Select Page

সিনেমা হলে পচে যাওয়া খিচুড়ি

সিনেমা হলে পচে যাওয়া খিচুড়ি

নাম : আই অ্যাম রাজ
ধরন : অ্যাকশন-রোম্যান্স ড্রামা
পরিচালক : এম আজাদ
প্রযোজনা : চৌধুরী এন্টারটেইনমেন্ট
কাস্ট : রাজ ইব্রাহিম (রাজ), মামিয়া (হাসি), সোমা, সাদেক বাচ্চু (রাজের বাবা), আমির সিরাজি (সিরাজি), ইলিয়াস কোবরা (কোবরা), ববি (হাসির মামা), গুলশান আরা (হাসির মামী), দরবেশ (মস্তান) প্রমুখ।
মুক্তি : ৪ জানুয়ারি, ২০১৯

নামকরণ :  প্রথমত, অন্য ৫-১০ জনের মতো আমারও নামটা বেশ আজিব লেগেছে। তবে পুরো ছবিটি দেখে বুঝলাম, নতুন নায়ককে সবার সামনে ভালোভাবে পরিচয় করানোর জন্যই ছবির এমন নাম রাখা হয়েছে; গল্প কিংবা থিমের সাথে এ ছবির নামের বিন্দুমাত্র মিল নেই। যদি কেউ মিল পান তবে তা আপনার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার, তাকে বাহবা দেব।

দ্বিতীয়ত, আইন অনুযায়ী প্রয়োজন ছাড়া ছবির টাইটেল ইংরেজিতে রাখা যাবে না। এইরকম একটা ব্যাপার নিয়ে দু’বছর আগে ‘মেন্টাল’ নামে একটি ছবি নিয়ে বেশ বড়সড় একটি ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছিল। প্রযোজক রোজার ঈদে ছবি মুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কিন্তু ছবিটি সেন্সর পার হতে পারছিল না শুধু ঐ একটি কারণে। পরবর্তীতে ছবির প্রযোজনা সংস্থা বাধ্য হয়ে ছবির নাম পরিবর্তন করে এবং ঈদে মুক্তি দেয়। এরপর একই বছর ‘ওয়ান ওয়ে’ নামে একটি ছবির ওপরও এমন নিষেধাজ্ঞা আসলে তারাও নাম পরিবর্তন করে সেন্সর ছাড়পত্র পায়।

তো, এখন সেই আইনটির কোনো খোঁজখবর পেলাম না.. গর্তে ঢুকে আছে মনে হয়…

কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ : ছবিটি পুরোপুরি জেরক্স কপি না, তবে আমি খানিকটা কন্নড় মুভি ‘সন্থু স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড’ (২০১৬) এর সাথে মিল পেয়েছি। অনেকটা ইন্সপায়ার্ড বলা যায়। এছাড়া ছবির গল্প খুবই সাধারণ, এমন গল্প এর আগে আমরা প্রায় শ’খানেক বাংলা ছবিতে দেখেছি।

রাজ নামে এক কলেজ পড়ুয়া ছেলে একটি মেয়ে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলে, কিন্তু কোনভাবেই সেই মেয়েকে ঠিকঠাকভাবে বলে উঠতে পারে না; কিন্তু পাড়ায় বা অলিগলিতে বেশ ভালো ভাইগিরি দেখাতে পারে।

অন্যদিকে রাজের এক ক্লাসমেট তার ড্যাসিং লুকের ওপর ক্রাশ খায়। সেও রাজকে মুখ ফুটে বলতে পারেনা। আরেকদিকে রয়েছে রাজের জর্জ বাবার সাথে কোবরা এবং সিরাজি পুরোনো শত্রুতা। পরবর্তীতে সেই শত্রুতা কীভাবে সৃষ্টি হলো, রাজ কীভাবে মাঝে জড়িয়ে গেলো সেটাই দেখা যায়।

গল্পের পাশাপাশি চিত্রনাট্যের কথাও একবারে বলে ফেললাম। বাকি রইলো সংলাপ। এমনিতেও কমার্শিয়াল মুভিতে বেশিরভাগ সময়ই আগাগোড়াহীন ডায়ালগ শোনা যায়, পাঞ্চলাইন থাকে এ বিভাগের বড় শক্তি। তবে মনে রাখার মতো কোনো পাঞ্চলাইন এছবিতে খুজেঁ পাইনি।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ১০

পরিচালনা ও অভিনয় : সঠিক জানি না এটা পরিচালকের প্রথম ছবি কিনা… তবে যদি তাই হয় তবে বলবো উনার বড়পর্দার ভবিষ্যৎ বড়ই অন্ধকার! এমন মহাদুর্বল ডিরেকশন দিয়ে উনি মোটেও বেশিদূর এগোতে পারবেন না, প্রযোজকদের পয়সার শ্রাদ্ধ করবেন।

ছবির নায়ক রাজ ইব্রাহিমের প্রথম ছবি এটি। তার একটা জিনিসই আমার মোটামুটি লেগেছে। ভালো কিছু ফাইট সিন পেয়েছি তার কাছ থেকে; যদিও তার অন্যান্য বিষয়গুলো (নাচ, অভিনয়, এক্সপ্রেশন, অ্যাটিচিউচ) এতোটাই দূর্বল, যে বাকি থাকা ভালো জিনিসগুলো আঁতশি কাচ দিয়ে খুজঁতে হয়। বিশেষ করে নাচ এবং অভিনয়ে একদম বিরক্তিকর, অসহ্য!

