অরুণ চৌধুরীর কথা
ছোট ছোট ঢেউ, অন্ধ শিকারী, অপরাজিতা …. নব্বই পরবর্তী সময়ে হুমায়ূন আহমেদের নাটকের বাইরে অন্যতম তিনটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক।তিনটি নাটকই নির্মাণ করেছিলেন জনপ্রিয় রোমান্টিক নাট্যনির্মাতা অরুণ চৌধুরী। তিনি তারকাবহুল নাটক বানানোর জন্য বেশ বিখ্যাত ছিলেন। এক ‘ছোট ছোট ঢেউ’ ধারাবাহিকেই অভিনয় করেছিলেন সেই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় চার টিভি তারকা জাহিদ হাসান ,বিপাশা হায়াত, শমী কায়সার ও তৌকীর আহমেদ।এছাড়া নোবেল, সুইটি, শিমুল, বিজরী, তানিয়া আহমেদরা তো ছিলোই, শুভ্রদেবের কন্ঠে সূচনা সঙ্গীতটাও জনপ্রিয় হয়েছিল। এছাড়া জাহিদ,মাহফুজ তারিন অভিনীত ‘অপরাজিতা’ ছিল বিদেশে ধারণকৃত প্রথম ধারাবাহিক নাটক।
নাটক নির্মানের আগে তিনি নাট্য রচনায় ব্যস্ত ছিলেন, সেইখানেও তিনি নিজেকে সমৃদ্ধ করেছিলেন।সালমান শাহ অভিনীত জনপ্রিয় নাটক ‘নয়ন’, মৌসুমী অভিনীত প্রথম নাটক ‘আড়াল’, নোবেল ও মৌ জুটির প্রথম নাটক ‘কুসুম কাঁটা’,কিংবা বিপাশা ও শমীর একসাথে প্রথম নাটক ‘স্পর্শ’র ও রচয়িতা তিনি,নাটকগুলো তখন বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। খুব সম্ভবত ‘স্পর্শ’ উনার লেখা প্রথম নাটক,যেটি পরবর্তীতে তিনি আবার ‘দূরত্ব’ নামে নির্মান করেন।চলতি দশকের শুরুর দিকে হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় দুটি উপন্যাস লীলাবতী ও রুমালী নামে দুটি ধারাবাহিক নাটক নির্মান করেছিলেন,এই দুটিও জনপ্রিয় হয়েছিল।আনন্দধারার সম্পাদকের পদ থেকে সরে যাবার পর তিনি চ্যানেল আইতে যোগ দেন,তখন তিনি শুধু ফরিদুর রেজা সাগরের গল্প নিয়ে ‘বাড়ি’ সিরিজের নাটক নির্মান করতেন,সেইখান থেকে ‘এই বাড়ি সেই বাড়ি’ আলোচিত হয়েছিল। এখন আর তিনি নাটক নির্মান করেন না। উনার স্ত্রী হচ্ছেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নারী নাট্য নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। চয়নিকার ও কিছু নাটক তিনি লিখেছেন,এর মধ্যে আকাশ জোড়া মেঘ, সোনালী কলম,মানুষ মাত্র দুইজন অন্যতম। এছাড়া অস্তিত্ব,ফিরে আসো যতবার,ভালোবাসার বৃষ্টি,কাগজের ফুল,স্বপ্নে পাওয়া মানুষ উনার ক্যারিয়ারে অন্যতম নাটক।
এই মুহুর্তে যারা নাট্যনির্মাতা হিসেবে জনপ্রিয় আছেন,তাদের চলচ্চিত্রে আসার জন্য যেমন অপেক্ষায় আছি তেমন নব্বই দশকে তিনি সিনেমাতে আসবেন এমন অপেক্ষা করতেন দর্শকরা। কিন্তু বিধিবাম,তিনি আর চলচ্চিত্র নির্মানে আসেন নি। অবশেষে গত বছর ২০১৮ সালে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় প্রথম ছবি নির্মাণ করলেন ‘আলতা বানু‘। অনেকটা আড়ালে অগোচরেই মুক্তি পেল ছবিটি, যেটা বিস্ময়জনক। উনার সুবর্ণ সময়ে চলচ্চিত্র বানালে অবশ্যই ভিন্ন ফল আসতো। প্রথম ছবি নির্মাণ করেই তিনি থেমে যাননি, এই বছরেই বানিয়েছেন ‘মায়াবতী‘। দুইটাই নারীকেন্দ্রিক ছবি। মায়াবতীতে নাম ভূমিকায় আছে তিশা,সঙ্গে ইয়াশ রোহান।
আলতাবানু দেখে প্রায় সবার ই মন্তব্য ছিল প্রশংসনীয়, তবে বাজেটের স্বল্পতা ছিল লক্ষনীয়৷ সময়ের বিচারে এক সময় উনার নাটকে আরো বেশি বাজেট থাকতো। মায়াবতীও বড় বাজেটের ছবি নয়,তবে সুন্দর গল্প আছে। আর উনার নির্মাণের গুণে ছবিটা দর্শকরা পছন্দ করবেন এই আশা রাখি।
অরুণ চৌধুরীর নাটকে গান অত্যন্ত ভূমিকা রাখতো,বিশেষ করে শুভ্রদেবের গান। মায়াবতীতে এখন পর্যন্ত একটি গান শ্রোতাদের সামনে এসেছে,চিরকুটের এই গানটি শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে। মায়াবতীয়ে তিশা- ইয়াশের পাশাপাশি অভিনয় করেছে রাইসুল ইসলাম আসাদ, ফজলুর রহমান বাবু , দিলারা জামান সহ আরো বেশ সংখ্যক গুণী অভিনয় শিল্পী।
১৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাচ্ছে এই ‘মায়াবতী’ সিনেমাটি, দর্শকরা মুগ্ধতা নিয়ে সিনেমা হল থেকে ফিরবেন এই প্রত্যাশা করি।