‘অন্তর্জাল’ শুরুর আগে নতুন স্টুডিও’র গল্প শোনালেন দীপন
বুধবার শুটিং ফ্লোরে যাচ্ছে ‘ঢাকা অ্যাটাক’-খ্যাত দীপংকর দীপনের নতুন চলচ্চিত্র ‘অন্তর্জাল’। ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ, বিদ্যা সিনহা মিম ও সুনেরাহ বিনতে কামাল।
এ প্রসঙ্গে নির্মাতা দীপন বললেন, ‘‘লকডাউন শেষে ১১ আগস্ট থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ছবির প্রিন্সিপাল ফটোগ্রাফি। এর আগে বিভিন্ন সময়ে লুক ও অন্যান্য টেকনিক্যাল বিষয়ের জন্য কিছু টেস্ট হলেও কাল থেকে অফিসিয়ালি শুরু হতে যাচ্ছে আমার চতুর্থ সিনেমাটির শুটিং। সবার শুভকামনা ও দোয়া চাই; যেন আমরা ঠিকভাবে, সুস্থতা বজায় রেখে ‘অন্তর্জাল’ ছবির শুট শেষ করতে পারি। কারণ, এই বছর ডিসেম্বরেই সিনেমাটি মুক্তি দিতে হবে।’’
এ কথা পাশাপাশি ফেসবুকে দীপংকর দীপন জানালেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মোশন পিপল স্টুডিও সম্পর্কে। দীর্ঘ পোস্টে তুলে ধরেন মুম্বাইয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা ও ম্টুডিও কীভাবে কাজ করে। সঙ্গে যোগ করলেন নির্মাণাধীন সেটের ছবি।
দীপংকর দীপন লেখেন—
একটা জরুরী কথা।
লকডাউন শেষে কাল ১১ আগস্ট থেকে শুরু হতে যাচ্ছে অন্তর্জাল ছবির প্রিন্সিপাল ফটোগ্রাফি। এর আগে বিভিন্ন সময়ে লুকও অন্যান্য টেকনিকাল বিষযের জন্য কিছু টেস্ট শ্যুট হলেও কাল থেকে অফিশিয়ালি শুরু হতে যাচ্ছে আমার চতুর্থ সিনেমা অন্তর্জাল ছবির শ্যুটিং। এই ছবিটি আমার জন্য খুব স্পেশাল কয়েকটি কারনে-
১. এটা মোশন পিপল স্টুডিও এর প্রথম সিনেমা। আমরা মোশন পিপল স্টুডিও তৈরী করেছি কয়েকজন বন্ধু ও সমমনা মানুষ মিলে যারা বাংলাদেশের সিনেমাকে নিয়ে যেতে চায় বিশ্বে সম্মানের স্থানে। মোশন পিপল স্টুডিওস বিশ্বাস করে একটি দেশ সংস্কৃতিগত ভাবে কতটা শক্ত, কতটা আধুনিক, সেই জাতির শেকড় কতটা গভীরে তার এটার পরিচয় ফুটে উঠে সেই জাতির সিনেমায়। মানুষ একটা দেশকে মাপে সেই দেশের সিনেমা দেখে। মোশন পিপল স্টুডিও ভাবমুর্তিটা উজ্জ্বল করতে চায়।
২. আমি যখন মুম্বাইকে কাজ শুরু করি – ২০১২ সালে। তখন সেখানে সিনেমায় কর্পোরেট কালচার, স্টুডিও প্রসেস চালু হয়ে গেছে পুরোদমে। ইন ফ্যাক্ট ভারতীয় সিনেমায় উন্নতি হওয়া শুরু করে যখন ইউটিভি, রিলায়েন্স, ভায়াকম ১৮ এর মত কর্পোরেট সংস্থ্যাগুলো সিনেমা মেকিং এর সাথে যুক্ত হয়, কারণ সিনেমা যতটা ক্রিয়েটিভ সেক্টর ঠিক ততটাই বিজনেস সেক্টর। অন্য ব্যবসার মতই এখানে ম্যানেজমেন্ট, সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং, কিউ সি খুব জরুরী, টেকনিকাল স্টেসিফিকেশন খুব জরুরী, খেয়াল করে দেখবেন, উন্নত দেশের মেইনস্ট্রিম ছবি ভাল হয় আবার খুব বাজেও হয়- কিন্তু সব ছবি টেকনিকালি পারফেক্ট থাকে। সারা বিশ্বেই একই ভাবে সিনেমা ইন্ড্রাস্ট্রী কাজ করে, কারণ দিন শেষে বিষয়টা ইন্ডাস্ট্রী, কাজের প্রসেসটা একই। এই প্রসেসটা এক্সিকিউট করে স্টুডিও। তখন ফিল করেছিলাম, সিনেমায় স্টুডিও কালচারটা দরকার। সেটা পুরোপুরি করতে পারছি চতুর্থ সিনেমায় এসে, সিস্টেম, ট্রান্সপারেন্সি ডেভেলপ করেছি আন্তর্জাতিক মানে। মোশন পিপল স্টুডিওস যেহেতু স্পেলবাউন্ড লিও বার্নেট এর মত এজেন্সী এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান- যারা বিজ্ঞাপন বানায় – তাদের সহযোগিতায় পুরো