Select Page

২৭ ছবির সালমান শাহ

২৭ ছবির সালমান শাহ

অমর নায়ক সালমান শাহ-র ক্যারিয়ারে মোট ২৭টি ছবি রয়েছে। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত সাল পর্যন্ত ছবিগুলোর বিস্তৃতি। সবগুলো ছবির পরিচিতি নিয়ে এ আয়োজন।

কেয়ামত থেকে কেয়ামত (১৯৯৩)

‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সালমান শাহ-র প্রথম ছবি। ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ মুক্তি পেয়েছিল। পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। বিপরীতে মৌসুমী। আমির খান-জুহি চাওলা অভিনীত ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ মুভির অফিসিয়াল রিমেক এ ছবিটি। ছবির গল্পে দুই পরিবারের মধ্যে পুরনো বিরোধে শত্রুতার পরে সালমান শাহ ও মৌসুমীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের ক্ষেত্রেও বাধা আসে। সালমান ও মৌসুমী বাধা উপেক্ষা করে নিজেদের ভালোবাসাকে জয় করে বাড়ি ছাড়ে। নির্জন পাহাড়ে তাদের স্বপ্নের শুরু হলেও শেষটা হয় বেদনার। দুজনকেই জীবন দিয়ে দিতে হয় পরিস্থিতির চাপে। ছবির শেষটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ছবিতে গানের মধ্যে আছে – বাবা বলে ছেলে নাম করবে, ও আমার বন্ধু গো চিরসাথী পথচলার, এখন তো সময় ভালোবাসার, একা আছি তো কি হয়েছে।

তুমি আমার (১৯৯৪)

জহিরুল হক ও তমিজ উদ্দিন রিজভী পরিচালিত ছবি। ছবির অর্ধেক কাজ শেষে জহিরুল হক মারা গেলে বাকি কাজ শেষ করেন তমিজ উদ্দিন রিজভী। ২২ মে ১৯৯৪ তারিখে মুক্তি পায়। বিপরীতে শাবনূর। এ ছবির মধ্য দিয়ে একটি কালজয়ী জুটির সূচনা ঘটে। সরল প্রেমের গল্পে ছবিটি নির্মিত হয়েছে। শাবনূর উচ্চবিত্তের মেয়ে, তাতে ভালোবেসে সালমান নিজের পরিচয় গোপন রেখে শাবনূরের সামাজিক চাহিদা অনুযায়ী মেশে কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে যায়। ভুল বোঝাবুঝি থেকে আবার দুজনের প্রেম নতুন করে দানা বাঁধে। ছবির গানগুলোর মধ্যে আছে – জ্বালাইয়া প্রেমের বাত্তি কোথায় তুমি থাকো রে (রোমান্টিক ও স্যাড ভার্সন), তুমি আমার ভালোবাসার গান, দেখা না হলে একদিন।

অন্তরে অন্তরে (১৯৯৪)

শিবলি সাদিক পরিচালিত ছবি। ১০ জুন ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায়। বিপরীতে মৌসুমী। বিদেশ ফেরত সালমান শাহ তার দাদী আনোয়ারার বাড়িতে এলে পুরনো ঘটনার জেরে নাতি সালমানকে মেনে নেয় না। সালমান দাদীর অভিমান ভাঙাতে বাড়ির সামনেই অবস্থান করে। অসুস্থ হয়ে গেলে মৌসুমী সেবা করে এবং আনোয়ারা এতে রাগ করলে মৌসুমী তার ভুল ভাঙিয়ে দেয়। আনোয়ারা তখন সালমানকে প্রাসাদে নিয়ে যায়। সালমান-মৌসুমীর প্রেমের পথে বাধা আসতে থাকে। সব বাধা পেরিয়ে তারা সফল হয়। ছবির গানগুলোর মধ্যে আছে – অন্তরে অন্তরে পিরিতি বাসা বান্ধেরে, ও দাদী ও দাদী আমি তোমার দিবানা, কাল তো ছিলাম ভালো, এখানে দুজনে নিরজনে, ভালোবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া।

রঙিন সুজন সখি (১৯৯৪)

