ওসমান হাদিকে গুলির প্রতিক্রিয়ায় সাংস্কৃতিক অঙ্গন‘হাদি হয়তো ফিরবে, আরো জোরালো গর্জনে’
জুলাই অভ্যুত্থানে সম্মুখসারির যোদ্ধা, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিনোদন জগতের ছোট একটি অংশ।

টিভি অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেন, ‘হাদী হয়তো ফিরবে, আরো জোরালো গর্জনে , আর যদি না ফেরে,তার নামটাই হয়ে যাবে নতুন প্রজন্মেতর যুদ্ধঘোষণা।’
এ মন্তব্যের নানান ধরনের হুমকি পাচ্ছেন বলেও জানান চমক। তবে এতে দমার পাত্রী নন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জুলাই আন্দোলনের ছাত্র-জনতার পাশে বরাবরই উচ্চকণ্ঠ ছিলেন আজমেরী হক বাঁধন। পরবর্তীতে ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকারের নানা বিষয়ে তার সমালোচনাও দেখা গেছে। হাদির আক্রান্তের ঘটনায় জাতীয় পুরস্কারজয়ী এ অভিনেত্রী বলেন, ‘A young man who loved his country was answered with bullets—not dialogue, not justice. I am devastated and angry. I pray for Hadi’s recovery and for strength for his family, who should never have to carry this pain.
This is not an isolated incident—this is the system. In this country, survival demands obedience. Question power, demand change, refuse silence—and you are crushed.
What happened to Hadi is not a mistake. It is a warning.
A warning to everyone who still believes they are allowed to think freely, speak honestly, or dream of a better country.
If we accept this as normal, then we are already defeated.’
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘গণহত্যার দায়ে কনভিকটেড হাসিনা ভারতে বসে একের পর এক খুনের হুমকি দিচ্ছিল গত কিছুদিন ধরেই। আর আজকে গুলিবিদ্ধ হলো ওসমান হাদী। এর আগে হাদী বহুবার ভারতীয় নাম্বার থেকে খুনের হুমকি পেয়েছেন।’
উপদেষ্টা আরও লেখেন, ‘আমরা এখনো নিশ্চিত জানি না, কে বা কারা এটা ঘটিয়েছে। যারাই ঘটাক এটার মূল্য তাদের দিতে হবে। গেট ওয়েল সুন, হাদী। গোটা দেশ তোমার সুস্থতার প্রার্থনায়। ওরা জানে না বিপ্লবীদের শেষ করা যায় না।’
নির্মাতা খিজির হায়াত খান লেখেন, ‘হাদি গুলি খাইয়া আবার প্রমাণ করিল, সোনার দেশে আসলে আদতে কিছুই বদলায় নাই। ক্ষমতার লোভে , জুলাইকে বেচঁলো সবাই, কিন্তু সবার পাপের কাফফারা টা দিল শরীফ ওসমান হাদি।’
পলাতক শেখ হাসিনার শাসনামলে ফিকশনে দুর্নীতি তুলে ধরে আলোচিত নির্মাতা আশফাক নিপুণ। জুলাই আন্দোলনেও ছিলেন সরব। এ নিমার্তা ওসমান হাদিকে নিয়ে একাধিক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘Praying for Osman Hadi – ওসমান হাদি. The attackers should be arrested immediately and all these attempts should be stopped at the very beginning stage.’
