Select Page

‘অপারেশন জ্যাকপট’ বানাবেন দেলোয়ার জাহান ঝন্টু?

‘অপারেশন জ্যাকপট’ বানাবেন দেলোয়ার জাহান ঝন্টু?

যে ছবির জন্য বছরের পর বছর কাজ করছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম, সেই ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নাকি নির্মাণ করছেন দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। এই নিয়ে ক্ষুব্ধ সেলিম ও আরেক নামি নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম। উঠেছে মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগও! বিষয়টি বিস্তারিত তুলে এনেছে নিউজ বাংলা টোয়েন্টিফোর।

গিয়াস উদ্দিন সেলিম ও দেলোয়ার জাহান ঝন্টু

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নৌ-সেক্টরে পরিচালিত সফলতম গেরিলা অপারেশন নিয়ে সিনেমাটির নির্মাণ নিয়ে কয়েক বছর আগে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত হন গিয়াসউদ্দিন সেলিম। চিত্রনাট্য তৈরিতে কয়েক বছর কাজও করেন তিনি। ওই সময় আকাশচুম্বী বাজেটের কারণে সিনেমাটি পিছিয়ে যায়। এখন নতুন করে সেই প্রজেক্টটি করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে বাদ পড়েছেন সেলিম।

‘অপারেশন জ্যাকপট সিনেমা প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ২৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এখন পরিচালক নির্বাচনে মন্ত্রণালয়ের অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম ও মোরশেদুল ইসলাম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বছর দেড়েক আগে ‘অপারেশন জ্যাকপট’ তদরকির দায়িত্ব পায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরপর গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ডাকা দরপত্রে ‘যোগ্য’ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে কিবরীয়া ফিল্মস। তারা দেলোয়ার জাহান ঝন্টুসহ চার জন পরিচালকের নাম প্রস্তাব করেছে। তাদের মধ্যে ঝন্টুর দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

দরপত্রে গিয়াস উদ্দিস সেলিমের প্রতিষ্ঠান ‘আশীর্বাদ চলচ্চিত্র’ অংশ নিলেও তারা কাজটি পায়নি। গিয়াস উদ্দিন সেলিমের অবস্থান ‘নিয়ম বহির্ভূত’ উল্লেখ করে আশীর্বাদ চলচ্চিত্রকে বাদ দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বেশ কয়েক বছর আগে যখন কাজটি শুরু করে, তখন থেকেই আমি সিনেমাটির চিত্রনাট্যকার এবং পরিচালক হিসেবে যুক্ত হই। পরে যখন কাজটি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে আসে তখনও মন্ত্রণালয়ের ডাকেই আমি সিনেমাটির চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক হিসেবে কাজ করতে থাকি।

‘আমি যে চিত্রনাট্যটি করছিলাম, সেটি মূল্যায়নে মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি করে দেয়া হয়। সে কমিটিতে ছিলেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, মোরশেদুল ইসলাম এবং জুনায়েদ হালিম। তাদের যাতে আমি সাহায্য করতে পারি, সে কারণে আমাকেও কমিটিতে রাখা হয়। এ সব কাজই হচ্ছিল মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে।’

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সিনেমাটি নির্মাণে গত বছরের মধ্যভাগে আকস্মিকভাবে দরপত্র আহ্বান করে বলে জানান সেলিম। এতে তার প্রতিষ্ঠানসহ পাঁচটি প্রোডাকশন হাউজ প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেয়। তবে সেলিমের পরিবর্তে নির্বাচিত হয় কিবরিয়া ফিল্মসের প্রকল্পটি।

দরপত্রে বাদ পড়ার কারণ জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘তারা (মন্ত্রণালয়) বলছে, আমি যেহেতু চিত্রনাট্য প্রস্তুত কমিটিতে ছিলাম, আবার আমিই চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক তাই আমার অবস্থান ও চিত্রনাট্য নিয়ম বহির্ভূত। অথচ আমাকে অ্যাসাইন করা হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকেই।

‘সিনেমাটির জন্য আমি বছরের পর বছর ধরে চিত্রনাট্য করছি, নৌ কমান্ডারদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিদেশে গিয়েছি, কারণ সিনেমাটিতে ফ্রান্স, ইন্ডিয়াতে শুটিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে। আমার প্রপোজালেও সেগুলোর উল্লেখ আছে। অন্য যারা টেন্ডারে প্রকল্প জমা দিয়েছেন তাদের গল্প সংক্ষেপ ছাড়া এত অল্প সময়ের মধ্যে চিত্রনাট্য জমা দেয়া সম্ভব নয়। অথচ টেন্ডারে চিত্রনাট্য জমা দেয়ার কথা বলা আছে।’

