Select Page

কিস্তিমাতঃ চাই ভিন্নধর্মী গল্প, স্বপ্নের সম্ভাবনাটাকে কাজে লাগান

কিস্তিমাতঃ চাই ভিন্নধর্মী গল্প, স্বপ্নের সম্ভাবনাটাকে কাজে লাগান

Kistimat-posters-1-235x275প্রথমেই বলে নিচ্ছি, রিভিউ লেখার কোন যোগ্যতা আমার মধ্যে আছে বলে আমি মনে করিনা। এটি একজন দর্শকের ব্যক্তিগত অনুভূতি।

চলচ্চিত্র: কিস্তিমাত

অভিনয়ে: আরেফীন শুভ, আঁচল, মিশা সওদাগর, রেবেকা, আফজাল শরীফ, হারুন কিসিঞ্জার, সজল ও টাইগার রবি প্রমুখ। গল্প ও চিত্রনাট্য: কাশেম আলী দুলাল। প্রযোজনা: কামাল হোসেন। পরিবেশনা: টাইগার মিডিয়া। পরিচালনা: আশিকুর রহমান।

কাহিনী সংক্ষেপ: গল্পের নায়ক একজন সাহসী পুলিশ অফিসার। তার পুলিশ অফিসার হওয়ার পেছনে একটি সত্য হলো তার বাবার সততা ও সততার নির্মম পরিণতি। বাবার বন্ধু নায়ককে সেই পরিণতির প্রতিশোধের জন্য পুলিশ হিসেবে তৈরী করেন। ঘটনাচক্রে নায়ক তার হারিয়ে যাওয়া বোন ও মাকে খুজে পান কিন্তু বোনকে বেশীদিন কাছে পাননি। তাও এক নির্মম সত্যের কারণে। অবশেষে সকল নির্মমতার অবসান হয় এসবের মুল হোতা ভিলেনকে হত্যা করে। গল্পের খুব সাধারণ একটি দরজা দিয়ে প্রবেশ ঘটে নায়িকার এবং তিনি নায়কের জীবনসঙ্গী হয়ে গল্পের শেষমুহুর্ত পর্যন্ত তাকে সঙ্গ দিয়ে যান।

সিনেমার দুর্বলতা: দুর্বল কাহিনী, মূল তিনটি চরিত্র ছাড়া অন্য সব চরিত্রে ভালো অভিনেতার অনুপস্থিতি, কালার কারেকশনে আনাড়ি কাজ ও বাংলা সিনেমার চিরন্তন ডায়ালগের পুনরাবৃত্তি ইত্যাদি।

সিনেমার শক্তিশালী দিক: আরেফীন শুভ, আঁচল ও মিশা সওদাগরের অসামান্য অভিনয়, নবাগত হিসেবে পরিচালনায় আশিকুর রহমানের দক্ষতার ছাপ, VFX এর নিখুঁত প্রয়োগ, দেশীয় লোকেশনে সুন্দর মনোরম দৃশ্যায়ন, ব্যতিক্রমী উপস্থাপন, মিষ্টি কয়েকটি গান ও অশ্লীলতাকে এড়িয়ে ভালো একটি আইটেম সং উপহার দেয়া ইত্যাদি।

