হিন্দুস্তান টাইমসে রিভিউ/ ‘উরা ধুরা’ স্টাইলে পর্দায় কি ‘তুফান’ তুলতে পারলেন শাকিব?
বাংলাদেশের ‘তুফান’ এখন কলকাতায়। প্রবল গতিবেগ নিয়ে ওপার বাংলার বক্স অফিসের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে, এবার এপার বাংলায় আঁচড়ে পড়ল ‘তুফান’। এই বাংলায় বক্স অফিসের নিরিখে কেমন ব্যবসা করবে এই ছবি তা তো সময় বলবে, কিন্তু বাংলাদেশের ‘মেগাস্টার’ শাকিব খানের ২৫০ তম ছবি কেমন হল? রায়হান রাফি কি দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারলেন? জেনে নিন নিন।
কেমন হল ‘তুফান’?
নায়ক থেকে খলনায়ক হয়ে ওঠার গল্প ‘তুফান’। তবে গল্পটা একা ‘তুফান’-এর নয়, সঙ্গে রয়েছে ৯০-এর দশকের এক ‘শান্ত’ যুবকও। হ্যাঁ, ঠিকই আঁচ করেছেন, ছবিতে শাকিব খান ‘শান্ত’ ও অশান্ত ‘তুফান’ দুই চরিত্রে ধরা দিয়েছেন। ‘শান্ত’-র চোখে স্বপ্ন বড় অভিনেতা হওয়ার কিন্তু তাঁর ভাগ্যে জোটে জুনিয়র আর্টিস্টের কাজ। এক খলনায়কের চরিত্রেই সে কাড়তে চায় লাইমলাইট। আর সেই খলনায়কই হল অশান্ত ‘তুফান’, যার মধ্যে নেই মায়া-দয়ার লেশমাত্র। কারণ সে পশু বা মানুষ নয় হতে চেয়েছিল ‘রাক্ষস’। তার মনে আছে কেবল প্রতিহিংসা আর প্রতিপত্তির খিদে। তাই ‘শান্ত’কেও সে ব্যবহার করে নিজের তুরূপের তাস করে। এই দুই শান্ত-অশান্ত যুবককে দেখতে দেখতে মাঝে মাঝেই মনে অভিতাভ বচ্চনের ‘ডন’ ছায়া ফেললেও এ গল্প ‘ডন’-এর নয়। কারণ, যুগ যত এগিয়েছে ততই বেড়েছে রক্তের পিপাষা। নৃশংসতাতেই মিলছে চরিত্রের তৃপ্তি। চরিত্রে নিষ্ঠুরতাই এখন মানুষের মনে বেশি ছাপ ফেলছে। আর দর্শকদের সেই পাল্সটাই ধরতে পেরেছেন রাফি। তাই তাঁর ছবির কাঠামোয় খানিক ‘ডন’-এর ধাঁচে থাকলেও মননে রয়েছে ‘অ্যানিম্যাল’। সে জন্যই বোধ হয়, শাকিবের লুক অনেকটাই মিলে যায় ‘অ্যানিম্যাল’-এর রণবীরের সঙ্গে। তাই ‘ডন’কে ছাপিয়ে শতগুণে বেড়ে ওঠে নৃশংসতা। আর এইভাবেই পুরো গল্পটা কোনও ‘ডন’ বা ‘অ্যানিম্যাল’ না হয়ে, হয়ে ওঠে একটা রাক্ষসের। সেই রাক্ষসই মৌলিক করে মেলে ধরে ‘তুফান’কে।
কিন্তু এই গল্প শুধু ‘তুফান’ বা ‘শান্ত’-এর নয়, বেশ কিছুটা অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার ‘আক্রম’-এরও। প্রথমার্ধ যদি শাকিবময় হয় তবে দ্বিতীয়ার্ধ চঞ্চলময়। পর্দার ‘আক্রম’-এর মুখে হাসি থাকলেও মাথায় আছে ‘তুফান’-কে টেক্কা দেওয়ার মতো বুদ্ধি। ছবিতে চঞ্চল চৌধুরীর কমিক টাইম অনেকটা টনশনেও মুখে ফোটাবে হাসি। তবে এই মজার মধ্যেও চলতে থাকবে চেঞ্জিং গেম। তাছাড়াও এই প্রচন্ড উত্তেজনায় কিছুটা শান্তির বাতাস হয়ে ধরা দেবেন মাসুমা রহমান নাবিলা। তবে সূচনা রূপী মিমি চক্রবর্তী কিন্তু সত্যি গল্পের ‘দুষ্টু কোকিল’। তাঁর দুষ্টুমিতেই ঘুরবে গল্পের মোড়।
কার অভিনয় কেমন লাগল?
