অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের জন্য অনুতপ্ত: সৈয়দ নাজমুস সাকিবের উদ্দেশে রাশিদ পলাশ
প্রায় আড়াই বছর আগে অভিনেতা, লেখক, সঞ্চালক ও উদ্যোক্তা সৈয়দ নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে রিভিউয়ের বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা দাবির অভিযোগ তোলেন নির্মাতা রাশিদ পলাশ। উপলক্ষ্য ছিল ‘পদ্মা পুরাণ’ নামের চলচ্চিত্র। ওই সময় বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে মানহানির লিখিত অভিযোগ করেন সাকিব, কিন্তু সেখানে কোনো সুরাহা হয়নি। এবার হঠাৎ-ই সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে রাশিদ পলাশ পুরো ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। জানালেন, কিছু মানুষের দেয়া ভুল তথ্যের মাধ্যমে তিনি প্ররোচিত হয়েছিলেন।
রাশিদ পলাশ ও সৈয়দ নাজমুস সাকিব
গতকাল রোববার (৭ এপ্রিল) ফেসবুকে ‘আত্মশুদ্ধি’ শিরোনাম দিয়ে রাশিদ পলাশ লেখেন, “২০২১ সালের ১৯ শে অক্টোবর বিকেলে সিনেমা নিয়ে লেখালেখির কারণে সৈয়দ নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে আমি অন্যের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে আমি আমার ভুল বুঝতে পারি এবং জানতে পারি এই তথ্যটি মিথ্যা ছিল। আমাদের সিনেমার প্রচারের কোন কাজের জন্য কোন টাকাপয়সা তিনি আমাদের কাছে দাবি করেননি, উল্টো আমার সিনেমার ইংরেজি সাবটাইটেল করে দিয়ে তিনি আমাকে সাহায্য করেছিলেন। আমি আশেপাশের অনেক মানুষের কথায় প্ররোচিত হয়ে সাময়িক উত্তেজনার বসে এই কাজটি করেছিলাম। তার সম্মানহানি করেছিলাম। আমার উচিৎ ছিল তার সাথে সরাসরি কথা বলা। আমি আমার এই অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের জন্য অনুতপ্ত। আশা করি সৈয়দ নাজমুস সাকিব আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।”
২০২১ সালে রাশিদ পলাশ অভিযোগ তুলে লিখেছিলেন, “তার মানে শুধু টাকা দিতে পারিনি বলে সিনেমার রিভিউ করলেন না সিনেমা প্রেমিক সৈয়দ নাজমুস সাকিব।
আপনাদের বাংলা সিনেমার প্রতি এই দরদটা মনে থাকবে ভাই। কি মনে হয়, আপনারা না লিখলে সিনেমা চলবে না? কিংবা টাকা না দিলে পোলাপান দিয়ে নেগেটিভ রিভিউ করাবেন?
দিন বদলে গেছে ভাই। আটকাতে পারবেন না। পদ্মাপুরান ঢাকার বাইরে যাচ্ছে, বাংলা সিনেমায় সুদিন ফিরছে,ইন্ডিয়ান সিনেমা বাজী হল থেকে নেমে যাচ্ছে, উঠছে পদ্মাপুরান, বাংলা সিনেমা, বাংলাদেশের সিনেমা।”
ওই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে সৈয়দ নাজমুস সাকিব আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘আপনি কোন যুক্তিতে এই আলাপ করলেন? একটা প্রমাণ দেখাতে পারবেন যে আমি টাকা চাইসি আপনার কাছে বা কারো কাছে লেখার জন্য? আপনার সিনেমার ইংরেজি সাবটাইটেল করার জন্য আমাকে দিলেন, নিজের ব্যক্তিগত ব্যস্ততার জন্য আমি সেটা করতে পারিনি, এরপরেও আমি আমার এক ছোট ভাইকে দিয়ে করালাম। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আপনার সিনেমাটা আমার ভাল্লাগে নাই। সেজন্য আমি কিছুই বলিনি। বললে শেষে আপনারাই বলেন- আপনাদের মত লেখকদের জন্য আমাদের সিনেমার উন্নতি হয় না। এত ভুল ধরেন কেন? আর সব ঠ্যাকা আমাকেই কেন নিতে হবে? সব কেন আমাকেই লিখতে হবে? আমার জীবন নাই? আপনার সিনেমা ভাল হলে আমি না লিখলে খারাপ হয়ে যাবে? এও সম্ভব? কনফিডেন্স নাই আপনার নিজের সিনেমার উপরে? লাস্ট অনেকদিন আমি দেশি কন্টেন্ট নিয়ে একদম লিখি না আপনাদের এরকম আচরণের জন্য। চন্দ্রাবতী কথা ভাল লেগেছিল, তাই নিজের তাগিদেই লিখেছি। ডিরেক্টরকে জিজ্ঞাসা করে দেইখেন কোন টাকা নিয়েছি কিনা। শুধু টাকার জন্য কাজ করলে, সিনেমার জন্য প্যাশন না করলে নিজের প্ল্যাটফর্ম সিনেগল্প থেকে আলাদা করে কন্টেন্ট বানাতাম না আপনার সিনেমার প্রসূন আজাদ আর সুমিত সেনগুপ্তকে নিয়ে। এখনও পেজে আছে সেটা। নিজের পেজ থেকে আপনার সিনেমার পোস্টার আর ট্রেলার শেয়ার দিতাম না যদি শুধু টাকার কথা ভাবতাম। চমৎকার প্রতিদান দিলেন ভালোবাসার।”
এরপর ১৯ অক্টোবর জাগো নিউজের একটি সংবাদে রাশিদ পলাশ বলেন, ‘একটি গ্রুপের সদস্য সৈয়দ নাজমুস সাকিব নামের একজন। তিনি বলেছেন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিলে আমার ছবিটি নিয়ে লেখালেখি করবেন। পজিটিভ রিভিউ দেবেন। আমি রাজি হইনি। পরে তিনি আর আমার সিনেমাটি নিয়ে একটি অক্ষরও লিখেননি। এমনকি জানতে পেরেছি ওই গ্রুপে অনেকেই আমার ছবিটি নিয়ে লিখতে চেয়েছেন কিন্তু সেইসব লেখা গ্রুপে এপ্রুভ করা হয়নি।’
একই দিন ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন সাকিব। যার একটি অংশে লেখেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনার জন্য পরিচালক রাশিদ পলাশকে আমি সবচেয়ে চমৎকার একটা শাস্তি দেব। আনফ্রেন্ডও করব না, ব্লকও করব না। তবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ফিরিয়ে না নিলে, অকাট্য তথ্যপ্রমাণ উপস্থিত না করলে, অথবা বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা না চাইলে আমি লিগ্যাল একশন নেব।’
এর চারদিন পর সাকিব জানিয়েছিলেন রাশিদ পলাশের বিরুদ্ধে পরিচালক সমিতিতে অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে এক পোস্টে সাকিব লেখেন, “আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনার চারদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও পরিচালক রাশিদ পলাশ তার অভিযোগের স্বপক্ষে কোন ধরনের তথ্য প্রমাণ হাজির করতে পারেন নি।
এমতাবস্থায় আমি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে অভিযোগ করলাম। পরিচালক সমিতির প্রতি আমার আস্থা রয়েছে, আশা করি তারা সঠিক ব্যবস্থা নেবেন।
যদি পরিচালক আমার বিরুদ্ধে আনিত মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার না করেন এবং নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা না করেন, তাহলে এরপরে যা আইনি পদক্ষেপ আছে- তা নিতে বাধ্য হব।
আমার যতটুকুই আজকে পরিচিতি বা জায়গা, তা অনেক কষ্টে অর্জন করা। সেই জায়গা নিয়ে প্রমাণ ছাড়া যে কেউ, যাচ্ছেতাই মন্তব্য করে পার পেয়ে যাবেন- তা আমি হতে দেব না।”
সব মিলিয়ে তর্ক-বিতর্কগুলো বাংলা চলচ্চিত্র বিষয়ক গ্রুপের প্রতি নেতিবাচকভাবে আঙুল তোলে। সেই সব তর্কের একটি সমাধান দেখা গেল রাশিদ পলাশের পোস্টে।