Select Page

সীমিত বাজেটে দ্য গডফাদারের সফল অনুকরণ

সীমিত বাজেটে দ্য গডফাদারের সফল অনুকরণ

বারুদ (১৯৭৯); ধরন: ক্রাইম অ্যাকশন ড্রামা; পরিচালনা: দেওয়ান নজরুল; অভিনয়: সোহেল রানা, ওয়াসিম, শাবানা, আজিম, সুজাতা, জসিম, ববিতা, আদিল প্রমুখ; চিত্রগ্রহণ: অরুণ রায়; সম্পাদনা: ফজলে হক; আবহ সংগীত: আলম খান

বাংলা বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যে কয়জন চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক গল্প-নির্মাণে নতুনত্ব আনতে পেরেছেন, তাদের অন্যতম দেওয়ান নজরুল। তিনি পরিচিত ‘ডায়নামিক ডিরেক্টর’ নামে; যিনি একাধারে পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা ও গীতিকার। একসময় ষাট-সত্তর দশকের জনপ্রিয় পরিচালক ইবনে মিজানের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন দেওয়ান নজরুল। অতপর ১৯৭৬-৭৭ সালের দিকে তিনি আসলেন পরিচালনায়, নির্মাণ করেন ‘আসামী হাজির’, ‘দোস্ত দুশমন’-এর মতো ভিন্ন উপস্থাপনার চলচ্চিত্র। ‘বারুদ’ তারই পরিচালিত ক্রাইম-অ্যাকশন ঘরানার চলচ্চিত্র, মুক্তি পায় ১৯৭৯ সালে।

আমেরিকান কথাসাহিত্যিক মারিও পুজোর লেখা বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য গডফাদার’-এর ছায়া অবলম্বনে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে। নেয়া হয়েছে সেসময়কার জনপ্রিয় তারকাদের— সোহেল রানা, ওয়াসিম, শাবানা, ববিতা তো রয়েছেন; সাথে রয়েছেন আজিম, সুজাতা ও জসিম। জসিমের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জ্যাম্বস মুভিজ ছিল এ ছবির প্রযোজক ও পরিবেশক। এ ছাড়া তার জ্যাম্বস ফাইটিং গ্রুপ এ ছবির ফাইট ডিরেকশন দিয়েছে, জসিম নিজে একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এবং ওয়াসিমের সাথে ‘ওহ মাই ডার্লিং’ গানে নৃত্য পরিচালনা করেন।

‘দ্য গডফাদার’ অনুকরণে ‘বারুদ’ নির্মিত হলেও মূল উপন্যাস কিংবা উক্ত উপন্যাস অনুকরণে নির্মিত একই নামের চলচ্চিত্রটির সাথে শুধু বিষয়বস্তুর দিক থেকেই সাদৃশ্য পাওয়া যায়। গল্পের গঠন কিংবা চরিত্রগুলোর ধরন সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে নেওয়া হয়েছে। যেমন; এখানে যাকে গডফাদাররূপে দেখতে পাওয়া যায়, সেই ‘দাতা আকবর’ (আজিম)-এর ব্যাকস্টোরি দেখানো হয়। কীভাবে সে সাধারণ মানুষ থেকে অপরাধ জগতের বাদশা হয়ে গেল, সেই গল্প এখানে দেখতে পাওয়া যায়।

মূল গল্পে গডফাদারের পাঁচ সন্তান দেখতে পাওয়া গেলেও এখানে আকবরের মোট তিন সন্তান। বড় ছেলে ‘জনি’ (সোহেল রানা), যিনি ছোটবেলা থেকেই অত্যধিক সাহসী ও মারকুটে, বাবা আকবরকে তিনিই ছোটবেলা থেকে সাহস যুগিয়েছেন এবং বাবার সকল অবৈধ ব্যবসার দেখাশোনা তিনিই করেন। ছোট ছেলে ‘রনি’ (ওয়াসিম), যিনি বাবা-ভাইয়ের অপরাধ জগতের সাথে কানেক্টেড না, এমনকি তাদের অপরাধ দুনিয়ার রাজত্ব সম্পর্কে তার তেমন কোনো ধারণাও নেই। ছোটবেলায় তাকে পড়াশোনার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং তিনি সেখানেই বড় হয়েছেন। সবশেষে রয়েছেন আকবরের একমাত্র মেয়ে ‘নাজমা’ (ববিতা), যিনি অত্যন্ত শান্ত-শিষ্ট এবং নিতান্তই ভদ্র স্বভাবের। আকবরের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুজাতা, যিনি বরাবরই পিতা-পুত্রের এই অপরাধ জগতের রাস্তা বেছে নেয়ার বিপক্ষে। নাজমা বান্ধবীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন ‘রিতা’ (শাবানা), পেশায় একজন ডাক্তার; সুদর্শন, হ্যান্ডসাম রনির ভালোবাসা।

মূল উপন্যাসে গডফাদারের যে প্রতিদ্বন্দ্বীকে দেখতে পাওয়া যায়, সেই চরিত্রটি এখানে রূপদান করেছেন ‘মুরাদ’ (জসিম)। ‘বারুদ’ এ চরিত্রটিও পরিবর্তন করা হয়েছে, এখানে মুরাদকে শুরুর দিকে আকবরকে অপরাধ জগতে রাজ করতে সহায়তা করতে দেখা যায়, আকবরের ‘দাতা আকবর’ হয়ে ওঠার পেছনে মুরাদের অবদান থাকে সবচেয়ে বেশি। পরবর্তীতে নীতিগত দ্বন্দ্বের কারণে তারা একে-অন্যের শত্রু হয়ে যায় এবং মরণখেলায় মেতে ওঠে।

ফ্রান্সিস ডি কাপোলা পরিচালিত ‘দ্য গডফাদার’ থেকে ‘বারুদ’ বহুগুণে পিছিয়ে, কোনো সন্দেহ নেই। সেসময় এবং আজও কারিগরি দিক থেকে আমরা যথেষ্ট উন্নত হতে পারিনি, কখনো অর্থের অভাবে কিংবা কখনো দুরদর্শিতার অভাবে। তবে স্বল্পবাজেটের মধ্যেই এ ছবিতে কিছু ইউনিক স্টান্ট দেখতে পাওয়া যায়, যা যথেষ্ট সাহসী এবং একইসাথে বিপজ্জনক। সোহেল রানাকে ছবির একটি দৃশ্যে এক পা শূন্যে বেঁধে মারামারি করতে দেখা যায়, এই ড্যাশি হিরো সেসময় থেকেই বিশেষ দৃশ্যের জন্য বেশ সমাদৃত। এ ছাড়া জ্যাম্বস ফাইট গ্রুপেরও কিছু সাহসী অ্যাকশন স্টান্ট রয়েছে, চলন্ত বাইক থেকে বাইকারকে লাথি মেরে ফেলে দেয়া এ ছবির অন্যতম সেরা ফাইট সিকোয়েন্স।

সীমিত বাজেটের মধ্যে ‘বারুদ’ হলো ‘দ্য গডফাদার’-এর একটি ভালো অ্যাডাপ্টেশন, এ কথা বলাই যায়। পরিচালক দেওয়ান নজরুল নিজেও ‘বারুদ’কে তার ক্যারিয়ারের সেরা চলচ্চিত্র মনে করে থাকেন।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

চলচ্চিত্র বিষয়ক ব্লগার ও ইউটিউবার

মন্তব্য করুন