Select Page

শতভাগ বিনোদন ‘সতর্ক শয়তান’

শতভাগ বিনোদন ‘সতর্ক শয়তান’

হিরোইনের পুটলা দিয়ে বানানো মালা দেখেছেন কখনও?? আমি দেখেছি, আমার সমবয়সী আরও অনেকেই দেখেছে যে একজন হেরোইনসেবী হিরোইনের পুটলা দিয়ে মালা বানিয়ে গলায় পড়তে যে শুধু শয়তান নয় ” সতর্ক শয়তান”।

২৫ বছর আগের ঘটনা। একদিন সিলেটের লালকুঠি সিনেমা হলে দেখতে গিয়েছিলাম আমাদের প্রিয় নায়ক রুবেলের “সতর্ক শয়তান ” সিনেমাটি। রুবেলের সাথে তখন আমাদের মাঝে আরেক ক্রেজ/ আকর্ষণ ছিলো হুমায়ুন ফরিদী। যে সিনেমায় রুবেল ও ফরিদি আছেন সেই সিনেমা না দেখাটা দুর্ভাগ্যজনক আর সেই সিনেমাটা যদি হয় শহীদুল ইসলাম খোকনের তাহলে তো আরও বড় দুর্ভাগ্যজনক। শহীদুল ইসলাম খোকন – রুবেল – হুমায়ুন ফরিদী ত্রয়ী মানে দর্শকদের কাছে ১০০% বিনোদনের ফুল প্যাকেজ আর ১০ গুন বেশি দামে টিকেট কেটে দেখলেও পুরোটাই সুদে আসলে উসুল হবে এই ব্যাপারে সেইসময় ছিলাম আমরা পুরো ১০০% আত্নবিশ্বাসী। সত্যি বলতে কি কোনদিন বিশ্বাসটা ভাঙ্গতে দেখিনি বা নিরাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়নি।

সিনেমার শুরুতেই সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মামুন তার পত্রিকায় কুখ্যাত চোরাকারবারি খলিলের বিরুদ্ধে রিপোর্ট ছাপায়। খলিল তার সৎ ভাই ফরিদীকে সবসময় হেরোইনে আসক্ত রাখে আর হেরোইনের লোভ দেখিয়ে তার শত্রুদের খুন কর‍তে পাঠায়। ফরিদীও খলিলের কথামতো খুন করে এসে হেরোইন কেনার টাকা নেয়। খলিল যে ফরিদীকে ইচ্ছে করেই হেরোইনসেবী বানিয়েছে সেটা ফরিদীও বুঝতে পারে। খলিল চায় ফরিদী মাদকাসক্ত হয়ে থাকবে, তাকে কোন সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা দেয়া লাগবে না। খুনগুলোর সাক্ষীও কেউ থাকবে না। আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গাড়ী দুর্ঘটনায় মারতে গিয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়।কিন্তু মামুনের মা, স্ত্রী ও সন্তানরা জানে মারা গেছে। আব্দুল্লাহ আল মামুনকে অজ্ঞান অবস্থায় এক গ্রামবাসী পায় যে স্মৃতিভ্রষ্ট মামুনকে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেয় এবং নিজের মেয়ের সাথে বিয়ে দেয়। ২য় স্ত্রীর ঘরে মামুনের এক ছেলে সন্তান হয়। এদিকে খলিল তার সৎ ভাই ফরিদীকে জঙ্গলে নিয়ে মারার চেষ্টা করলে উল্টো বুদ্ধিমান ফরিদী খলিলের পুরো পরিবারকে হত্যা করে। তখনই প্রকাশ পায় এতদিন ফরিদী হেরোইনসেবির অভিনয় করেছে কোন হেরোইনের পুতলা সে খরচ করে নাই উল্টো সবগুলো পুতলা দিয়ে মালা বানিয়ে গলায় ঝুলায়।
মামুনের স্মৃতি ফিরে আসলে সে আবার গ্রামের স্ত্রী সন্তানদের ছেড়ে শহরে চলে আসে। গ্রামের স্ত্রী ও সন্তান শহরে এলে সে আলাদা রাখে। উজ্জ্বল ও রুবেল হয় মামুনের দুই সন্তান। শুরু হয় অন্য এক গল্প যা জানতে হলে আপনাকে শহিদুল ইসলাম খোকন এর ” সতর্ক শয়তান ” অবশ্যই দেখতে হবে।

বিনোদনধর্মী বাণিজ্যিক সিনেমা যারা পছন্দ করেন তাদের সতর্ক শয়তান সিনেমাটি একদম নিরাশ করবে না সে ব্যাপারে ১০০% নিশ্চয়তা দিতে পারি। বরং একবার দেখলে ২য় বার দেখতে ইচ্ছে করবে। সিনেমার গল্পটি দুই সৎ ভাইয়ের দ্বন্দ সংঘাতের হলেও মুলত তা হলো প্রতিকী। সমঝদার দর্শক বুঝতে পারবেন যে পরিচালক শহীদুল খোকন একই পিতার ঔরসে জন্ম নেয়া দুই সৎ ভাইকে বুঝাতে দেশের রাজনৈতিক প্রধান দুটি দলকে বুঝিয়েছেন যাদের একতা নাহলে দেশবিরোধী সতর্ক শয়তানেরা দেশের ক্ষতি করতেই থাকবে আর সেসব শয়তানদের মোকাবিলা করতে ঐক্যর কোন বিকল্প নেই।

সতর্ক শয়তান নাম ভুমিকায় ফরিদী পুরোটা সময় দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছিলেন। ফরিদী পর্দায় আসলেই একটা জোরে তালি দিতে হতো সবাইকে। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে ফরিদীকে যত বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করতে দর্শকেরা দেখেছিলো টিভি ও মঞ্চ নাটকের দর্শকেরা তা দেখেনি আর ফরিদীর অসাধারণ, দুর্দান্ত যত অভিনয়ের কীর্তি আছে তা এই বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের দর্শকেরা দেখেছে। ফরিদীর অভিনয়ের সবটুকু প্রতিভা বাণিজ্যিক সিনেমার পরিচালকেরা আদায় করে নিতে পারতেন তাই তো এতো এতো তারকার ভিড়েও ফরিদী নিজের একটা আলাদা অবস্থান তৈরী করে নিতে পেরেছিলেন যা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ধরে রেখেছিলেন।


Leave a reply