Select Page

অসাধারণ এক গীতিকার কাওসার আহমেদ চৌধুরী

অসাধারণ এক গীতিকার কাওসার আহমেদ চৌধুরী

এই মানুষটিকে এখন অনেকেই চেনেন দৈনিক প্রথম আলোতে রাশিফল নিয়ে লেখার জন্য। অথচ আমার সমবয়সী ও অগ্রজ বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে তিনি পরিচিত এক অসাধারণ গীতিকার হিসেবে, যার নাম কাওসার আহমেদ চৌধুরী। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, কবি, চিত্রশিল্পী, চিত্রনাট্যকারও। তবে সব কিছু ছাপিয়ে আমাদের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছেন কালজয়ী অনেক গানের প্রিয় গীতিকার হিসেবে।

১৬ ডিসেম্বর ১৯৪৪ সালে সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন কাওসার। কিশোর বয়সেই কলকাতার দেশ পত্রিকায় কবিতা প্রকাশিত হয়। ছোটবেলা থেকে লেখালেখি করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ভর্তি হওয়ার পর স্বপ্ন দেখেন চিত্রশিল্পী হওয়ার। কিন্তু কিছুদিন পর চলচ্চিত্র পরিচালক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।

বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের সাথে পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব। ঋত্বিকের কাছ থেকে শিখেছেন অনেক কিছুও। যেমন, চিত্রনাট্য তৈরির খুঁটিনাটি। ঋত্বিকের শেষ সিনেমা ‘যুক্তি, তক্কো আর গপ্পো’তে একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেলেও ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় আর অভিনয় করা হয়নি। তারপরও চলচ্চিত্র নির্মাণের ইচ্ছায় দেশ ও বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন কিন্তু নির্মাণ আর করতে পারলেন না।

তখন ১৯৮০ সালের দিকে সরকারি কিছু প্রকল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। পরিবার পরিকল্পনার ওপর বাংলা ও ইংরেজিতে বিভিন্ন তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এ ছাড়া বিজ্ঞাপন নির্মাণেও কাজ করেন। বিটিভিতে একসময়ের প্রচারিত জনপ্রিয় হাসির নাটক ‘ত্রিরত্ন’র চিত্রনাট্য লেখেন তিনি। কবি নির্মলেন্দু গুণের প্রথম কবিতার বই ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’-এর প্রচ্ছদও আঁকেন কাওসার আহমেদ চৌধুরী।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ছদ্মবেশে পাক হানাদার বাহিনীর অবস্থান, ক্যাম্পের তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ছিলেন বিশ্বস্ত গোয়েন্দা। ছবি আঁকতে পারতেন বলে পুরো ক্যাম্প ও তার আশেপাশের চিত্র ছবি একে বুঝিয়ে দিতে পারতেন মুক্তিযোদ্ধাদের যা অপারেশনের সময় খুব কাজে লাগতো।

চারুকলায় পড়ার সময় ঢাকায় বোনের বাসায় থাকতেন কাওসার আহমেদ চৌধুরী। সেখানকার প্রতিবেশী ছিলেন তৎকালীন বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী খন্দকার ফারুক আহমেদ। সেই সুত্রেই ফারুক আহমেদের কাছ থেকেই গান লেখার পদ্ধতিটা রপ্ত করেন তিনি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে লাকি আখন্দের সাথে পরিচয়। সেই পরিচয় থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।

কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা আর লাকি আখন্দের সুর করা গানগুলোর সবই কালজয়ী। তাদের প্রথম গান হলো ‘পলাতক সময়ের হাত ধরে’, যা গেয়েছিলেন ফেরদৌস ওয়াহিদ। লাকি আখন্দ চাইতেন কাওসার আহমেদ চৌধুরী অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে শুধুই গান লিখবেন তাই তিনি বলতেন, “কাওসার আহমেদের জন্ম গান লেখার জন্যে।”

এ জুটির গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আমায় ডেকো না, কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে রাতের নির্জনে, আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে মনে পড়লো তোমায় ও যেখানে সীমান্ত তোমার। মূলত আধুনিক গান লিখলেও ব্যান্ড সংগীতেও আছে কাওসার আহমেদ চৌধুরীর কালজয়ী কিছু গান। যার মধ্য উল্লেখযোগ্য ফিডব্যাকের  মৌসুমি ১, ২ ও এলআরবি’র  রুপালী গীটার।


মন্তব্য করুন