহুবিবাহের প্রতিবাদ করেছিল হুমায়ুন ফরীদিকে শায়েস্তা করে শহরে এসে তেমনি শহুরে মেজাজটা বুঝে নিজেই মাস্তানদের যম হয়ে ওঠে। মাস্তানও যে কতটা স্টাইলিশ হতে পারে সালমানের গেটাপে বোঝা যায়।

এই ঘর এই সংসার: মাস্টারপিস ফ্যামিলি ড্রামা। সালমান শাহর চরিত্রটি ভবঘুরে থেকে নিজের পায়ে দাঁড়ানো এক তরুণের যে বিয়ের পর স্ত্রীর কাছে ছোট যাতে না হতে হয় সেজন্য নিজেকে পরিবর্তন করে। দুই ভাইয়ের টাকার সিন্দুকের চাবি তাদেরকে বুঝিয়ে দিলে সালমান শাহ দায়িত্বশীলতার সাথে বলে দেয়-‘ভাইবোনের মধ্যে যদি টাকা দেয়া নেয়া বা ভাড়া দেয়ার কোনো সম্পর্ক থাকে তাহলে ছোট থেকে বড় করেছো তার ভাড়া দিতে হবে। কী দিয়ে দেবো রে আপা? বুক চিরে কলিজাটা বের করে দেই!’ এই সংলাপ আর অভিনয় আপনি কয়টা পাবেন!!

আনন্দ অশ্রু: এ ছবি শুধুই প্রেমের ছবি নয়। এ এক নিদারুণ বিষাদের ছবি। ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’ শুনে আপনি যেমন রোমান্টিক হয়ে যাবেন আবার ‘তুমি আমার এমনই একজন’ শুনে বেদনায় মুষড়ে পড়বেন। এ ছবি হ্যান্ডসাম, স্টাইলিশ সালমান শাহকে যেমন দেখায় আবার বদ্ধ পাগলের চরিত্রে হৃদয় এফোঁড়-ওফোঁড়ও করে দেয়।

স্বপ্নের পৃথিবী: ইউটোপিয়ান থিমের অসাধারণ ছবি। আমরা আমাদের বাস্তবজীবনে যেমন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি যেখানে থাকবে না ধনী-গরিব বৈষম্য বা অত্যাচারী-অত্যাচারিতের অবস্থান। রাজিবের জমিদার সন্তান সালমান শাহ গরিব প্রজাদের সাথে মিশে কিভাবে তাদের অধিকার আদায়ের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে তারই চিত্রায়ণ এ ছবিতে দেখা গেছে। জমিদার রাজিবের সাথে প্রজাদের প্রতিনিধি সালমান শাহর খোলা মাঠের সেই সিকোয়েন্স বলে দেয় ছবিটি কোন লেভেলের ছিল।

স্বপ্নের পৃথিবী চলচ্চিত্রে সালমান শাহ

মায়ের অধিকার: মায়ের অধিকার আদায়ের জন্য সন্তানের কতটা দায়িত্ববোধ থাকে তার অনবদ্য কাহিনি আছে এ ছবিতে। সালমান শাহ যখন তার অহংকারী দাদীর সাথে চলে যাচ্ছে মা ববিতাকে ছেড়ে তখনও ববিতা জানে না আসলে সালমান কেন যাচ্ছে তাকে ছেড়ে। সে রহস্যের উন্মোচন আমরা দেখি সেই সিকোয়েন্সে যখন শাবনাজকে বিয়ের পর তাকে জাহান মঞ্জিলে ঢুকতে বাধা দেয় সালমান-‘দাঁড়াও ওখানেই দাঁড়াও, সামনের সিঁড়িগুলো বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা কোরো না’ সেই কালজয়ী সংলাপে। যে সিঁড়ি বেয়ে একদিন তার মাকে উঠতে দেয়া হয়নি সেই সিঁড়ি বেয়ে স্ত্রীকেও উঠতে দেয় না সালমান। মায়ের অধিকার আদায় করে তবেই ছাড়ে সালমান। অসাধারণ পারফরম্যান্সের ছবি।

কেয়ামত থেকে কেয়ামত ও দেনমোহর: এ দুটি ছবি শুধুই প্রেমের ছবি নয়। প্রেমের পথে সমাজের চিরন্তন পারিবারিক, বংশীয় বাধা আর প্রেমের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করার চিরন্তন বাস্তবতার ছবি। সমাজে এই সমস্যা এখনো চলমান পত্র-পত্রিকা দেখলেই বোঝা যায়। সামাজিক এসব সমস্যার মধ্যে কতশত প্রেমিক জুটি নিজেদের উৎসর্গ করেছে তা নিয়ে এখনো চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে।

এ ছবিগুলো প্রেমের ছবি নয় এগুলো সালমান শাহ-র অল্প ক্যারিয়ারের উঁচুমানের কাজ। এ কাজগুলো একজন সালমান শাহ-র বিরল প্রতিভাকে দেখানোরও কাজ ছিল। আর সালমান প্রেমের ছবি যেগুলো করেছে সেগুলোও কালজয়ী হয়ে গেছে ‘তোমাকে চাই, স্বপ্নের ঠিকানা, অন্তরে অন্তরে, সুজন সখি’-সহ আরো ছবি। আর প্রেমের ছবি করা যে খুব সহজ তাও তো না, প্রেমের ছবি তো আরো অনেকে করেছে সালমান শাহ-র মতো স্মরণীয় তো সবারটা হয়নি।

সালমান শাহ শুধুই প্রেমের ছবির নায়ক নয় বরং ক্যারিয়ারের অল্প সময়েই যে ভেরিয়েশন দেখিয়েছে সেটা অনেকের থেকে অনেক বেশি ছিল। তাই, সালমানকে যারা শুধুই প্রেমের ছবির নায়ক বলে বা প্রচার করে সেটা তাদের নির্বুদ্ধিতা, তাদেরকে অবশ্যই আরো দেখেশুনে মন্তব্য করতে হবে। ভাবা প্র্যাকটিস করতে হবে।


About The Author

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

Leave a reply