Select Page

অপারেশন অগ্নিপথ: সমঝোতা ব্যর্থ হওয়ায় মামলার পথে শাকিব খান

অপারেশন অগ্নিপথ: সমঝোতা ব্যর্থ হওয়ায় মামলার পথে শাকিব খান

 ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার অন্যতম প্রযোজক রহমত উল্ল্যাহ সম্প্রতি শাকিব খানের বিরুদ্ধে আর্থিক ক্ষতি ও সহপ্রযোজককে ধর্ষণসহ একাধিক অভিযোগ এনেছেন। এই ঘটনায় মীমাংসার পথ খুঁজতে একটেবিলে বসেন শাকিব ও প্রযোজক। এক ঘণ্টার ওই আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার এবার মানহানির হামলা করতে আদালতে গেছেন ঢাকাই নায়ক।

প্রযোজকের দাবি, শাকিব নিজেই উদ্যোগী হয়ে তাঁর সঙ্গে মীমাংসায় বসতে চেয়েছেন। গত ১৬ মার্চ বিকেল পাঁচটা থেকে এক ঘণ্টা ধরে চলে এই মীমাংসা।

এ বিষয়ে প্রযোজক রহমত উল্ল্যাহ বলেন, ‘আমরা বসেছিলাম। কিন্তু ঘটনার এখনো কোনো মীমাংসা হয়নি। তবে শাকিব আমাকে আলোচনার মাধ্যমে আশ্বাস দিয়েছেন, হয়তো তিনি ছবি করে দেবেন অথবা তিনি বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত দেবেন। তখন আমি তাঁকে বলেছি, অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। এখন আর আমি ছবিটি করব না। তখন শাকিব খান নিজ থেকেই বলেছেন, ‘‘আমরা প্রযোজক খুঁজে সিনেমাটির কাজ শেষ করব।”’

প্রযোজক দাবি করেন, শাকিব খান ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি আছেন। তিনি এ সময় জানান, তাঁর সিনেমায় লগ্নিকৃত অর্থের পরিমাণ দুই কোটি টাকা।

ঘটনার মীমাংসায় উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক সমিতির নেতা খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা বিকেল ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত মীমাংসার জন্য বসেছিলাম। আমরা মীমাংসার লক্ষ্যে বসেছিলাম, আজ আমাদের আলোচনা সবে শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো মীমাংসা হয়নি। এটুকুই।’

এর দুদিন পর গতকাল শনিবার (১৮ মার্চ) রাতে প্রযোজক রহমত উল্ল্যাহার নামে মানহানি মামলা করতে গুলশান থানায় উপস্থিত হন শাকিব খান। তবে পুলিশ মামলাটি নেয়নি। মামলাটি আদালতে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

‌‌‘আপনার ইস্যু বিগ ইস্যু, কিন্তু মামলা নেওয়া যাবে না। বিষয়টা যেহেতু শাকিব খান তাই আমার এখন অনেকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমি ঊর্ধ্বতন কারও সঙ্গে কথা না বলে এ মামলা নিতে পারব না। যেহেতু এখন অনেক রাত হয়ে গেছে তাই কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব না।’

শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে গুলশান থানায় হাজির হলে শাকিব খানকে ঠিক এভাবেই বলেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরমান আলী।

আরও বলেন, শাকিব খান যে ধরনের অভিযোগ করতে এসেছেন তা থানায় নয় আদালতে করতে হবে। এ ধরনের অভিযোগ থানায় নেওয়া সম্ভব না। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমনও বলেন, ‘‌আমি মামলা নিতে পারব না। আর মামলা নেই নাই— এটা চাইলে কারও কাছে অভিযোগ করতে পারেন আমার বিরুদ্ধে।’

শাকিব খানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খায়রুল হাসান বলেন, ‘যেহেতু এটা কগনিজেবল অপরাধ ছিল, তিনি  ইচ্ছা করলে মামলা নিতে পারতেন। কারণ এই ধরনের অভিযোগ সাধারণত থানায় রুজু করা হয়। আর যেগুলো নন কগনিজেবল অপরাধ সেগুলো আমরা আদালতে রুজু করি। কিন্তু এরপরও তিনি (ওসি) কেন মামলা নেন নাই এটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন।’

আইনজীবী খায়রুল হাসান বলেন, ‘যেহেতু আমাদের বিষয়টা ছিল চাঁদাবাজির দণ্ডবিধির ৩৮৫ ধারায় এবং যেটা সাধারণত রুজু করা হয় থানায়। আমরা সেই অনুযায়ী থানায় অভিযোগ রুজু করতে গেলাম। কিন্তু ওসি সাহেব কী কারণে, কী অদৃশ্য কারণে উনি আমাদের অভিযোগ আমলে নেননি এটা আমরা জানি না। থানায় অভিযোগ না নিয়ে উনি আমাদের পরামর্শ দিচ্ছেন আমরা যেন আদালতে মামলা করি।’

এ দিকে আগের তিনদিন মুখ না খুললেও থানা থেকে বেরিয়ে শাকিব খান জানান, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। এ কারণে তিনি ভুয়া প্রযোজকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন। প্রযোজক নামধারী এই প্রতারক যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সেই কারণে আইনি ব্যবস্থা নিতে থানায় গিয়েছিলেন তিনি। মিথ্যা অভিযোগ সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত যেন অন্যায় অভিযোগকারী দেশ ছাড়তে না পারে সে কারণে এ ব্যবস্থা নিচ্ছেন তিনি।

শাকিব খান বলেন, ‘রহমত উল্ল্যাহ সিনেমার ঘাড়ে বন্দুক রেখে টাকা দাবি করেছেন। কাল আমি মামলা করতে আদালতে যাব। অস্ট্রেলিয়ায় আমার বিরুদ্ধে মামলা হলে তো সেখান থেকে চলে আসতে পারতাম না।’

শাকিব খান বলেন, “রহমত উল্ল্যাহ নামে যিনি ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার প্রযোজক দাবি করছেন তিনি আসলে এ ছবির আসল প্রযোজক নন। সিনেমাটির আসল প্রযোজক হচ্ছেন ভারটেক্স মিডিয়ার জানে আলম। যা চুক্তিপত্রেও লিখিত আছে। বানোয়াট মিথ্যাচার করেছেন তিনি। অনেক লোক এতে জড়িত।” সেই লোকেরা তাকে ইন্ধন দিয়েছেন বলেও দাবি করেন শাকিব খান। বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। এ কারণে আমি ভুয়া প্রযোজকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।’

রহমত উল্ল্যাহর অভিযোগ, ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার দৃশ্যধারণের সময় এক নারী সহপ্রযোজককে ‘ধর্ষণ’ করেন শাকিব খান, এরপর তিনি দেশে পালিয়ে আসেন। এই ঘটনা নিয়ে ছয় বছর পর গতকাল বুধবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে শাকিবের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন প্রযোজক। অভিযোগে প্রযোজক উল্লেখ করেন, শাকিব খানের বিরুদ্ধে সেই ভুক্তভোগী অস্ট্রেলিয়া পুলিশের কাছে একটি লিখিত অভিযোগও করেছিলেন। সেই অভিযোগে নিজেকে একজন সাক্ষী হিসেবে দাবি করেন রহমত উল্ল্যাহ।

সূত্র/ প্রথম আলো


মন্তব্য করুন