Select Page

হতাশ করেনি ‘মুখোশ’

হতাশ করেনি ‘মুখোশ’

সরকারি অনুদানের সিনেমা ‘মুখোশ’ মুক্তির পরপরই আলোচনায় এসেছে। কিছু মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকা সত্ত্বেও মোটা দাগে ছবিটি এই সময়ের নিরিখে ব্যতিক্রমী একটি প্রচেষ্টা। পরিচালক ইফতেখার শুভ নিজের উপন্যাস ‘পেইজ নাম্বার ৪৪’ অবলম্বনে নির্মাণ করেছেন।

সহজ কথায়, খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য একজন মানুষ ঠিক কতটা ভয়াবহ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে সেই গল্পই দেখিয়েছে ‘মুখোশ’।

আমাদের দেশে সিনেমার ট্রেলারেই বেশিরভাগ সময় গল্প, টুইস্ট বা রহস্য সম্পর্কে ধারণা দিয়ে দেওয়া হলেও এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। এটা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। ট্রেলার দেখেই ‘মুখোশ’-এর গল্প সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না। প্রতিটা টুইস্ট বা সাসপেন্স একেবারেই অসাধারণ বা খুবই ভালো তেমনটা না হলেও দর্শকদের স্ক্রিনের সামনে ধরে রাখতে অনেকটাই সক্ষম। তবে সাসপেন্স থ্রিলার জনরার সিনেমার প্রথম ভাগে ‘মুখোশ’ যতোটা আগ্রহ ধরে রাখে দ্বিতীয় ভাগে কিছুটা এলোমেলো হয়ে যায় বটে; তবে একেবারে হতাশ করে না।

ভিন্নধর্মী গল্পটি মৌলিক এটা সিনেমা হিসেবে আলাদা মাত্রা যোগ করে। স্বস্তির ব্যাপার হলো, আবেদন ধরে রাখে ফাইনাল ক্ল্যাইমেক্স আসার আগে বেশ কিছু টুইস্টের মাধ্যমে। পাশাপাশি সাসপেন্স থ্রিলারের সঙ্গে কিছু কমেডি দৃশ্য রাখা হয়েছে। তবে গল্প যতটা এগোয় মাঝে মাঝে কিছু প্লটের রিপিট বিরক্তি নিয়ে আসে; তবে আবেদন ধরে রাখে। গল্পের ভিন্নতার পাশাপাশি কিছু সংলাপের জন্য ‘মুখোশ’অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য।

মোশাররফ করিমকে নিয়েই ‘মুখোশ’ এ কথা খুব একটা ভুল হবে না। এই শক্তিমান অভিনেতা ইব্রাহিম খালেদী চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন। অভিনয়, বডি ল্যাংগুয়েজ, লুক, সংলাপের পারফেক্ট ডেলিভারি প্রশংসার দাবিদার। একজন ঔপন্যাসিক যিনি রাজনীতিতে আসতে চলেছেন কিন্তু তার জীবনে জড়িয়ে থাকা কিছু রহস্য এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কিছু মানুষের গল্পই ‘মুখোশ’ সিনেমার মূল প্লট। এরকম গ্রে শেডে মোশাররফ করিমকে আমরা চলচ্চিত্রে দেখেনি আগে। সিরিয়াস চরিত্রেও মাঝে মাঝে কমেডি বা হাস্যরসের জোগান দিয়েছেন তিনি সফলভাবে। (সামান্য ব্যতিক্রম বাদে) দেশীয় সিনেমায় মোশাররফ করিমকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজে লাগানো হয়নি, হয়তো ‘মুখোশ’ এই আক্ষেপ ঘোচানোর পদক্ষেপ।

অন্যদিকে বাণিজ্যিক সিনেমার মুখ পরীমনি ও রোশান তাদের চরিত্রে নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন তেমনটা না হলেও তারা দুজনই মানানসই ছিলেন এটাও সত্য। পরীমনির সৌন্দর্য্য স্ক্রিনে ভালোলাগা তৈরি করে তবে ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবে তাকে খাপছাড়া মনে হয়েছে। এটা অনেকটা স্ক্রিপ্টের খামতি। অন্যদিকে রোশানের স্ক্রিন প্রেজেন্স ভালো, তার হাইট, ফিটনেস, লুক ঢাকাই সিনেমার বানিজ্যিক সিনেমার নায়ক হিসেবে অবশ্যই ঠিকঠাক। তবে এখানে তার চরিত্রটি নিয়ে আরো কিছু করা যেতো যা অভিনেতা হিসেবে তাকে কিছুটা হলেও দর্শকদের কাছাকাছি নিয়ে যেতো। মঞ্চ ও টেলিভিশনের দুই শক্তিশালী অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম ও প্রাণ রায়ের চরিত্র দুটি গুরুত্বপূর্ণ তো ছিলই সাথে এই দুই চরিত্রে তাদের দক্ষ অভিনয় মুগ্ধ করেছে। মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন ইরেশ যাকের। তিনি যতোটা সময় স্ক্রিনে ছিলেন ততো সময় নিজের দিকে লাইমলাইট টেনে নিয়েছেন। এছাড়া (অতিথি চরিত্রে) রাশেদ মামুন অপু এবং এলিনা শাম্মীও নিজেদের জায়গায় ছিলেন প্রাণবন্ত। সামনের দিনে এই অভিনেতা-অভিনেত্রীরদের নিয়ে গল্পকার ও নির্মাতারা নতুন করে ভাববেন এটাই কামনা।

সিনেমাটির সেটে পরিচালকের সঙ্গে পরী-রোশান

সিনেমাটির নির্মাণ ও চিত্রায়ণ মোটামুটি। সংলাপ প্রশংসা পেয়েছে এবং আরও জনপ্রিয় হবে এটা বোঝা যায়। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ও গান মন্দ নয়। নোবেলের গাওয়া টাইটেল গানটি বেশ ভালো ছিল। তবে কালার গ্রেডিং, বিজিএম, সিনেমাটোগ্রাফি কিছুটা হতাশ করেছে।

প্রথম সিনেমা হিসেবে কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও পরিচালনা এতগুলো ডিপার্টমেন্ট একাই সামলানো ইফতেখার শুভর ভুল বা খামতি মেনে নেয়াই যায়। বাণিজ্যিক ও ভিন্ন দুই ধারার শিল্পীদের নিয়ে সাসপেন্স থ্রিলার ঘরানার এই সিনেমা বেশ উপভোগ্য।

সব মিলিয়ে ইন্ডাস্ট্রির দিন বদলের জন্য ‘মুখোশ’ দেখাই হবে এ সময়ের দর্শকের জন্য সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক সিদ্ধান্ত।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

আফজালুর ফেরদৌস রুমন

শখের বশে চলচ্চিত্র ও নাটক নিয়ে লিখি

মন্তব্য করুন