Select Page

অভিনেতা-নির্মাতা দুই পরিচয়েই উজ্জ্বল লাভলু

অভিনেতা-নির্মাতা দুই পরিচয়েই উজ্জ্বল লাভলু

১৯৯১ সাল। ইমদাদুল হক মিলনের রচনায় জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘কোন কাননের ফুল’-এ অভিনয় করেছিলেন একঝাঁক তারকা, তাদের মাঝে ‘বারেক’ নামের খল চরিত্রে নজর কেড়েছিলেন নবীন এক অভিনেতা। এর আগে মঞ্চে দীর্ঘদিন কাজ করলেও টিভির দর্শকদের কাছে এটাই প্রথম পরিচিতি। এই ধারাবাহিকে তার সংলাপ ‘যান হাপ্পেন পড়ে আসেন’ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি পেলেও মন পড়েছিল ক্যামেরার পেছনে। বিজ্ঞাপনে ক্যামেরাম্যান হিসেবে কাজ করতে লাগলেন, শুরুর দিকে অনেক প্যাকেজ নাটকে ছিলেন চিত্রগ্রাহক। এক সময় নাম লিখালেন নির্মাণে, একের পর এক জনপ্রিয় নাটক নির্মাণ করেছেন, যা নিয়ে যায় আলোচনার শীর্ষে। বাংলাদেশের নাট্যজগতে জনপ্রিয় পরিচালকদের তালিকা করলে তিনি থাকবেন একেবারে প্রথমদিকেই; তিনি এক নামে পরিচিত সালাউদ্দিন লাভলু

‘গোর’, ১৯৯৮ সালে উনার নির্দেশনায় এটি পেয়েছিল সেরা নাটকের খেতাব, তিনি পেয়েছিলেন সেরা নির্দেশকের পুরস্কার। ‘কৈতব’ দিয়ে নির্মাণ যাত্রা শুরু হলেও গোরের মধ্য দিয়ে অনেকজনের একজন হয়ে উঠেন। একুশে টিভি চালু হবার পর নবীন নির্মাতারা পেয়ে গেলেন নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ, সেই সুবাদে লাভলু নির্মাণ করেন ‘গহর গাছী’,এটিই উনার নির্মিত প্রথম ধারাবাহিক। খুবই প্রশংসা পেয়েছিল। মামুনুর রশীদের হাত ধরে আরণ্যকের হয়ে যে মঞ্চ নিবেদিত কর্মী হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন, তা টেলিভিশনে ধীরে ধীরে পরিশ্রম আর একাগ্রতার ফলে তাকে প্রতিষ্ঠা দেয়। উনার নামেই দর্শকেরা নাটক দেখেছেন।

নব্বই দশকের সহকর্মীদের সঙ্গে লাভলু

‘রঙের মানুষ’, যে ধারাবাহিক নাটক উনার ক্যারিয়ারের সেরা কাজ হিসেবে ধরা হয়। এনটিভিতে প্রচারের পর এতটাই জনপ্রিয় হয়ে সালাউদ্দিন লাভলু হয়ে উঠেন নির্মাতা জগতের মহারথী। গ্রাম্যভিত্তিক নাটক জনপ্রিয় হতে লাগলো ঢাকা শহরের জ্যাম পেরিয়ে প্রান্তিক গ্রামেও। রঙের মানুষের রেশ না কাটতেই এলো ‘ভবের হাট’, মাসুম রেজার সঙ্গে গড়ে উঠেছিল জুটি। এর মাঝেই নির্মাণ করলেন চলচ্চিত্র ‘মোল্লা বাড়ির বউ’,সময়ের সেরা তারকাদের নিয়ে করা এই সিনেমা হয়েছিল ২০০৫ সালে সেরা ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র, এখনো জনপ্রিয়। রঙের মানুষ ও ভবের হাট দিয়ে শুধু তিনিই জনপ্রিয়তা পাননি, অনেক অভিনয়শিল্পীরই ক্যারিয়ারে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

‘ঘরকুটুম’ দিয়ে শুরু হয় বৃন্দাবন দাসের সঙ্গে পথচলা। সময়ের পরিক্রমায় লাভলু-বৃন্দাবনকে সবচেয়ে জনপ্রিয়  নির্মাতা-নাট্যকার জুটি বললেও বাহুল্য হবে না। সেটা একক নাটক বা দীর্ঘ ধারাবাহিক; বেশিরভাগই পেয়েছে জনপ্রিয়তা। ‘সাকিন সারিসুরি’ ও ‘হাড়কিপ্টে’ এই দুই ধারাবাহিকের জনপ্রিয়তা ইউটিউবের যুগে এসেও অকল্পনীয়, এছাড়া সার্ভিস হোল্ডার, আলতা সুন্দরী, কথা দিলেম তো, পাত্রী চাই, ওয়ারেন, হিরোসহ অনেক নাটকের জুটি তারা। এর বাইরে কবিলয়তনামা, সোনার পাখি রুপার পাখিও বেশ আলোচিত। নিজের ঘরানার বাইরে গিয়ে বাজিকর, শাস্তি নাটকগুলো বেশ সমাদৃত। চঞ্চল চৌধুরী, শাহনাজ খুশি, মোশাররফ করিম থেকে প্রাণ রায়, আ খ ম হাসান, শামীম জামান সবার ক্যারিয়ারেই বিশেষ মাত্রা এনে দিয়েছেন। এমনকি এটিএম শামসুজ্জামান,আমিরুল হক চৌধুরী,শিরিন আলমের মত বয়োজ্যেষ্ঠ অভিনয়শিল্পীদেরও।

‘কোন কাননের ফুল’ দিয়ে অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন তা আরো প্রকট হয় ‘আজকের প্রতিবাদ’ ছবিতে ছাত্র সন্ত্রাসীর চরিত্রে অভিনয় করে। তবে এন্টি হিরোর চরিত্র সেখানেই বিরতি দেন, টুকটাক অভিনয় করলেও কমেডির দিকে বেশি ঝোঁক ছিল। নিজের নির্মিত নাটকগুলোতে কম বেশি অভিনয় করেছেন, সেখানেও সফল। ‘লাল সবুজ’ ছবিতে আবার আসেন খল ভূমিকায়, রাঙা মামা নামে এখনো পরিচিত তিনি। ‘ব্যস্ত ডাক্তার’ উনার অভিনীত জনপ্রিয় ধারাবাহিক। ‘সাপলুডু’র পর সর্বশেষ ওয়েব সিরিজ ‘বলি’তে আবার অভিনয়ে দেখা গেছে।

সালাউদ্দিন লাভলু আগের মত ছন্দে নেই, দর্শকরা হতাশই হন। তিনি ফিরে আসবেন স্বমহিমায়, এটাই একমাত্র প্রত্যাশা শুভাকাঙ্ক্ষীদের।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

চলচ্চিত্র ও নাটক বিষয়ক লেখক

মন্তব্য করুন