Select Page

সোহানুর রহমান সোহানও চলে গেলেন স্ত্রীর মৃত্যুর পরদিন

সোহানুর রহমান সোহানও চলে গেলেন স্ত্রীর মৃত্যুর পরদিন

স্ত্রী প্রিয়ার মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আজ বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে উত্তরার বাসায় ঘুমিয়ে ছিলেন সোহান, অনেক ডাকাডাকি করেও তার সাড়া পাননি গৃহকর্মী। পরে অচেতন অবস্থায় সন্ধ্যা ৬টা ৪৪ মিনিটে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে।

হাসপাতালে নেওয়ার আগে ঘুমের মধ্যেই সোহানের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা তানভীর ইসলাম। সোহানের বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।

তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। তবে সোহানের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে পারেননি চিকিৎসকেরা। মৃত্যুকালে তিনি দুই মেয়েকে রেখে গেছেন।

সোহানের মরদেহ উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে হিমঘরে রাখা হয়েছে। সোহানের স্ত্রী প্রিয়া রহমানকে টাঙ্গাইলে শ্বশুরবাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে। স্ত্রীর কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করার ইচ্ছাপোষণ করে গেছেন সোহান।

সোহানের মৃত্যুর খবরে ঢাকাই সিনেমার পরিচালক, শিল্পীরা হাসপাতালে ভিড় করেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাবেক সভাপতি ছিলেন তিনি। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ, মহাসচিব শাহীন সুমন, প্রযোজক খোরশেদ আলমসহ আরও অনেকে শোক জানিয়েছেন।

প্রধান নির্মাতা হিসেবে সোহানুর রহমান সোহান আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৮৮ সালে। তাঁর পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’। তবে তিনি সাফল্য পান ১৯৯৩ সালে। সিনেমার নাম ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। এই সিনেমার মাধ্যমে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন এবং তারকাখ্যাতি পান প্রয়াত নায়ক সালমান শাহ, নায়িকা মৌসুমী ও কণ্ঠশিল্পী আগুন।

সোহানের ‘অনন্ত ভালোবাসা’ সিনেমার মাধ্যমেই আত্মপ্রকাশ করেছিলেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। বর্তমানে যিনি ঢালিউডের শীর্ষ তারকা।

মৃত্যুর খবর শুনে শাকিব খান বলেন, ‘আমার এই শাকিব খান নামটি সোহান ভাইয়েরই দেয়া। সত্যি কথা বলতে, তার সম্পর্কে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই তো কয়েকদিন আগেও সোহান ভাইয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা হচ্ছিল। তিনি বলছিলেন, অসুস্থ। উন্নত চিকিৎসা নিতে জাপান যাবেন। কিন্তু আজ সন্ধ্যায় হঠাৎ করে খবরটি পেয়ে আঁতকে উঠলাম। জানলাম, ভাবির মৃত্যুর একদিন পরেই সোহান ভাইও পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন। আহারে জীবন।  ভাবি ও সোহান ভাইকে মহান আল্লাহ পরপারে শান্তিতে রাখুন। এটাই কামনা করছি।’

১৯৬০ সালের ১৫ অক্টোবর বগুড়ার ফুলবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করে সোহান। বগুড়া ও জয়পুরহাটে স্কুল ও কলেজজীবন শেষে ঢাকায় আসেন তিনি। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী কলেজে।

তিনি শিবলি সাদিকের সহকারী হিসেবে চলচ্চিত্রজীবন শুরু করেন ৭০ দশকের শেষের দিকে। পরবর্তীতে তিনি শহীদুল হক খানের ‘কলমিলতা’ (১৯৮১), এজে মিন্টুর ‘অশান্তি’ (১৯৮৬) ও শিবলি সাদিকের ‘ভেজা চোখ’ (১৯৮৮) চলচ্চিত্রে সহকারী হিসেবে কাজ করেন। একক ও প্রধান পরিচালক হিসেবে তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’ মুক্তি পায় ১৯৮৮ সালে। তিনি মূলত প্রেম-বিরহ ঘরানার মূলধারার চলচ্চিত্র পরিচালনায় পারঙ্গম ছিলেন। তার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ (১৯৯৩), ‘স্বজন’ (১৯৯৬), ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’, ‘অনন্ত ভালবাসা’ (১৯৯৯) প্রভৃতি। তার নির্মিত সিনেমার সংখ্যা ২৫টি।

চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও ব্যক্তিগত উদ্যোগেও চলচ্চিত্র নির্মাণ ও অভিনয়ের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন।


মন্তব্য করুন