শাহ আলম কিরণ পরিচালিত ছবি। ১২ আগস্ট ১৯৯৪ তারিখে মুক্তি পায়। বিপরীতে শাবনূর। সাদাকালো সময়ের ব্লকবাস্টার ছবি ‘সুজন সখি’-র রিমেক এ ছবি। চিরায়ত গ্রামীণ প্রেম ও বাধা এ ছবির মূল গল্প। সালমান শাহ ও শাবনূরের প্রেমে বাধা হয় তাদের দুই পরিবার। সব বাধাকে কাটিয়ে তাদের ভালোবাসার সাফল্য আসে। গ্রামীণ চরিত্রে সালমান শাহ নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে। উল্লেখযোগ্য গান – সব সখিরে পার করিতে, কথায় বলে গাছের ব্যাল পাকিলে তাতে কাকের কি।

বিক্ষোভ (১৯৯৪)

মহম্মদ হান্নান পরিচালিত ছবি। ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪ তারিখে মুক্তি পায়। বিপরীতে শাবনূর। ছাত্র-রাজনীতির গল্পের ছবি। কলেজের ছাত্র সালমান শাহ চলমান সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। এতে তার ওপর একের পর এক বাধা আসতে থাকে শত্রু রাজিবের। সহপাঠী ও প্রেমিকা শাবনূরও সালমানের সাথে সে সংগ্রামে এক হয়ে কাজ করে। শাবনূর রাজিবেরই মেয়ে যে রাজিব ছিল সালমানের বাবারই খুনি। সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে বোন ও বন্ধুকে হারায় সালমান এবং রাজিবের পতন ঘটায়। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় বছরেই রাজনৈতিক ছবিতে সালমানের পারফরম্যান্স ছিল অনবদ্য। ছবির গানগুলোর মধ্যে আছে – একাত্তরের মা জননী, বন্ধু তুমি আমার, আমায় অনেক বড় ডিগ্রি দিছে মা, বিদ্যালয় মোদের বিদ্যালয়।

স্নেহ (১৯৯৪)

গাজী মাজহারুল আনোয়ার পরিচালিত ছবি। বিপরীতে মৌসুমী। পারিবারিক গল্পের ছবি। শাবানা-আলমগীর দম্পতির ছেলে সালমান শাহ মা-বাবার দূরত্বে আদর-স্নেহ ঠিকমতো না পেয়ে অন্যরকম হয়ে যায়। তার মনে অভিমান জন্ম নেয়। মা শাবানার কাছে থাকার পরেও তার সাথে দূরত্ব থাকে সালমানের। মৌসুমীর সাথে প্রেমের সম্পর্কের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত মা-বাবার দূরত্বটা ঘোচে। ছবির গানগুলোর মধ্যে আছে – চিঠি লিখলাম ও লিখলাম তোমাকে, তুমি যেখানেই থাকো, মামা ও মামা আমি তোমার ভাগিনা, একটি মেয়ে ভালোবেসেছিল।

প্রেমযুদ্ধ (১৯৯৪)

জীবন রহমান পরিচালিত ছবি। ২৩ ডিসেম্বর ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায়। বিপরীতে লিমা। এ ছবিতে সালমান শাহ অনেকগুলো লুকে প্রথমবার অভিনয় করে। ফাইটো মার্শাল আর্টের ব্যবহারও দেখা যায়। লিমাকে ভালোবাসলে তার মা শর্মিলী আহমেদ বাধা দেয় এবং গুলি চালাতে চায় কিন্তু পারে না। ডনের ষড়যন্ত্রে লিমার সাথে বিচ্ছেদ ঘটে সালমানের এবং পরে ছেলের মাধ্যমে আবার দেখা হয় লিমার সাথে। প্রেমিক ও বাবার চরিত্রে সালমান অসাধারণ পারফর্ম করেছে। উল্লেখযোগ্য গান – ওগো মোর প্রিয়া, লাল ঐ গালে একটা চুমু।

কন্যাদান (১৯৯৫)

দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ছবি। ৩ মার্চ ১৯৯৫ তারিখে মুক্তি পায়। বিপরীতে লিমা। মর্মস্পর্শী গল্পে ছবিটি নির্মিত হয়েছে। নৌ ভ্রমণে সালমান ও লিমা নিজের সন্তানকে দুর্ঘটনাবশত হারায়। লিমা পাগল হয়ে গেলে মানসিক হাসপাতালে তার চিকিৎসা হয়। শাবানা লিমার ডাক্তার থাকে। লিমার দ্বিতীয় সন্তান মেয়েটিকে সালমান শাবানা-আলমগীরের সংসারে দেয় স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে বড় করার জন্য। লিমা একসময় সুস্থ হয়ে সে ঘটনা জানতে পেরে নিজের মেয়েকে জোর করে ফেরত আনে। শাবানাও শেষ পর্যন্ত মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।

দেনমোহর (১৯৯৫)

শফি বিক্রমপুরী পরিচালিত ছবি। ৩ মার্চ ১৯৯৫ তারিখে মুক্তি পায়। বিপরীতে মৌসুমী। রাজিব ও আহমেদ শরীফের দুই পরিবারের দ্বন্দ্বের জেরে সালমান শাহ ও মৌসুমীর প্রেমের সূচনা ঘটে। তাদের বিয়েরর পর সালমানের বাবা সালমানকে শপথ করিয়ে মৌসুমীকে দেন মোহরের টাকা গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। কিন্তু সালমান-মৌসুমীর বন্ধন তাতে কাটে না বরং তাদের সন্তানের মধ্য দিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে। খুবই সুনির্মিত ছবি। ছবির গানগুলোর মধ্যে আছে – শুধু একবার বলো ভালোবাসি, আমার মনের ভেতরে আরেকটি মন, আমি তোমার প্রেমে পাগল।

স্বপ্নের ঠিকানা (১৯৯৫)

এম এ খালেক পরিচালিত ছবি। ১১ মে ১৯৯৫ তারিখে মুক্তি পায়। বিপরীতে শাবনূর। ১৯ কোটি টাকার ব্যবসাসফলতার রেকর্ড গড়ে এ ছবিটি। খুবই সরল গল্পের ছবি। ত্রিভুজ প্রেমে সালমান শাহ-শাবনূর-সোনিয়ার প্রেম ও দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে পারিবারিক আরো অনুষঙ্গে ছবির গল্প এগিয়ে চলে। গানের মধ্যে আছে – নীল সাগর পার হয়ে তোমার কাছে এসেছি, এইদিন সেইদিন কোনোদিন, তুমি আমার জীবনের শুরু, কংগ্রাচুলেশনস অ্যান্ড সেলিব্রেশন্স।

আঞ্জুমান (১৯৯৫)

হাফিজ উদ্দিন পরিচালিত ছবি। ১৮ আগস্ট ১৯৯৫ তারিখে মুক্তি পায়। বিপরীতে শাবনাজ। সালমান শাহর ছবিগুলোর মধ্যে এটি অপেক্ষাকৃত দুর্বল গল্পের। প্রেম ও পারিবারিক দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়েই ছবিটি নির্মিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য গান – আমার বুকে লেখা আঞ্জুমান, কে জবে জানিনা আমারই প্রিয়তমা।

মহামিলন (১৯৯৫)

দিলীপ সোম পরিচালিত ছবি। ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৫ সালে মুক্তি পায়। বিপরীতে শাবনূর। এটিও প্রেম ও পারিবারিক গল্পে নির্মিত হয়েছে। শাবনূরের প্রেমে পড়ে সালমান পরিচয় গোপন করে কৌশলে তার কাছে যায় ও সফল হয়। তাদের প্রেমই ছবির মূল গল্প। ববিতা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ছিল। গানগুলোর মধ্যে আছে – আমি যে তোমার প্রেমে পড়েছি, পৃথিবীকে সাক্ষী রেখে।

আশা ভালোবাসা (১৯৯৫)

