অগ্নিঃ আড়াই ঘন্টার পূর্ন বিনোদন।
অগ্নি নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক রিভিউ লিখা হয়েছে বিভিন্ন ব্লগে। আমার লিখার প্রধান কারন এই, এখন বাংলা সিনেমা নিয়ে লিখতেও খারাপ লাগেনা । যাই হোক আসল কথা হলো, অগ্নি’র ট্রেলার দেখেই অনেকে মনে ব্যাপক আশার জন্ম দিলেও আমি তেমন উচ্ছসিত হতে পারসিলাম না মুলত দুটি কারনে ১. পরিচালক ইফতেখার চৌধুরি যার পুর্বেকার সিনেমা দুটি (খোঁজ, দেহরক্ষী) আমাকে যারপরনাই হতাশ করেছে। ২. সিনেমার কাহিনী ও চিত্রনাট্য আবদুল্লাহ জহির বাবুর। ছবি শুরু হয়ার আগ পর্যন্ত এই দুটি বিষয় আমাকে স্বস্থিতে পাশ ফিরতে দেয়নি। চমৎকার একটি একশান দৃশ্য দিয়ে সিনেমা শুরু হয়াতে আমি নড়েচড়ে বসলাম।
সিনেমার কাহিনি নিয়ে দু কলম লিখার কোন দরকার নেই। ট্রেলার এর কল্যানে তা সবাই জানে। পিতা-মাতার হত্যার প্রতিশোধ নিতে তানিশা (মাহি) নিজেকে তৈরি করে কিলার হিসেবে। এদিকে খুনিদের নাটের গুরু গুলজার(আলী রাজ) কে পাহারার দায়িত্বে আছে ড্রাগন (আরেফিন শুভ) | তাদের মধ্যে আসে রোমান্টিসিজম। খুনির দল তানিশা আর ড্রাগন কে শিকারে নামে।
সিনেমার যা কিছু ভাল লাগলোঃ যা কিছু ভাল লাগ্লো বলতে আসলে বলতে হবে আমার কাছে তেমন কিছু খারাপ লাগেনাই। যা কিছু দৃষ্টিকটু এ নিয়ে পরে আলোচনা করব। মাহির গ্লামার ,ড্যান্স আর আইটেম গানে পারফরমেন্স চরম ছিল। আরেফিন শুভ’র সিনেমায় এন্ট্রি সিন টা চরম লাগছে আমার কাছে। তার লুক যথেষ্ট রাফ এন্ড টাফ মনে হয়েছে এন্ট্রিতে। রোমান্টিক কমেডি গুলো ভাল উপভোগ করেছে দর্শকরা। ঘন ঘন হাততালি সেটাই প্রমান করে। অ্যাকশান সিনে মাহি মনে হয় ঢাকাই সিনেমার প্রথম নায়িকা যে নায়কের চেয়ে ভাল করলো। মাহি আর আরেফিন শুভর স্পিড বোট চেজ বাংলা সিনেমার জন্য এপিক! সিনেমার গান, নাচ ভাল হয়েছে। টাইটেল সং , আইটেম সং প্রশংসা পাওয়ার মত।
অভিনয় নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই মিশা সওদাগর (সিনেমায় রিটায়ার্ড ডিবি অফিসার হায়দার) এবং পুজা (ছোট তানিশা) এর কথা বলতে হয়। নিজের চরিত্রে পরিমিত অভিনয় তাকে সিনেমার শ্রেষ্ঠ চরিত্রাভিনেতায় পরিনিত করছে। মাহির ছোট বেলার চরিত্রে পুজা খুব ভাল ভাবে ভয় আর দৃঢ়তা ফুটিয়ে তুলেছে। আরেফিন শুভও ভাল করেছে। বাকি সহযোগী চরিত্রের প্রায় সবাই ছিল খল অভিনেতা। কেউই তেমন খারাপ করেনি। অ্যাকশান দৃশ্যে মাহি যেমন, পুরো সিনেমাতে তেমন ভাল হলে মাহিকে নিয়ে কিছু বলার থাকত না। কিন্তু সপ্তাহ দুই আগে দেখা ‘কি দারুন দেখতে’ সিনেমায় মাহির অভিনয় এর চেয়ে ভাল ছিল।
আরো ভালো যা হতে পারতোঃ বাণিজ্যিক সিনেমায় কিছু ভুল ত্রুটি থাকে। অগ্নি সিনেমাতেও আছে। তবে আরেকটু যত্ন নিলে আরো ভাল কিছু আমরা দেখতে পেতাম। তানিশা প্রতিবার একেক জনকে খুন করার সময় ১২ বছর আগের তার মা-বাবার খুনের ঘটনা দেখানো হয়। এতে দর্শকরা জেনেই যায় তানিশা কেন খুন গুলো করছে। ভিলেনদের মনে উতকন্ঠা থাকলেও তাই দর্শকদের মনে থাকেনা। যদি ভিলেন আর দর্শকরা একসাথে জানতে পারতো তানিশা কেন খুন করছে তাহল ভাল হত। ১২ বছর আগে ডিবি অফিসার তানিশার বাবার মোবাইফোনে মেমোরি কার্ড ব্যবহার মানা গেলেও ,কম্পিউটারে উইন্ডোস ৭ এর ব্যবহার দৃষ্টিকটু। সেফ হাউজে গোলাগুলির সময় তানিশার লংরেঞ্জ রাইফেল থেকে ছড়রা গুলির শব্দও কানে লাগে।
তানিশার প্রেমে পরার পর , ড্রাগনের পরিবর্তন মেনে নেওয়া কিংবা এত কাছাকাছি ধাওয়া পালটা ধাওয়া করেও তানিশাকে চিনতে না পারা বেশ কষ্টের। পরিচালক রিতিমত ড্রাগনের চরিত্রহানি করেছেন বলা যায়। এছাড়া খুন করে পালানোর সময় তানিশাকে উদ্দেশ্য করে ড্রাগনের স্টপ,স্টপ… ডায়ালগ সিনেমার সংলাপের অপরিপক্কতাই প্রকাশ করে।
আর ট্রেইন্ড কিলার হওয়ার সত্বেও তানিশার প্রায় সবক্ষেত্রে অস্ত্র হিসেবে পুরুষের কামনার উপর নির্ভরতা আমার তেমন ভাল লাগেনি।
বলতে গেলে অনেক কথাই বলা যায়,কিন্তু আমি এই বলে শেষ করতে চাই বাংলা চলচিত্র নিয়ে হতাশার দিন সম্ভবত অচিরেই শেষ হচ্ছে। আমি অগ্নি দেখে আশাবাদী। পরিচালক কে ধন্যবাদ দুটি সিনেমার পর নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য। অগ্নির ২ ঘন্টা ৩২ মিনিট আপনাকে পূর্নমাত্রায় বিনোদন দিবে বলেই আমার বিশ্বাস।
আমার রেটিং-৭.৫/১০