নায়িকা দুজনের কথা আর না-ই বা বলি। অভিনয়, গ্ল্যামার, চেহারা, ফিটনেস কোনোকিছুর বালাই নাই। এদেরকে কখনো লিড রোলে দেখিনি, এরাও সম্ভবত নতুন।

সাদেক বাচ্চু, ইলিয়াস কোবরা, আমির সিরাজি, ববিসহ বেশকিছু সিনিয়র অভিনেতারা আছেন ছবিতে; এদের জন্যেই ছবিটা পুরো দেখার সাহস পেয়েছি। তারা সবাই তাদের গতানুগতিক অভিনয় দেখিয়েছেন, আহামরি তেমন কিছু পাইনি।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ১০

কারিগরি : সিনেমাটোগ্রাফিতে যিনি ছিলেন তার নামটি আমি ভুলে গেছি; তবে তার প্রতি আমার বিশেষ পরামর্শ হলো… ছবিতে ১০/১৫ মিনিট পরপর মেয়েদের বিরক্তিকর ফিটনেস দেখানো বাদ দিন। ওসব দেখে ১৫ বছর আগের দর্শকরা মজা পেতো, এখন দেশে থ্রিজির পাশাপাশি ফোরজিও এসে গেছে। এখন সবার হাতেহাতে ইন্টারনেট, মূল্যও সাশ্রয়ী। সুতরাং, ওসব ব্যাকডেটেড আইডিয়া দিয়ে কারো শিহরণ উঠবে না, নতুন কিছু করুন।

লো-বাজেট ছবির এডিটিং যেমন হয়, এছবির এডিটিং ও ঠিক তেমনই পেয়েছি। ভয়াবহ রকমের অ্যানিমেশন! গ্রামেগঞ্জের বিয়েবাড়ির এডিটিং-এর মতো। কালার গ্রেডিং এবং ছবির লোকেশনও ঐ একই মানের।

তবে ছবির সিনেমাটোগ্রাফার যতই ব্যাকডেটেড হোক, ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক যে ইউটিউব থেকেই ডাউনলোড করে বসানো হয়ে তা আমি ৯৯% শিওর! এক এক করে দেশী “মুসাফির”, “ধ্যাত তেরি কি”, “মেন্টাল”, “সম্রাট”, “বসগিরি”, “রংবাজ”, “অহংকার”, হতে শুরু করে বিদেশী “থেরি”, কাত্থি, “থুপাক্কি”, “মাসু এঙ্গিরা মাসিলামানি”, “ভাইরাবা” সহ মনে না থাকা অসংখ্য ছবির বিজিএম বসানো হয়েছে।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ০

বিনোদন : ছবিতে গান রয়েছে ৬টি; এর একটি গানও আমার ভালোলাগেনি। ছবির টাইটেল ট্র্যাকটা একটু ভালো, তবে গানের কোরিওগ্রাফি জঘন্য। এদিক থেকে একটু হতাশ হয়েছি; যেখানে শাহরিয়ার রাফাত, শরীফ আহমেদ এবং রাজীবরা সঙ্গীতায়োজন করেছেন সেখানে এতোটা জঘন্য মিউজিক আমি আশা করিনি। রাফাতের সঙ্গৗতায়োজন সর্বশেষ “ক্যাপ্টেন খান” ছবিতে পেয়েছিলাম, সেখানে “টাইটেল ট্র্যাক” এবং “কেন এমন করে” গানদুইটি বেশ ভালোই লেগেছিল।

হাতেগোনা দুয়েকটা এ্যাকশন ছাড়া এছবিটি বিনোদনের চাহিদা পুরণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ! এছবি আমায় বিন্দুমাত্র বিনোদিত করেনি। সিরিয়াস মোমেন্টে হাসিয়েছে, রোম্যান্টিক মোমেন্টে কষ্ট দিয়েছে, আর কমেডি মোমেন্টে পীড়া দিয়েছে।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ০

ব্যক্তিগত : বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান বেশ কয়েকমাস আগে নতুনদের নিয়ে একটা কথা বলেছিলেন, যারা এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসতে চাচ্ছে তারা যেন একটু পড়াশোনা করে তারপর আসেন; একটু শিখে তারপর আসেন। এ ছবির সিনিয়র অভিনেতাদের বাদ দিলে বাকি যারা আছেন তাদের দুরবস্থা দেখে আমার সেই উক্তিটাই মনে পড়লো।

ছবির পোস্টারগুলো কাকরাইল পাড়ার অন্যান্য পোস্টারের তুলনায় একটু ভিন্নরকম ছিল। সহজ ভাষায় বললে, পোস্টারে মাথা কম তাই ভিন্নতা পেয়েছি। এছাড়া এছবি আর কোনো দিক দিয়েই মার্ক পাওয়ার যোগ্য না।

রেটিং :  ০.২৫/১০

ছবিটি কেন দেখবেন : আমি এ ছবিটি দেখার তেমন কোনো কারণ দেখছি না। এমন ছবি দিয়ে ইন্ডাস্ট্রির উন্নতি হবে না কখনোই; পূর্বেও এমন ছবি অনেক হয়েছে। তাই এছবির জন্য জীবনের আড়াই ঘণ্টা সময় নষ্ট করবেন না; সময় অনেক মূল্যবান।


মন্তব্য করুন