তমিজ উদ্দিন রিজভী পরিচালিত ছবি। ১ ডিসেম্বর ১৯৯৫ তারিখে মুক্তি পায়। বিপরীতে শাবনাজ। মায়ের অপমানের বদলা নিতে মিশা সওদাগরকে শিক্ষা দিতে যায় সালমান শাহ কিন্তু মা তাকে মানুষের মতো মানুষ হয়ে উপার্জনের মাধ্যমে অপমানের জবাব দিতে বলে। সালমান মায়ের আদেশ পালন করে। শহরে গিয়ে শাবনাজের সাথে প্রেম ও বিয়ের পর দ্বিতীয় নায়িকা সাবরিনাও হাজির হয় যে সালমানকে আগে থেকেই ভালোবাসত। গানের তালিম নিতে সালমান সাবরিনার বাবার কাছে গিয়েছিল। একটা কমেডি আবহে ছবির গল্পটি টার্ন করে। উল্লেখযোগ্য গান – প্রেমপ্রীতি আর ভালোবাসা, আরো আগে কেন এলে না।

বিচার হবে (১৯৯৬)

শাহ আলম কিরণ পরিচালিত ছবি। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায়। বিপরীতে শাবনূর। গ্রাম ও শহরের দ্বৈত গল্পে নির্মিত ছবি। গ্রাম থেকে আসা প্রতিবাদী ছেলে সালমান শাহ শহরে এসে বাস্তবতার চাপে মাস্তান হয়ে ওঠে। শাবনূরের সাথে গ্রামে বিয়ের পর দেখা হয় না পরে শহরে এসে আবার তাদের মধ্যেই প্রেম গড়ে ওঠে। রাইসুল ইসলাম আসাদ, ডলি জহুর, হুমায়ুন ফরীদি ও জহির উদ্দিন পিয়ার ছিল গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। উল্লেখযোগ্য গান – আমি যে তোমার কে, জ্যোতিষী গো জ্যোতিষী, বিচার হবে অত্যাচারীর বিচার হবে।

‘এই ঘর এই সংসার’ সিনেমায় সালমান শাহ ও বৃষ্টি

এই ঘর এই সংসার (১৯৯৬)

মালেক আফসারী পরিচালিত ছবি। ৪ মে ১৯৯৬ তারিখে মুক্তি পায়। বিপরীতে বৃষ্টি। পারিবারিক গল্পের ট্র্যাজেডি ছবি। বুলবুল আহমেদ-রোজী আফসারী দম্পতি নিঃসন্তান অবস্থায় সালমান শাহ ও আলীরাজকে মানুষ করে। আলীরাজের বিয়ের পর তার স্ত্রী তমালিকার স্বার্থপরতার জন্য সংসারে বিভেদ সৃষ্টি হয়। সালমানের বিয়ে হয় ঘটনাচক্রে তার অমতে বোনের আদেশে। সালমান শাহ তার জায়গায় ঠিক থাকলেও একসময় তমালিকার জন্য মৃত্যুমুখে পতিত হয় রোজী এবং ট্রাজিক পরিণতি ঘটে ছবির। নারীর প্রেম ও স্বার্থপরতা দুই পুরুষের জীবনে দুইরকম প্রভাব ফেলতে পারে এ ছবি তা দেখিয়েছে। উল্লেখযোগ্য গান – নারীর কারণে সবই হয়, আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, শুক শুক শুকিয়া।

প্রিয়জন (১৯৯৬)

রানা নাসের পরিচালিত ছবি। ১৪ জুন ১৯৯৬ তারিখে মুক্তি পায়। বিপরীতে শিল্পী। ত্রিভুজ প্রেমের পারিবারিক গল্পের ছবি। নিজের ছোটবেলার ভালোবাসা শিল্পীকে পরিচয় না দিয়ে ভালোবাসে সালমান শাহ। তার জায়গায় শিল্পীর সাথে পরিচিত হয় রিয়াজ। শেষ পর্যন্ত সালমানের সাথেই শিল্পীর মিলন ঘটে। উল্লেখযোগ্য গান – এ জীবনে যারে চেয়েছি, ও সাথীরে তুমি ছাড়া ভালো লাগে না, ঐ মেয়েটি বড় সুন্দরী, মন মানে না।

তোমাকে চাই (১৯৯৬)

