![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
সৎভাই/ তিন লাখ টাকার সিনেমা আয় করেছিল তিন কোটি টাকা
রাজ্জাক পরিচালিত ও অভিনীত ‘সৎভাই’ মুক্তি পায় ১৯৮৫ সালে। সিনেমাটির গল্প লেখা হয়েছিল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বৈকুণ্ঠের উইল’ অবলম্বনে। পরিচালনা ও প্রযোজনায় আসার এক পর্যায়ে পরপর ব্যর্থতার মুখ দেখেণ এ অভিনেতা। তখন স্বস্তি নিয়ে আসে এ ছবি। ‘সৎভাই’-এর চিত্রনাট্য করেন গীতিকার হিসেবে বেশি পরিচিত মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, যদিও অনেক হিট সিনেমার গল্প তার হাতেই লেখা। তিনি জানান, রাজ্জাক ও আলীরাজ দুই ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করা সিনেমাটির বাজেট ছিল ৩ লাখ, আর আয় করে ৩ কোটি টাকা।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/05/satbhai_bmdb_image.jpg?resize=800%2C455&ssl=1)
এ বিষয়ে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি তখন বাংলামোটরে থাকি। বাংলামোটরে মেইন রাস্তা থেকে নেমে একটা সরু রাস্তা আছে। রিকশা চলে, কিন্তু গাড়ি ঢুকবে না। হঠাৎ দেখি রাজ্জাক সাহেবের ড্রাইভার বাসায় এসেছে দৌড়াতে দৌড়াতে। আমাকে বলছে, ‘স্যার সর্বনাশ হয়ে গেছে। আপনি শিগগির আসেন। হিরো এসেছে, কিন্তু নামতে পারছে না’।
মানে পুরো এলাকা ভেঙে পড়েছে রাজ্জাক সাহেবকে দেখে। আমি জাস্ট শার্ট-প্যান্ট পরে বেরিয়ে এসেছি। কোনোরকমে লোকজন সরিয়ে, রিকোয়েস্ট করে গাড়িতে উঠে বসলাম। বসার পরে উনি আমাকে ধরলেন। বললেন, ‘অভিনয় করে যা আনছি, প্রোডাকশনে এসে সব ডুবে যাচ্ছে। সেই রংবাজ ও বেঈমান-এর পর আর ছবি করে তেমন ব্যবসাসফল হচ্ছে না। রাজলক্ষ্মী প্রডাকশন চালানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।’
আমি বললাম, আপনার ইমিডিয়েট সুবিধা হচ্ছে, সাহিত্যভিত্তিক গল্পগুলোকে কমার্শিয়াল করে ক্যারেক্টারগুলোর নাম হিন্দু থেকে মুসলমান করে ছবি বানাতে পারেন। তখন তিনি বললেন, ‘আপনি লিখেন’। তারপর লেখা আরম্ভ করলাম। বাংলামোটরে তখন জহুরা মার্কেট ছিল। একটা রুম ছিল প্রযোজক মজনু সাহেবের। তার অনেক ছবি করেছি, হিট ছিল সব। মজনু সাহেবের রুমে বসে আমি লিখলাম। দুইবার, তিনবার লিখলাম। তারপর লিখে আমি ফাইনাল করলাম। উনার কাছে নিয়ে গিয়ে শোনালাম। এটার নাম দিলাম ‘সৎভাই’। ১৯৮৫ সালের কথা। ৩ লাখ টাকার ছবি, ৩ কোটি টাকা ব্যবসা করেছিল ওই সময়। ছবিটি করেছি ‘বৈকুণ্ঠের উইল’ থেকে।
এরপর তার জন্য লিখলাম ‘বদনাম’। এটাও সুপার-ডুপার হিট। কিন্তু তার সঙ্গে আমার সফলতা বেশি হলেও কাজ করেছি কম।”