ওসমান হাদির লক্ষ্য ছিল সাংবস্কৃতি বিপ্লব। আধিপত্যকামী বয়ানের বিরুদ্ধে ছিল তার অবস্থান। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে শুরু করেন ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার। নাট্য নির্মাতা মাবরুর রশীদ বান্নাহ লেখেন, ‘
এই হাদি ভাই এমন মানুষ যিনি আমাকে প্রথম বুকে জড়ায় ধরে বলছিলেন “বান্নাহ ভাই, ক্যালচারালি এই দেশকে আমাদের অনেক কিছু দেয়ার আছে, আপনি কিন্তু থাইমেন না”। আমি তো থামবো না ভাই কথা দিছিলাম, আপনিও থাইমেন না ভাই 😞 লড়াই তো অতি দীর্ঘ ভাই …’
নন্দিত গীতিকার ও নজরুল একাডেমির মহাপরিচালক লতিফুল ইসলাম শিবলী লেখেন, ‘ওসমান হাদীকে যারা খুব কাছ থেকে দেখেছেন তাদের পক্ষে কান্না চেপে রাখা অসম্ভব। গতকাল ঢাকা মেডিকেলের অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে বারবার দাঁতে দাঁত চেপে সেটা সামলেছি।
ওসমান হাদিকে আমি বেড়ে উঠতে দেখেছি । একজন ভবিষ্যত নেতাকে অধিকার আর ইনসাফের জন্য লড়তে লড়তে বেড়ে উঠতে দেখা নিঃসন্দেহে একটা অনন্য অভিজ্ঞতা । নির্দ্বিধায় বলা যায় হাদি সৎ ছিলেন । আমার কাছে তার এই সততা ছিল পরীক্ষিত ।তবুও বারবার হাদীকে আমি মনে করিয়ে দিয়ে বলতাম – ‘আমাদের সব আছে শুধু নেতাদের সততা নেই, সৎ থেকো ভাই’। আমার কানে বাজে হাদির উত্তর- ‘সততাই আমার শক্তি ভাই, আপনি শুধু দোয়া করবেন‘।
বয়সে আমার ছোট হলেও জুলাই বিপ্লবের যে কয়েকজন তরুণকে আমরা নেতা মেনে রাজপথে হাসিনার বিরুদ্ধে নেমেছিলাম হাদি ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতমদের একজন । জুলাই বিপ্লবে আমরা সবাই একসাথে কথা বলেছি, আর বিপ্লবের পর আমাদের হয়ে কথা বলতেন হাদী। আমার কাছে একমাত্র হাদীই ছিলেন নতুন বাংলাদেশের মাউথ পিস। হাদী র কন্ঠই ছিল আমাদের কন্ঠ। হাদীর কন্ঠেই ঝরে পরতো – রাগ অভিমান আক্রোশ আর গুমড়ে কাঁদা বাংলাদেশের কন্ঠ।
হাদির আবৃত্তির মতো “বিদ্রোহী” কবিতার এমন আবৃতি আমি আগে কখনো শুনিনি । তাকে আমি নজরুল ইনস্টিটিউট আয়োজিত- “২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে আমাদের নজরুল” শীর্ষক সেমিনারে বিদ্রোহী কবিতা পড়তে ডেকেছিলাম। হাদী সেদিন পুরো অডিটোরিয়াম স্তব্ধ করে দিয়েছিল।আমি হাদির মত বিদ্রোহী কবিতার এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স আজ পর্যন্ত আর কাউকে করতে দেখিনি ।হাদি যেন বিদ্রোহী কবিতার সাক্ষাৎ জীবন্ত চরিত্র হয়ে উঠেছিল ।নজরুল যেন অনাগত ভবিষ্যতের হাদীর কন্ঠে তুলে দেয়ার জন্য রচেছিলেন এই অমর কবিতা ।অন্যদেরটা শুধুই আবৃতি । হাদিরটা ছিল যেন বিদ্রোহের বিপ্লবের ইশতেহার পাঠ । মাইক্রোফোনের সামনে দুহাত প্রসারিত করা হাদীর বর্তমান আইকনিক ছবিটা সেদিন সেই মঞ্চেই তোলা ।
আমি জানি, হাদির জায়গায় যদি আজ আমি বা অন্য কেউ থাকতো তাহলে প্রতিবাদে হাদী বাংলাদেশকে উত্তাল করে তুলতো। এভারকেয়ার হাসপাতালের তিন তালার CCU র সামনে বসে এসব লিখছি। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে তার চিকিৎসার বিষয়ে ব্রিফ করবেন।
এভারকেয়ার হাসপাতালের একই ছাদের নিচে অচেতন শুয়ে আছেন আমার দুজন প্রিয় মানুষ। যাদের জন্য আজ সারা বাংলাদেশ প্রার্থনায় রত। একজন ওসমান হাদী আরেকজন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আজকের এই দিন, এই সময়, ইতিহাসে লেখা থাকবে- সততা আর দেশপ্রেম মানুষের দোয়া হয়ে ফিরে আসে।’
এছাড়া গীতিকার ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদ, নির্মাতা তাসমিয়াহ আফরিন মৌ, অভিনেত্রী ইমতিয়াজ বর্ষণ ও নির্মাতা সাগর খান সাগরসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একাধিক মুখ হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং তার সুস্থতা কামনায় সবার দোয়া চেয়েছেন।
গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করে। ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য প্রচার চালাচ্ছিলেন। মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে।