মতিন রহমান পরিচালিত ছবি। ২১ জুন ১৯৯৬ তারিখে মুক্তি পায়। বিপরীতে শাবনূর। নিখাদ প্রেমের ছবি। ভালোবাসার মানুষের জন্য ঘর ছাড়ে সালমান শাহ এবং সফল হয়। প্রেমিকা শাবনূরের জন্য প্রথম উপার্জনের টাকা দিয়ে উপহার নিয়ে আসে। আবেগ ও বাস্তবতার মধ্যে তফাত এ ছবিতে চমৎকারভাবে দেখানো হয়েছে। উল্লেখযোগ্য গান – ভালো আছি ভালো থেকো, বাজারে যাচাই করে দেখিনি তো দাম, তোমাকে চাই শুধু তোমাকে চাই।

স্বপ্নের পৃথিবী (১৯৯৬)

বাদল খন্দকার পরিচালিত ছবি। ১২ জুলাই ১৯৯৬ তারিখে মুক্তি পায়। বিপরীতে শাবনূর। রাষ্ট্রচেতনার অসাধারণ ছবি। স্বৈরশাসক রাজিবের অত্যাচারে ফুঁসে ওঠা জনতার সাথে তাঁরই ছেলে সালমান শাহ যোগ দেয়। বাবা ও ছেলে হয়ে ওঠে প্রতিদ্বন্দ্বী। শোষিত শ্রেণির প্রতিনিধি সালমান শাহ বাবার বিরুদ্ধে দাঁড়ায় এবং সফল হয়। শাবনূরের সাথে প্রেমেও সফল হয় সালমান এবং সালমানের প্রতি ভালোবাসার পরীক্ষা দিতে রাজিবের কথায় শাবনূর অগ্নিপরীক্ষা দেয়। রাজিবের পতনের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় আসে। উল্লেখযোগ্য গান – বৃষ্টি রে বৃষ্টি আয় না জোরে, ওগো আমার সুন্দর মানুষ, তুমি আমার মনের মানুষ।

সত্যের মৃত্যু নেই (১৯৯৬)

ছটকু আহমেদ পরিচালিত ছবি। ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ তারিখে মুক্তি পায়। বিপরীতে শাহনাজ। মিথ্যা কথা বলে শাবানা তার বাবাকে হারায় সেই থেকে শপথ করে কখনো মিথ্যা বলবে না। ছেলে সালমান শাহকে ঘটনাচক্রে খুন করতে দেখে এবং সত্য, মিথ্যা যাচাইয়ের আগেই খুনি বলে। সালমান শাহ ফাঁসির আসামী হয় মা শাবানারই সাক্ষ্যমতে। ফাঁসির আগে শেষদেখায় সালমানের মুখে সত্যটা জানার পর বিস্মিত হয় শাবানা এবং সন্তানকে বাঁচাতে জীবন বাজি রেখে আসল খুনি রাজিবকে মোকাবেলা করে। এটি মূল গল্প ছবির, এর সাথে মায়ের সাথে সালমানের দূরত্ব, বাবা আলমগীরের নীরব সমর্থন, শাহনাজের সাথে প্রেম ছবির অন্যতম অংশ। উল্লেখযোগ্য গান – চিঠি এলো জেলখানাতে, এই পথ আমার ঠিকানা, নয়নের কাছে থেকো, সুখের আরেক নাম।

জীবন সংসার (১৯৯৬)

জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ছবি। ১৮ অক্টোবর ১৯৯৬ তারিখে মুক্তি পায়। বিপরীতে শাবনূর। প্রেম ও পারিবারিক গল্পের ছবি। ফারুক-ববিতার প্রেম ও বিয়ের পর ফারুকের ছোটভাই সালমান শাহ ঘটনাক্রমে বাড়ি থেকে চলে যায়। এর মধ্যে শাবনূরের সাথে প্রেম হয় সালমানের। তারা ভিন্ন একটি জায়গায় গেলে সেখানে লোকাল মাস্তান ডন ও মিশা সওদাগরের মুখোমুখি হয় এবং তাদেরকে শায়েস্তা করে। ছবির শেষে ফারুকের সাথে মিল হয় সালমানের। উল্লেখযোগ্য গান – পৃথিবীতে সুখ বলে যদি কিছু থেকে থাকে, কি আছে জীবনে আমার।

মায়ের অধিকার (১৯৯৬)