কর্পোরেট নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে প্রতিটি কাজ। লাইন প্রডিউসার, এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার, একাউন্টস, অডিট, টেকনিকাল স্পেসিফিকেশন চেকিং, বাজেট কন্টোল, বেস্ট আউটপুট উইদিন দা বাজেট সব এনশিওর করা – সব মিলিয়ে চলছে এই বিশাল কর্ম। এটা আমাদের একটা টেস্ট, সফল হওয়াটা জরুরী। কারণ মোশন পিপলে শুধু আমি নই, আরো অনেক ছবি বানাবে। মোশন পিপল সফল হলে ইন্ডাস্ট্রীর লাভ, দেশের লাভ।
৩. আইটি সেক্টর বাংলাদেশের দ্রুত অগ্রসরহওয়া ভীষন সম্ভাবনায় একটি খাত। প্রথম যখন এই সিনেমা নির্মানের অফার পাই। সেই ২০১৯ এর অক্টোবর সেই থেকে আমি আইটি সেক্টরে আমি সরাসরি প্রবেশ করে। তখন একটি ছবি দিয়েছিলাম AIUB CSE বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে- ক্যাপশনে লিখেছিলাম – ভর্তি হলাম। সেটা ছিল সিম্বলিক। সেই থেকে পড়াশোনা শুরু গবেষণা শুরু করেছি। প্রায় দেড় বছর টানা কাজ করার পর কাল শুরু হচ্ছে সেই ছবির শ্যুটিং। আগামী বাংলাদেশের যোদ্ধা আমাদের সাইবার যোদ্ধারা। তাদের নিয়ে তৈরী হচ্ছে এই ছবি, যেটা আমার কাছে খুব স্পেশাল। প্লট হিসাবে এই সিনেমা আমার আগের সিনেমা থেকে খুব আলাদা। একটু জটিল প্লট সে সহজ করে বলা হয়েছে এই সিনেমায়- আয়োজন বড়, ছবির ক্যানভাসটা খুব বড়। গল্পের প্রয়োজনে আমরা একটা স্মার্ট লুক আনতে চেষ্টা করছি, সেটাও বেশ চ্যালেঞ্জিং, থ্রিলিং। সিনেমা মেকিং এই থ্রিলটা আমি এনজয় করি। সেই থ্রিলটা এই সিনেমায়- নির্মাণ থেকে স্ক্রিণ সব জায়গায় ভরপুর। লুকটা কনফার্ম করতে সেটে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ভাইয়ের অনুপ্রেরণা ও আমাকে দেয়া সম্মান ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি। সেই সাথে হায়দার ভাই, আরেফিন ভাই আর খসরু ভাই- কোর টিম হিসাবে এই সিনেমার কাঠামোটা তৈরী করেছেন- মোশন পিপলটা তাদের, সাথে আমি আছি। কাওসার ভাই সহ স্পেলবাউন্ড পুরো টিম, মোশন পিপলের জিমি, সীমান্ত, আতিক, আবির, অয়ন- টিমওয়ার্কের মধ্য দিয়ে কাজটা হয়েছে। গবেষক ও লেখক টিমের আশা জাহিদ, সাইফুল্লাহ রিয়াদের সাথে ছুটির দিনগুলোতে একাধিক বার যশোর শেখ হাসিনা আইটি ও সফ্টওয়ার পার্কে দিনের পর দিন আলোচনা , আড্ডা , তর্ক, ঝগড়ার মধ্য দিযে স্ক্রিপ্টের কাজটা হয়েছে। শিল্পী ও কলাকুশলীদের নিয়ে আমি খুব হ্যাপী। সবাই ছবির প্রিপ্রডাকশনে অনেক সময় দিয়েছে। অনেক বেশি। তারা ভালবেসে কাজটা করেছে- তবুও আমরা মোশন পিপল কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। মার্কেটিং স্পনসর টিম অনেক কাজ করেছে। চিরকুট এই ছবির গান করছে। সব মিলিয়ে যেভাবে আমরা ডিজাইন করছিলাম সেভাবেই আছে সব কিছু। কোভিড সেফটি নিশ্চিত করা হয়েছে। স্যানিটাইজেশন, বাইরে কাউকে এলাউ না করা, সব সময় মাস্ক নিশ্চিত করা- নিরাপদ থাকার চেষ্টা তো করছি- বাকীটা সৃষ্টিকর্তার হাতে।
আপনাদের শুভকামনা ও দোয়া চাই যেন আমরা ঠিকভাবে, সুস্থতা বজায় রেখে অন্তর্জাল ছবির শ্যুট শেষ করতে পারি। কারণ এই বছর ডিসেম্বরেই ছবিটি আপনাদেরন সামনে নিয়ে আসার ইচ্ছা আমাদের। বাংলাদেশী সিনেমা অমিত সম্ভাবনায় বিশ্বাস রাখুন, অনেক মেধাবী, সৎ পরিশ্রমী মানুষ সিনেমায় কাজ করছে, তাদের যুদ্ধে বিশ্বাস রাখুন। আমাদের আপনার প্রার্থনা ও ভালবাসায় রাখুন।