‘সৎভাই’-এর নায়িকা চরিত্রে ছিলেন নূতন ও দোয়েল। আরো অভিনয় করেন এটিএম শামসুজ্জামান, মিনু রহমান প্রমুখ। উল্লেখ্য যে ১৯৯৭ সালে ‘সন্তান যখন শত্রু’ নামে সিনেমাটি আবারো পুনর্নির্মাণ করেন রাজ্জাক। তখন নায়ক ছিলেন বাপ্পারাজ ও ফেরদৌস। এ নামেই পরে কলকাতায়ও নির্মাণ, এতেও ছিলেন বাপ্পারাজ।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/05/mohammed_rofiquzzaman_bmdb_image.jpg?resize=700%2C400&ssl=1)
মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
এদিকে সিনেমার চিত্রনাট্য লেখা প্রসঙ্গে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান বলেন, “সিনেমার কাজ তারও অনেক আগেই শুরু করেছি। সাইফুল আজম কাশেম এবং আলী হোসেন আমার বড় ভাইয়ের কাছে গেছেন। বললেন, ‘আপনি এত কিছু করছেন, আমাদের জন্য একটা সিনেমার স্ক্রিপ্ট করে দেন’। উনি বলে দিলেন, ‘আমি এসব স্ক্রিপ্ট করতে পারবো না। আমার এক ছোট ভাই আছে। ও নাটক লেখে, ওর কাছে যান। ও করতে পারবে’।
পরে তারা আমার কাছে এলো। আসার পরে আমি টাইম নিলাম। বললাম, আমাকে তিন মাস সময় দিতে হবে। এটা হলো ১৯৭৫ সালের ঘটনা। আমি স্ক্রিপ্ট লিখবো, তার আগে এ সম্পর্কে আমাকে জানতে হবে। মঞ্চ আর রেডিওর সঙ্গে তো সিনেমার পার্থক্য আছে। সেটা জানার জন্য অনেক বই কিনেছি। ফিল্ম ডিরেকশন, রিলেশন বিটুইন রাইটার অ্যান্ড ফিল্ম ডিরেক্টর, এডিটিং এবং ফটোগ্রাফির ওপর প্রচুর বই আনিয়েছি। সব পড়তে শুরু করলাম।
এরমধ্যে ওরা আমাকে এক পৃষ্ঠার একটা গল্প দিলো, একটি কাগজের এপিঠ-ওপিঠ। আমি তো গল্প পড়েই টের পেলাম এটা রবীন্দ্রনাথের ‘নৌকাডুবি’ থেকে চুরি। মানে ‘নৌকাডুবি’র বদলে তারা ট্রেন অ্যাক্সিডেন্ট করিয়েছে! বুঝেও বললাম, ঠিক আছে আমি করতে পারবো। ওই প্রথম স্ক্রিপ্ট করলাম। ওই সিনেমার নাম ছিল ‘সোহাগ’। ওটাতে আমি কোনও গান লিখিনি। ওটাতে বড় ভাইকে দিয়ে গান লিখিয়েছে ওরা।”
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/05/satbhai2_bmdb_image.jpg?resize=775%2C501&ssl=1)
মজার বিষয় হলো মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান চিত্রনাট্য করলেও শুরুতে রেডিও-টিভির জন্যই শুধু গান লিখতেন। কারণ হিসেবে বলেন, ‘তখনও সিনেমায় গান লেখা শুরু করিনি। তার কারণ হচ্ছে, সিনেমায় তখন গান নষ্ট হচ্ছিল। অশ্লীল কথা, অশ্লীল ভাব চলে আসছিল। আমি ভাই নতুন মানুষ। আমাকে ধরে কী দিয়ে কী লিখিয়ে নেবে, মুখের ওপর রিজেক্ট করতে পারবো না। আমি বিপদে পড়ে যাবো। ওই সময়টাতে গান নষ্ট হওয়া শুরু হয়েছে। সিনেমার গানের যে ক্লাস ছিল, সেখান থেকে নামছিল তখন। এসব ভেবে সিনেমার গানের প্রতি আগ্রহ ছিল না।‘