শিবলি সাদিক পরিচালিত ছবি। ৬ ডিসেম্বর ১৯৯৬ তারিখে মুক্তি পায়। বিপরীতে শাবনাজ। সালমান শাহর মা ববিতাকে তার শ্বাশুড়ি ফেরদৌসী মজুমদার অহংকারের কারণে ঐশ্বর্যপূর্ণ জাহান মঞ্জিল থেকে বের করে দেয় কৌশলে। আলমগীরকে জানানো হয় তার স্ত্রী ববিতা মারা গেছে। তাদের ছেলে সালমান শাহ মায়ের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কৌশলে মাকে ছেড়ে দাদী ফেরদৌসী মজুমদারের কথায় জাহান মঞ্জিলে প্রবেশ করে এবং নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে সফল হয়। শাবনাজের সাথে প্রেম ও বিয়ের পর সালমান মায়ের অধিকারের চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেয় নববধূ শাবনাজকে মঞ্জিলের বাইরে থেকে তাকে চলে যেতে বাধ্য করিয়ে। উল্লেখযোগ্য গান – পিঁপড়া খাবে বড়লোকের ধন, তুমি একটা চোর, পালকিতে চড়াইয়া ফুলবধূ সাজাইয়া, মেয়ে তো নয়রে পাগলি। এটি সালমান শাহর অসমাপ্ত ছবি।

চাওয়া থেকে পাওয়া (১৯৯৬)

এম এম সরকার পরিচালিত ছবি। ২০ ডিসেম্বর ১৯৯৬ তারিখে মুক্তি পায়। বিপরীতে শাবনূর। সরল প্রেমের গল্পের ছবি। একটা হোটেলে শাবনূরকে দেখে তার ছবি এঁকে ভালোবেসে ফেলে সালমান শাহ। তাদের মধ্যে প্রেম হলে নানা বাধা আসতে থাকে। উল্লেখযোগ্য গান – সাথী তুমি আমার জীবনে, শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে। সালমান শাহর অসমাপ্ত ছবির মধ্যে এটি অন্যতম।

প্রেম পিয়াসী (১৯৯৭)

রেজা হাসমত পরিচালিত ছবি। ১৮ এপ্রিল ১৯৯৭ তারিখে মুক্তি পায়। বিপরীতে শাবনূর। করুণ প্রেমের পরিণতির গল্প। দুই ধর্মের সালমান শাহ ও শাবনূরের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বাধা আসার পর তাদের পরিণতি আসতে থাকে। সালমানের মা আনোয়ারা যায় শাবনূরের বিয়ে বন্ধ করতে কিন্তু ততক্ষণে বিয়ের কার্যক্রম চলছিল। ফিরে এসে সিলিং ফ্যানে সালমান শাহর ঝুলন্ত লাশ দেখে ডুকরে কাঁদতে থাকে মা আনোয়ারা, অন্যদিকে শাবনূরও বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে। উল্লেখযোগ্য গান – কি যে তুমি চাও।

স্বপ্নের নায়ক (১৯৯৭)

নাসির খান পরিচালিত ছবি। ৪ জুলাই ১৯৯৭ তারিখে মুক্তি পায়। সালমান শাহর অসমাপ্ত অন্যতম ছবি। বিপরীতে শাবনূর। প্রেমিক সালমান শাহর ট্রাজিক পরিণতির ছবি। এটিএম শামসুজ্জামানের ষড়যন্ত্রে সালমান শাহ নকল প্রেমিক সেজে শাবনূরের সাথে মেশে। পরিস্থিতিক্রমে সালমান নাসির খানের ক্রোধের শিকার হয়ে মারা যায়। তারপর দৃশ্যপটে আমিন খান আসে এবং গল্প নতুন দিকে মোড় নেয়। উল্লেখযোগ্য গান – নিশিদিন প্রতিদিন স্বপ্নে দেখি।

শুধু তুমি (১৯৯৭)