মন্তব্যসমুহ: ১. আরেফীন শুভ’র অভিনয় নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই, তবে এই সিনেমায় কোথাও কোথাও তার অভিনয়কে অতি অভিনয় মনে হয়েছে। ২. বাংলা সিনেমার ফাইটিং দৃশ্যে ‘!ওই, আই, এই!’ টাইপ কিছু চিরন্তন শব্দের ব্যবহার রয়েছে, যে ধারা থেকে এই সিনেমাও কোনভাবেই বের হতে পারেনি। ৩. একটি মুভিতে ফান ও সিরিয়াসনেস দুটো আলাদা বিষয় কিন্তু বেশ কয়েকটা দৃশ্যেই পরিচালক এই বিষয় দু’টি গুলিয়ে ফেলেছেন। ৪. ফাইটিং দৃশ্যে শুভকে আত্ববিশ্বাসী এবং গানের দৃশ্যে আঁচলকে অনেক পরিণত মনে হয়েছে। ৫. দুধ নিয়ে নায়িকার সাথে যে ফান করা হয়েছে সেখানে দুধের জায়গায় চা হলে শোভন লাগতো। ৬. আঁচলের অভিনয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছি। তবে তার চরিত্রটিকে কম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে তার চরিত্রটির পরিচয় আমরা খুব একটা জানতে পারিনি। ৭. কৌতুকে হারুন কিসিঞ্জারের অভিনয় অযাচিত লেগেছে। এখানে সজলকে কাজে লাগানো যেত। ৮. ফেবুতে টাইগার রবিকে নিয়ে অনেক মাতামাতি হয়েছিলো যার প্রতিদান তিনি দিতে পারেননি। বিশেষ করে তার মুখ ও দাঁত দিয়ে খিস্তিখেউড় করাটা এই সিনেমার মানকে এবং পরিচালকের দক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। ভিলেন মানেই তাকে পশুর মতো হতে হবে এমনটি ভাবা এই যুগে সম্ভবত ঠিক নয়। ৯. ফাইটিং দৃশ্য থেকে গানের দৃশ্যে চলে যাওয়াটা এমন হতে পারতো যে, শুভ ও আঁচল পরস্পরের বিপরীত দিকে পিস্তল তাক করার পর যদি গুলি বের হতো এবং তা শত্রুপক্ষের গায়ে লাগার পর গানের দৃশ্যে যেতো, তবেই সেটা যৌক্তিক হতো। ১০. “আমি কবিতা লেখা কবি না; আমি ওয়ান এন্ড অনলি লায়ন রবি, আমার সাথে টক্কর দিলে সোজা কবরে যাবি।” এই ডায়ালগটি কতোটা হাস্যকর সেটি স্পষ্ট হতো যদি এটা মিশা’র না হয়ে টাইগার রবি’র ডায়ালগ হতো। মিশা তার সুনিপুণ দক্ষতায় এই হাস্যকর ডায়ালগটিকেও জীবন্ত করে তুলেছেন। ১১. শুভ’র সাথে তার মায়ের সাক্ষাতটা অন্য উপায়ে করালে গল্পে আরো ভেরিয়েশন আনা যেতো। ১২. একটি সার্থক সিনেমার পার্শ্ব-চরিত্রগুলো কমপক্ষে ৭০% ভালো অভিনয়ের রোল চায়। কিন্তু এ সিনেমায় শুভ’র বোনের চরিত্রটা ছাড়া আর কেউ চরিত্রের ভেতরে ঢুকতে পারেননি। ১৩. সিনেমায় প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশী দৃশ্যে স্লো মোশনের আধিক্য ছিলো, যা দর্শককে কখনো কখনো বিরক্ত করে তুলতে পারে। ১৪. শুভ’র নায়কোচিত বডি-ফিগার, লুক ও গেট আপ আমাকে ক্রমেই তার প্রতি দূর্বল করে দিয়েছে। এবার বাংলা ছবি বদলাবোই এমন জোশ শরীরের শিরায় ধমনীতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

প্রস্তাবনা: এই সিনেমায় পরিচালকের ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। এটি বাংলাদেশের অন্য পরিচালকদের মাঝে একদমই দেখা যায়না। এই সিনেমাটিই বলে দেয় যে ভালো গল্প ও চিত্রনাট্য পেলে তিনি কতোটা ভালো করতে পারতেন। এই গল্প দিয়ে আপনি অন্তত একটা ইন্ডাস্ট্রির মৌলিক কোন পরিবর্তন আশা করতে পারবেন না। সুতরাং ভালো গল্পের বিকল্প নেই। শুভ’র কাছে আরো ভালো অভিনয় চাই। প্রতি সিনেমায় কমপক্ষে ৮০% ভালো পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেতা চাই। যাকে যতো ভালো লাগে তার কাছে প্রত্যাশা ততো বেশী বেড়ে যায়। তাই আঁচল কে বলবো, ফিগারের দিকে একটু খেয়াল রাখবেন। আশিকুর রহমানের জন্য রইলো শুভ কামনা।

সবকিছু মিলিয়ে এই সিনেমায় আমার রেটিং: ৬/১০।

 


১ টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন