Select Page

অনালোচিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নায়িকা অঞ্জনা

অনালোচিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নায়িকা অঞ্জনা

 আমেরিকা মাই লাভ আমেরিকা, জীবন এখানে দ্রুতগামী, তারই তালে তালে চলছি আমি চলি আমি

‘দেশ-বিদেশ’ ছবির অনবদ্য একটি গান। রুনা লায়লার দুর্দান্ত কণ্ঠের সাথে গ্ল্যামার নিয়ে পর্দায় হাজির হন একজন অভিনেত্রী। তিনি অঞ্জনা।  

সোনালী দিনের চলচ্চিত্রের অন্যতম অভিনেত্রী অঞ্জনা সুলতানা। ডাগর চোখের এ অভিনেত্রী নিজ যোগ্যতায় ঢালিউডে কাজ করেছেন। তাঁর সময়ে বহাল তবিয়তে শাবানা, ববিতা, কবরী, অলিভিয়া-দের মতো প্রভাব বিস্তারকারী তারকারা ছিলেন। তাদের মধ্য থেকেও তিনি নিজের যোগ্যতায় দর্শক মন জয় করেন। ন্যাচারাল অভিনয় তো করতেনই পাশাপাশি নাচেও ছিলেন পারদর্শী।

জন্ম ২৭ জুন ১৯৬৫। চাঁদপুর জেলায় বাড়ি। নৃত্যশিল্পী হয়ে মঞ্চে কাজ শুরু করেন। প্রথম ছবি ‘সেতু’ কিন্তু পর্দায় আসেন ‘দস্যু বনহুর’ ছবিতে অভিনয়ে। ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাও করেছেন কিছু ছবি। 

উল্লেখযোগ্য ছবি : সেতু, অশিক্ষিত, প্রিয় বান্ধবী, গাঙচিল, চোখের মণি, জিণ্ঞ্জির, ছোট মা, রূপালি সৈকতে, সখি তুমি কার, যাদুনগর, রজনীগন্ধা, আখেরি নিশান, অন্ধবধূ, অংশীদার, মাসুম, অভিযান, ফুলেশ্বরী, গুণাই বিবি, গাঙচিল, পরিণীতা, আপোষ, আনারকলি, রাজবাড়ি, ভাইজান, রাম রহিম জন, বিধাতা, দেশ বিদেশ, নেপালী মেয়ে, হুংকার, বিষকন্যার প্রেম, অগ্নিপুরুষ, সিন্দাবাদ, হুঁশিয়ার, বৌরাণী, নান্টু ঘটক, বিচারপতি, প্রতিরোধ, মোহনা, হিমালয়ের বুকে, আশার প্রদীপ।

জনপ্রিয় গান :

ঢাকা শহর আইসা আমার আশা পুরাইছে – অশিক্ষিত

চলে আমার সাইকেল – নান্টু ঘটক

ও মিষ্টি ভাবী রে – রজনীগন্ধা

মাই লাভ এমেরিকা – দেশ বিদেশ

বাবারে বাবা কই দিলা বিয়া – অভিযান

জীবনের গল্প এত ছোট নয় – রাম রহিম জন

অঞ্জনার মধ্যে সৌন্দর্য, অভিনয়গুণ দুটোই ছিল। তাঁর সময়ের প্রথম সারির নায়কদের সাথেই কাজ করেছেন। লাক্সের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবেও দেখা গেছে তাঁকে। এশিয়া মহাদেশীয় নৃত্য প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে হরর ঘরানার ছবি মাত্র কয়েকটি হয়েছে। এর মধ্যে সাদাকালো সময়ে কাজী হায়াৎ নির্মিত অসাধারণ হরর ছবি ‘রাজবাড়ি’-র নায়িকা ছিলেন অঞ্জনা। ডাবল রোলের এ ছবিতে তাঁর অভিনয় অসাধারণ ছিল। এ ছবিতে তার হরিণী চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগে। চরিত্রটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ছবিতে তার অসাধারণ একটি গান আছে। ছবির ফিনিশিং-এ অঞ্জনার চরিত্রটি বিশেষত্ব পেয়েছে। নায়করাজ রাজ্জাকের সাথে প্রায় ২৭ টি ছবির মধ্যে ‘অভিযান’ ছবিটি ছিল সবচেয়ে ব্যতিক্রমী কাজ তাঁর। জসিম প্রযোজিত ‘ভাইজান’ ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাঁর চরিত্র। ছবি ব্যবসাসফল হলে পার্টি দেয়ার কথা ছিল জসিমের। ছবি হিট হয়ে যায়। প্রায় ২ কোটির মতো লাভ হয় সেখান থেকে ৫ লাখ টাকার চেক পাঠিয়েছিল অঞ্জনার, পার্টিও দিয়েছিল। ভারতের সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তীর সাথে ‘অর্জুন’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি প্রশংসিত হন। যৌথ প্রযোজনার একাধিক ছবিতে দেখা গেছে তাকে এমনকি বিগ বাজেটের ছবি যেগুলো বিদেশে চিত্রায়িত এ ধরনের ছবিতে তাকে বেশ দেখা গেছে।

তিনি প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ‘গাঙচিল’ ছবিতে ১৯৮১ সালে। দ্বিতীয়বার ১৯৮৬ সালে ‘পরিণীতা’ ছবির ললিতা চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য।

বাচসাস পুরস্কার পান তিনবার।

তিনি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কার ছবিতে অভিনয় করেছেন। দেশের বাইরে মিঠুন (ভারত), নাদিম, জাভেদ শেখ, ফয়সাল (পাকিস্তান), শিবশ্রেষ্ঠা (নেপাল) একাধিক নায়কদের সাথে অভিনয় করেছেন।

অঞ্জনার বর্তমান ইমেজ অনেকটাই সমালোচিত আকারে আছে। তার বয়স অনুযায়ী নিজেকে মিডিয়াতে প্রকাশ করার যে ভঙ্গি তাতে সমস্যা আছে। সচেতন থাকা উচিত।

চলচ্চিত্র তারকাদের মধ্যে খুবই কম আলোচনা পান অভিনেত্রী অঞ্জনা। তারপরেও তাঁর একটি সফল অধ্যায় সমৃদ্ধ করেছে আমাদের চলচ্চিত্রকে।


Leave a reply