কাজী মোর্শেদ পরিচালিত ছবি। ১৮ জুলাই ১৯৯৭ তারিখে মুক্তি পায়। বিপরীতে শ্যামা। এ ছবিতে সালমানকে সবচেয়ে কম দেখা গেছে। তবে যতটুকু দেখা গেছে লুক ছিল অন্যসব ছবির থেকে আলাদা। খুব অল্প কাজ করতে পেরেছিল সালমান বাকি অংশ অন্য একজন করেছে। হুমায়ুন ফরীদি এ ছবিতে বেশি প্রভাব রেখেছে। উল্লেখযোগ্য গান – তুমি যখনই কাছে থাকো।

আনন্দ অশ্রু (১৯৯৭)

শিবলি সাদিক পরিচালিত ছবি। ১ আগস্ট ১৯৯৭ তারিখে মুক্তি পায়। বিপরীতে শাবনূর ও কাঞ্চি। এটিও সালমানের অসমাপ্ত ছবি। ট্রাজিক প্রেমের করুণ পরিণতির গল্পে এটি সালমান শাহর সেরা ছবি। স্টাইলিশ সালমান শাহ দেওয়ানগঞ্জে গান লিখতে গিয়ে উচ্ছল শাবনূরকে সাপে কাটার পর সুস্থ করে তোলে এবং তাদের মধ্যে প্রেম হয়। এর সাক্ষী হয় হুমায়ুন ফরীদি এবং মেনে নিতে না পেরে সালমানের ওপর অত্যাচার চালিয়ে তাকে পাগল বানায়। মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে নার্স হিসেবে শাবনূরেরই আগমন ঘটে এবং সে জানতে পারে কাঞ্চির সাথে যার বিয়ে হবার কথা সে সালমানই। এমন ট্রাজিক গল্পে এগিয়েছে ছবিটি। শেষ পর্যন্ত সালমান ও শাবনূরের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ ট্র্যাজেডি পরিপূর্ণ হয়। সালমান শাহ-র পাগলের অভিনয়ে তাকে বাকি সব ছবি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন করা যায় এবং তাঁর অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনয়দক্ষতারও প্রমাণ। উল্লেখযোগ্য গান – তুমি আমার এমনই একজন, তুমি মোর জীবনের ভাবনা, উত্তরে ভয়ঙ্কর জঙ্গল।

বুকের ভিতর আগুন (১৯৯৭)

ছটকু আহমেদ পরিচালিত ছবি। ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ তারিখে মুক্তি পায়। বিপরীতে শাবনূর। সালমান শাহর মুক্তিপ্রাপ্ত শেষ ছবি। সালমানের মা ফাল্গুনী হামিদ তার স্বামী আসাদকে রাজিবের ষড়যন্ত্রে হারায়। এরপর প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে এবং ছেলে সালমানকে বড় করে তোলে রাজিবের মেয়ে শাবনূরের সাথে প্রেমের অভিনয় করে রাজিবকে জবাব দেয়ার জন্য। সালমান শাবনূরকে সত্যিকার অর্থেই ভালোবেসে ফেলে এবং বাধা আসে শাবনূরের ভাই ডন ও মিশা সওদাগরের থেকে। তারা সালমানের মুখ পুড়িয়ে দিলে প্লাস্টিক সার্জারির পর দৃশ্যপটে ফেরদৌস আসে। উল্লেখযোগ্য গান – আমার বুকের ভিতর আগুন জ্বলে, পাথরে লিখিনি ক্ষয়ে যাবে, প্রিয়া ও প্রিয়া।

এছাড়া সালমান শাহ-র অসমাপ্ত ও চুক্তিবদ্ধ (কিছু অংশের শ্যুটিং করা এবং সংরক্ষিত হয়নি এমন) ছবির মধ্যে আছে – কে অপরাধী, রঙিন নয়নমনি, শেষ ঠিকানা, মন মানে না, ঋণশোধ, প্রেমের বাজি, অধিকার চাই, মধুর মিলন, প্রেমসন্ধি ইত্যাদি।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অনেক তারকা থাকার পরেও স্বল্প সময়ের ক্যারিয়ার, ফ্যাশন ও স্টাইল সেন্সে এবং অনবদ্য অভিনয়দক্ষতায় সালমান শাহ একজন স্পেশাল চলচ্চিত্র তারকা হয়ে থাকবে।


About The Author

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

Leave a reply