এদিকে চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং অপারেশন জ্যাকপট প্রকল্পের চিত্রনাট্য প্রস্তুত কমিটির সদস্য মোরশেদুল ইসলামের অভিযোগ, মন্ত্রণালয় ‘টাকা খেয়ে’ এ কাজ করেছে। দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে সিনেমাটি নির্মাণের পরিকল্পনার কথা চিত্রনাট্য প্রস্তুত কমিটির সদস্যদের কেউ জানতেন না বলেও দাবি করেন তিনি।

মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি মন্ত্রণালয় এটি টাকা খেয়ে করেছে। আমাদের কাজ শুরু থেকে টেন্ডারে প্রকল্প জমা দেয়া পর্যন্ত সচিব, প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) পরিবর্তন হয়েছে। এখন যিনি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব (খাজা মিয়া) তিনি এ কাজগুলো করছেন।

‘তাছাড়া টেন্ডার দিয়ে এসব কাজ হয় নাকি? আমি বিষয়টা মেনে নিতে পারছি না। সম্মান রেখেই বলছি, স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে এমন একটি সিনেমা দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর নির্মাণের যোগ্যতা নেই। আমরা এটা প্রতিহত করব।’

তবে অনিয়ম বা অস্বচ্ছতার অভিযোগ অস্বীকার করছেন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া। তিনি বলেন, ‘কেউ যদি প্রশ্ন তোলে, তাহলে তুলতে পারে, কিন্তু আমরা তো নিয়মের মধ্যে থেকেই কাজ করব। প্রজেক্টটা অনেক আগের। গিয়াস উদ্দিন সেলিম এতদিন ধরে চিত্রনাট্য মূল্যায়ন কমিটিতে আছেন, কাজ করেছেন, তার তো জানার কথা যে চিত্রনাট্য মূল্যায়ন কমিটিতে থাকলে তিনি প্রজেক্ট জমা দিতে পারবেন না। আমরা সেভাবেই কাজ করেছি।’

‘আর আমরা দেলোয়ার জাহান ঝন্টুকে দেখিনি, আমরা দেখেছি প্রকল্প প্রস্তাব। যেটা নিয়মের মধ্যে ছিল, আমরা সেটাই করেছি।’

প্রকল্পের ওয়ার্ক ওয়ার্ডার শিগগির হয়ে যাবে বলে আশা করছেন খাজা মিয়া।

চলচ্চিত্রটি নির্মাণের দায়িত্ব পাওয়া কিবরিয়া ফিল্মসের কর্ণধার প্রযোজক গোলাম কিবরিয়া লিপু বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘কাজ পেয়েছি কি পাইনি সেটা এখনই বলতে চাই না। পেলে তো সবাইকে জানাবই।’

কিবরীয় ফিল্মসের প্রস্তাবিত দুই চিত্রনাট্যকার হলেন ছটকু আহমেদ ও কাসেম আলী দুলাল। প্রস্তাবিত চার চিত্র পরিচালক হলেন দেলোয়ার জাহান ঝন্টু (বাংলাদেশ), স্বপন চৌধুরী (অন্তর শো-বিজ/বাংলাদেশ), জে পি দত্ত (ভারত) এবং অনুরুদ্ধ রায় (ভারত)।

কিবরিয় ফিল্মসের প্রস্তাবিত অভিনয়শিল্পীদের তালিকায় আছেন শাকিব খান, ওমর সানি, মোশাররফ করিম, রিয়াজ, মৌসুমী, পূর্ণিমা, অপু বিশ্বাস, নিপুণ, মিশা সওদাগর, ববিতা, আহমেদ শরীফ, সুচরিতা, চম্পা, কাজী হায়াৎ, আবুল হায়াৎ, ভারতের রানী মুখার্জি, সানি দেওল, সুনীল শেঠি, ফারদিন খান, শর্মিলা ঠাকুর, সুস্মিতা সেন, জিনাত আমান ও জয়া বচ্চন।

অন্যদিকে আশীর্বাদ চলচ্চিত্র প্রস্তাবিত চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক ছিলেন গিয়াসউদ্দিন সেলিম। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পরবর্তীতে নির্বাচন করা হবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।


মন্তব্য করুন