‘শান্ত’ হোক কিংবা অশান্ত ‘তুফান’-এ দুই চরিত্রেই শাকিব নজরকাড়া। ‘শান্ত’-এর সারল্যে ভরা হাসি মুখ, প্রেমিকার প্রতি ভালোবাসা, নিজের স্বপ্নকে সত্যি করার ইচ্ছে সবটা যেমন বাস্তব হয়ে ধরা দেবে। তেমনি ‘তুফান’-এর নৃশংস ভাব দেখে শিউরে উঠতে বাধ্য হবেন আপনি। শাকিবের শরীরীভাষা বা মুখের ভঙ্গি সবটাই দেখেই মনে ভয় ধরাবে। ‘তুফান’ রূপে অভিনেতার হাতে ধরা সুরা পাত্রের অদ্ভুত কায়দা যেমন আপনাকে মুগ্ধ করবে, তেমনি তাঁর মধ্যে থাকা চরম নিষ্ঠুরতা মনে ত্রাস জাগাবে। এক্ষেত্রে জুতো দিয়ে মারা, অনবরত গুলি করে যাওয়ার মতো বেশ কয়েকটি সিনে শাকিব যে দারুণ ভাবে নজর কেড়েছেন তা বলাই বাহুল্য। বেশ তবে শুধু শাকিব নন, অল্প সময়ের জন্য স্ক্রীনে থেকেই চঞ্চল চৌধুরী তৈরি করবেন চাঞ্চল্য। চেঞ্জিং করার একটি দৃশ্যে তিনি নিজের জাত বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়াও চিত্রনাট্য অনুযায়ী মিমি ও নাবিলা তাঁদের চরিত্রে যথার্থ। পাশপাশি নজর কেড়েছেন লোকনাথ দেও। তবে শুধু তিনি নন শাকিবের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করেছেন মিশা সওদাগর, গাজী রাকায়েত, সুমন আনওয়ার ও ফজলুর রহমান বাবু, যদিও তাঁদের সকলেরই স্ক্রিন টাইম ছিল বেশ কম।
ওভারঅল কেমন লাগল?
বাংলা ছবিতে যে ধরনের টেকনোলজির ব্যবহার করা হয়েছে তা খুব একটা চোখে পড়ে না। ফলে টেকনিকাল দিক থেকে এটি যে বেশ উচ্চমানের একটি বাংলা ছবি তা বলাই যায়। বিশেষ করে একটি দৃশ্যের কথা উল্লেখ্য করতে হয়। যেখানে ছবির এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র অন্য আরেকজনকে হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করছে। সেখানে যেভাবে পুরো দৃশ্যটি নির্মাণ করা হয়েছে, তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। পাশাপাশি ছবির গান। সেটা নিয়ে নতুন করে তো কিছুই বলার নেই। ইতিমধ্যেই সেগুলি বেশ ভাইরাল। তবে চিত্রনাট্য নিয়ে বোধ হয় আরও একটু কাজ করা যেত। সঙ্গে চরিত্রগুলিকে আরও একটু গভীরতা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। তবে ছবিতে চঞ্চল এবং শাকিবকের যুগলবন্দি ছিল দেখার মতো। বাড়তি পাওনা হিসেবে ছিল মিমি-শাকিবের ‘উরা ধুরা’ নাচ। তবে এই নাচের তালে কোমর দোলাতে গিয়ে সিট ছাড়লেই হবে আসল মিস। কারণ গানের শেষের দৃশ্যই রয়েছে রয়েছে সিক্যুয়েলের সূচনা!
রেটিং: ৩/৫
[মূল রিভিউর শিরোনাম ‘উরা ধুরা’ স্টাইলে পর্দায় কি ‘তুফান’ তুলতে পারলেন শাকিব? মিমি আর চঞ্চলই বা কেমন?, লিখেছেন সায়নি রানা]