সেকেলে মনে হবে না ‘কিল হিম’
কিল হিম; চিত্রনাট্য ও পরিচালনা : এমডি ইকবাল; অভিনয়ে : অনন্ত জলিল, বর্ষা, মিশা সওদাগর, রুবেল প্রমুখ; প্রযোজনা : সুনান মুভিজ; মুক্তি ২২ এপ্রিল ২০২৩/ ঈদুল ফিতর
১৬ এপ্রিল, ২০১০ মুক্তি পেয়েছিল অনন্ত জলিল-বর্ষা জুটির প্রথম ছবি ‘খোঁজ—দ্য সার্চ’। এবার এপ্রিলেই দেখেছি তাদের নতুন ছবি ‘কিল হিম’। মাঝে দীর্ঘ ১৩ বছর কেটে গেছে। ‘কিল হিম’ অনন্ত জলিলের ৮ এবং বর্ষার ৭ নম্বর ছবি। নানা দিক দিয়ে ‘কিল হিম’ ঈদের অন্য ছবি থেকে আলাদা। এবারই প্রথম নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের বাইরের ছবি করলেন অনন্ত। প্রযোজক থেকে মোহাম্মদ ইকবাল পরিচালক হলেন। গত বছর ১৬ ডিসেম্বর শুটিং শুরু হয়েছিল, মুক্তি পেল ২২ এপ্রিল। মাত্র চার মাসে এর আগে অনন্ত-বর্ষার কোনো ছবি নির্মিত হয়নি। সে কারণে ছবিটি দেখার বাড়তি আগ্রহ ছিল।
শুনেছিলাম বলিউডের ‘প্রিন্স’, দক্ষিণ ভারতের ‘স্মার্ট শংকর’ বা হলিউডের ‘হার্ডওয়ার্ড’-এর নকল ‘কিল হিম’। পুরো ছবি দেখার পর বুঝতে পারি, ছবিগুলোর নির্যাস নিয়ে তৈরি ‘কিল হিম’, শতভাগ ‘নকল’ নয়। বরাবরই অনন্ত অভিনীত ছবির কারিগরি দিক আকর্ষণীয়, কিন্তু স্ক্রিপ্ট থাকে নড়বড়ে। সে তুলনায় ‘কিল হিম’-এ একটা গল্প পাওয়া গেছে। চিত্রনাট্য আরো টান টান উত্তেজনায় ভরপুর রাখা যেত। ক্ষুরধার সংলাপ থাকতে পারত, পাইনি। বেশ কিছু চরিত্রের পরিণতি দেখানো যেত। ছবি শেষে ‘টু বি কন্টিনিউড’ দেখে সান্ত্বনা পেলাম, হয়তো ‘কিল হার’ বা ‘কিল হিম টু’ মনের অতৃপ্ত চাওয়া পূরণ করবে।
এ জুটির আগের ছবি ‘দিন—দ্য ডে’র তুলনায় প্রায় সব বিভাগেই এগিয়ে ‘কিল হিম’। প্রথম ছবিতে সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন মোহাম্মদ ইকবাল। সেকেলে মনে হবে না এই ছবি। লোকেশন বৈচিত্র্য, পরিমিত ড্রোন শট, আকর্ষণীয় ক্লোজ শট—সব মিলিয়ে এ সময়ের আধুনিক ছবিই মনে হবে। চিত্রনাট্য, সম্পাদনা, অ্যাকশন, নৃত্য পরিচালনায় আরেকটু সময় দেওয়া হলে হয়তো দর্শক আরো ভালো একটি ভার্সন দেখতে পেত।
গল্প এগিয়েছে নন-লিনিয়ার ফরম্যাটে। যুক্তির জায়গায় যথেষ্ট ফাঁক পুরো গল্পে। নির্মল বিনোদন পাওয়ার নিমিত্তে সেই ‘ফাঁক’ নির্মাতার ‘সিনেমাটিক লিবার্টি’ ভেবে ভুলতে চেয়েছি। বর্ষার এন্ট্রির আগে ছবির প্রথম ২০-৩০ মিনিটে নতুন এক নায়িকার আবির্ভাব। নাম মিষ্টি জাহান। অনন্তর ছবিতে বর্ষা থাকার পরও অন্য নায়িকার উপস্থিতি আনন্দ দিয়েছে। মিষ্টির সাবলীল অভিনয়ও বেশ ভালো। তার স্পষ্ট বাচনভঙ্গি ও ভয়েস মড্যুলেশন কানকে আরাম দিয়েছে। আগের তুলনায় ‘কিল হিম’-এ বেশ এগিয়ে বর্ষা। বিশেষ করে তার প্রথম সিকোয়েন্স ও এন্ট্রি দৃশ্য মন কেড়েছে। ল্যাবে সিনেমাটিক কায়দায় তার হেঁটে আসার দৃশ্যটিও সুন্দর।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিহেভেরিয়াল সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা শেষে পারিবারিক এক মিশন নিয়ে দেশে ফেরে জিনিয়া। এই চরিত্রে বর্ষা নায়িকা হতে চেয়েছে কম, অভিনেত্রী হতে চেয়েছে বেশি। বর্ষার ডাবিং অন্য কেউ করেছে, এটিকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। অনন্ত জলিলের ক্ষেত্রেও এমনটা হলে ষোলোকলা আনন্দ পেতাম। এখানে অনন্তর অভিনয়, লুক আগের তুলনায় ভালো, তবে উচ্চারণের ঘাটতি রয়েই গেছে। সাই-ফাই অ্যাকশন ছবির বেশির ভাগ অ্যাকশন দৃশ্য হতাশ করেছে। অযাচিত প্রপস গল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
তবে রুবেলের এন্ট্রি ও অ্যাকশন দৃশ্য বেশ উপভোগ্য। ষাটোর্ধ্ব এ নায়ক এখনো ভীষণ ক্যারিজমেটিক। রুবেলের ‘টাইগার’ চরিত্রের ব্যাপ্তি আরেকটু বেশি হলে, ছবির শেষ ৩০ মিনিট টাইগার বনাম প্রিন্স হলে দারুণ হতো। মিশা সওদাগরের ‘ফাহাদ’ চরিত্রটিও ঠিকঠাক লেখা হয়নি। এই সুঅভিনেতাকে এখনো একই ধরনের চরিত্র ও সংলাপ দেওয়া হচ্ছে, যে কারণে নতুন চরিত্র দাঁড়াচ্ছে না। মিশা সওদাগর অভিনীত গানটি গল্পের ধারাবাহিকতা নষ্ট করেছে।
‘আমজনতার জন্য’ নির্মিত হলেও কথা-সুর-গায়কি তারা উপভোগ করেছে বলে মনে হয়নি। একই কথা প্রযোজ্য ‘যখনই চাঁদের আলো’ নিয়ে। গানটির গায়কি ও সুর হতাশ করেছে। ‘পাসওয়ার্ড’ ও বলিউডের ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ ছবির গানের সুরের অনেকটাই কাছাকাছি। ‘একটু একটু তোর প্রেমে’ গানটির সুর-গায়কিতেও নতুনত্ব নেই। মনে হয়েছে গানে মনোযোগ দেননি নির্মাতা। তবে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক শ্রুতিমধুর। অনন্তর দৃশ্যগুলোতে সিগনেচার বিজিএম আনন্দ দিয়েছে।
*লেখাটি কালের কণ্ঠে পূর্ব প্রকাশিত