Select Page

সিরাজুল ইসলাম তৈরি করেন দুটি সিনেমা, ২৫টির মতো প্রামাণ্যচিত্র

সিরাজুল ইসলাম তৈরি করেন দুটি সিনেমা, ২৫টির মতো প্রামাণ্যচিত্র

সিনেমা ও টেলিভিশনে এক সময় পরিচিত মুখ ছিলেন সিরাজুল ইসলাম। তিনি যে একজন নির্মাতা সে কথা অনেকেরই অজানা। এক সময় করেছিলেন সাংবাদিকতাও। তার মৃত্যুবার্ষিকীতে সেই কথা ওঠে এলো সাংবাদিক আজাদ আবুল কাশেমের লেখায়।

সিরাজুল ইসলাম ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার জন্ম ১৯৩৮ সালের ১৭ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলায়। তার বাবা আবদুল হক, একজন সরকারি চাকুরিজীবি ছিলেন। মা আরিফান্নেসা। ছোট্টবেলা থেকেই তিনি কবিতা লিখতেন, পাশাপাশি অভিনয়েও ছিল দারুন আগ্রহ। তাঁর স্কুলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি ও নাটক মঞ্চস্থ হতো। সিরাজুল ইসলাম, নাটকে অভিনয় করতেন আর কবিতা আবৃত্তি করাও ছিল তাঁর অত্যাবশ্যকীয়।

তারা ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পর স্বপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসে কিশোরী ‘লাল জুবিলী স্কুলে’ ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি মেট্রিক পাস করেন। এরপর কায়দে আজম কলেজ (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী কলেজ)-এ পড়াশোনা করেন। তিনি পেশায় একজন প্রকৌশলী (ডিপ্লোমা) ছিলেন।

ঢাকায় তিনি প্রথম মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেন। মঞ্চনাটক করতে গিয়ে পরিচয় হয় বেতারশিল্পী রণেন কুশারীর সাথে। তিনিই সিরাজুল ইসলামকে বেতারে অভিনয় করার সুযোগ করে দেন। বেতারে ‘রূপালি চাঁদ’ নাটকে একজন স্কুল শিক্ষকের চরিত্রে প্রথম অভিনয় করেন ।

এরপর নিয়মিত মঞ্চে ও বেতারে অভিনয় করতে থাকেন। ‘বৃষ্টি’ নামে একটি বেতার নাটকের প্রযোজনার মাধ্যমে তিনি প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
১৯৬৩ সালে, চিত্রপরিচালক মহিউদ্দিনের পরিচালনায় ‘রাজা এলো শহরে’ (১৯৬৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত) ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে সিরাজুল ইসলাম প্রথমে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। কিন্তু তার অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবি, চলচ্চিত্রকার সালাহউদ্দিন পরিচালিত ‘ধারাপাত’, যা মুক্তিপায় ১৯৬৩ সালে।

তিনি প্রায় তিনশতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে- নাচঘর, দুইদিগন্ত, শীতবিকেল, অনেক দিনের চেনা, বন্ধন, ভাইয়া, রূপবান , উজালা, ১৩নং ফেকুওস্তাগার লেন, কাগজের নৌকা, হীরামন, উলঝন, নয়নতারা, আলীবাবা, চাওয়া পাওয়া, গাজীকালু চম্পাবতী, জিনা ভি মুশকিল, কাঞ্চনমালা, বালা, নিশি হলো ভোর, ভাগ্যচক্র, সপ্তডিঙ্গা, জাহা বাজে শাহ নাই, মোমের আলো, সুয়োরাণী দুয়োরাণী, ময়নামতি, অবাঞ্চিত, হীরামন, অপরাজেয়, আলোর পিপাসা, আলোমতি, মায়ার সংসার, ভানুমতী, যে আগুনে পূড়ি, দর্পচূর্ণ, মিশরকুমারী, বিনিময়, মধুমিলন, ছদ্মবেশী, অধিকার, স্বরলিপি, নতুন প্রভাত, ঢেউয়ের পর ঢেউ, সমাধান, নিজেরে হারায়ে খুঁজি, ইয়ে করে বিয়ে, কে তুমি, তিতাস একটি নদীর নাম, দুরন্ত দুর্বার, সূর্যকন্যা, ডুমুরের ফুল, দিন যায় কথা থাকে, ছোট মা, নতুন বউ, পুরস্কার, চন্দ্রনাথ, সোনালী আকাশ, রাজামিস্ত্রী, লাল বেনারশী, রাঙা ভাবী, অবুঝ হৃদয়, জন্মদাতা, অজান্তে, আনন্দ অশ্রু, শ্রবণ মেঘের দিন অন্যতম ।

১৯৮৪ সালে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘চন্দ্রনাথ’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য পার্শ্বচরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন সিরাজুল ইসলাম।

তিনি দু’টি ছবি পরিচালনাও করেন। তাঁর পরিচালিত ‘জননী’ চলচ্চিত্রটি মুক্তিপায় ১৯৭৭ সালে, আর ‘সোনার হরিণ’ মুক্তিপায় ১৯৭৯ সালে । এছাড়াও তিনি ২৫টির মতো প্রামান্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র বিষয়ক গবেষক মীর শামসুল আলম বাবু জানান, সিরাজুল ইসলাম সরকারি চাকরির সুত্রে প্রামাণ্যচিত্র বানিয়েছিলেন। উনি সরকারের ‘চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর’ (ডিএফপি)-তে চাকরি করতেন।

এক সময় করাচির ‘ইস্টার্ন ফিল্মস’ পত্রিকায় ঢাকাস্থ চলচ্চিত্র প্রতিবেদক হিসেবেও কাজ করেছেন সিরাজুল ইসলাম।

চলচ্চিত্র ছাড়াও তিনি একাধারে মঞ্চ-বেতার এবং টেলিভিশনের জনপ্রিয় নাট্যশিল্পী ছিলেন। অসংখ্য টিভি নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। নাট্যশিল্পী হিসেবেও পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। অভিনয় গুণে হয়েছেন প্রসংশিত ।

ব্যক্তিজীবনে সিরাজুল ইসলাম ১৯৬৫ সালে, অভিনেতা আবুল হায়াতের ফুফাতো বোন সৈয়দা মারুফা ইসলামকে বিয়ে করেন। তাদের এক ছেলে মোবাশ্বেরুল ইসলাম শাহী এবং দুই মেয়ে ফাহমিদা ইসলাম ও নাহিদা ইসলাম।


৩ টি মন্তব্য

  1. উনি প্রামাণ্যচিত্র বানিয়েছিলেন সরকারী চাকুরীর সুত্রে। উনি সরকারের ‘চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্ত্র’ (DFP) তে চাকুরী করতেন।

  2. উনি প্রামাণ্যচিত্র বানিয়েছিলেন সরকারী চাকুরীর সুত্রে। উনি সরকারের ‘চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর’ (DFP) তে চাকুরী করতেন।

    • অ্যাডমিন

      ধন্যবাদ বাবু ভাই। বিষয়টি উল্লেখ করে দিচ্ছি।

মন্তব্য করুন