চিত্রনাট্য প্রসঙ্গে বলেন, “তারপর স্ক্রিপ্ট করলাম ‘ঘর সংসার’, সেটাও সুপার-ডুপার হিট। এরপর হঠাৎ সত্য সাহা ধরলেন। এই প্রথম আমি মনের মতো স্ক্রিপ্ট লেখার সুযোগ পেলাম। উনি মিউজিক ডিরেক্টর হলেও ভালো প্রযোজক ছিলেন।“
মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান বলেন, “এরমধ্যেই নূর হোসেন বলাইয়ের একটা ছবির জন্য সুরকার খোন্দকার নূরুল আলম আমাকে গান লিখতে বললেন। বললাম, আমি তো গান লিখবো না। উনি বললেন, ‘আমি তো আছি এখানে। আমাকে ভরসা পান না?’ তখন বললাম, ঠিক আছে। খোন্দকার ভাই না থাকলে আমি জীবনেও ছবিতে গান লিখতাম না। শুরুটাই হয়তো হতো না। এই ছবিতে আমার গান লেখা শুরু হলো। ছবিটার নাম ছিল ‘জবাব’। কিন্তু ছবিটি আর রিলিজ হয়নি।‘
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/05/Capture.png?resize=776%2C574&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/05/2.png?resize=772%2C572&ssl=1)
সত্য ঘটনা অবলম্বনে বিখ্যাত ‘ছুটির ঘণ্টা’র চিত্রনাট্যও মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের লেখা। এ বিষয়ে বলেন, ‘এই ঘটনা জানার জন্য আমরা ঘুরলাম। ঘুরতে ঘুরতে প্রথম গেলাম সাভারে। সাভার থেকে শুনলাম এটা এখানে না, ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে। ওখানেও কোনও স্কুলে এটা ঘটেনি। এই শুনতে শুনতে শুনলাম, এটা চট্টগ্রামে। গেলাম সেখানে। চট্টগ্রামে সত্য দার বাড়ি। পৌঁছালাম, কিন্তু সেখানেও পেলাম না এমন কোনও ঘটনা। কেউ একজন বললো, এরকম একটা ঘটনা তো রাঙামাটিতে ঘটেছিল। গেলাম রাঙামাটিতে। সেখানে গিয়ে যে গেস্ট হাউজে ছিলাম, সেটা এখন আর্মির কন্ট্রোলে। সেখানে এখন পাবলিক থাকতে পারে না। তখন ওখানে সাধারণ মানুষ থাকতে পারতো। সেখানে উঠলাম। ওখানেও এমন কিছু হয়নি! কিন্তু ওটার পাশে একটা স্কুল ছিল। সেখানে গিয়ে দেখলাম, সত্য দা’কে বললাম, ইটস বেস্ট প্লেস টু শুট। লোকেশন দেখে আমার গল্প এসে গেছে। পুরো চিত্রনাট্য-সংলাপ তৈরি হলো ওখানে। ওখানে বসে আমরা স্ক্রিপ্ট করলাম। আজিজুর রহমান সাহেব ডিরেক্টর ছিলেন, উনি যাননি। উনার অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলেন মতিন রহমান। আমরা তাকে মতি বলে ডাকতাম। মতিন রহমান, আমি আর সত্য দা। আমাদের সঙ্গে সত্য দা’র ফ্যামিলি এবং আমার ফ্যামিলি। গাড়িতে ওরা সারা দিন ঘুরে বেড়ায়। আর আমরা তিন জন সারা দিন ঘরে বসে আবদ্ধ থাকতাম। মনের মতো করে এই প্রথম আমি একটা সিনেমার স্ক্রিপ্ট করলাম। কিন্তু ঘটনাটি কোথায় ঘটেছে সেটা আর পাইনি। তবে ওই স্কুলেই শুট করেছি আমরা।’ পুরো সাক্ষাৎকারটি পড়তে ক্লিক করুন- বাংলা ট্রিবিউন।