Select Page

অসুন্দর পরিবারে তৈরি হয় অসুস্থ ‘বড়ভাই’

অসুন্দর পরিবারে তৈরি হয় অসুস্থ ‘বড়ভাই’

বড়ভাই ইচ্ছে করে বারবার ফেল যায়। কারণ সে কলেজ ছাড়তে চায় না। তার একটি স্বপ্ন— ওই কলেজের একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে তারপর বিয়ে করবে।

ইতিমধ্যে কয়েকশত মেয়েকে প্রেম নিবেদন করেছে। সবাই তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বড়ভাই আশা ছাড়েনি। মনে করে একদিন না একদিন কেউ তাকে ভালোবাসবে। বারবার ফেল করে একই ক্লাসে থাকা বড়ভাই নিজেকে বিশ্বপ্রেমিক ভাবে।

এমন সাদাসিধে ভাবনার ভেতর আছে ভয়ংকর কিছু। একদিন কলেজের একটি মেয়ের বুকের উপরিভাগে তিল দেখে। বড়ভাই তাকে বাসায় নিয়ে যায়। তারপর খুন করে বুকের তিল কেটে জমিয়ে রাখে। বড়ভাই’র এটাই প্রথম খুন নয়। আরো খুন করেছে।

এভাবে বুকের উপরিভাগে তিল দেখলেই মেয়েদের বাসায় এনে হত্যা করে তিল কেটে জমিয়ে রাখে। এতটা সহিংস ও বিকৃতমস্তিষ্ক হওয়ার কারণ ছিল। একটি নোংরা ইতিহাস।

বড়ভাই যখন বালক বয়সের, তখন তার বাবা পঙ্গু হয়ে যায়। হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হতো। আর বড়ভাই’র মা বিভিন্ন পুরুষের সাথে পাপাচারে লিপ্ত হয়। ঘরে স্বামী-সন্তান থাকলেও তাদের তোয়াক্কা করতো না, তাদের সামনেই বন্ধ করে দিতে দরোজা।

বড়ভাই ও তার বাবা অসহায় নীরব দর্শক হয়ে থাকতো। বড়ভাই দেখেছে, মায়ের বুকের উপরিভাগে একটি কালো তিল আছে। পরপুরুষরা সেই তিলের প্রশংসা করতো। সে আড়াল থেকে দেখতো মায়ের বুকের তিলের প্রশংসায় মগ্ন পরপুরুষরা।

সবকিছুর একটা সীমা থাকে। স্ত্রীর এমন পাপাচার যখন দিনদিন বেড়েই চলেছে তখন পঙ্গু স্বামী প্রতিবাদ করে। স্বামীর হুইল চেয়ার স্ত্রী ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় সিঁড়ি দিয়ে। এভাবে বাবাকে খুন হতে দেখে তরুণ বয়সে এসে মায়ের দু পা ভেঙ্গে পঙ্গু করে দেয় ছেলে। তারপর মায়ের সামনে একের পর এক মেয়েকে হত্যা করে, যাদের বুকে ছিল তিল।

মা চেয়ে চেয়ে দেখে ছেলের বিকৃতি। ইচ্ছে থাকলেও পুলিশকে বলতে পারে না। কারণ তাতে তারই জীবনের নোংরা ইতিহাস প্রকাশ পাবে। পত্রিকায় মাসের পর মাস শিরোনাম হবে, ‌‘এক অভিজাত নারীর পাপাচারের কাহিনী’।

বড়ভাই নামের এমন ভয়ংকর সাইকো চরিত্রে অভিনয় করেছেন কানকাটা রমজান খ্যাত হুমায়ূন ফরীদি

ছবিতে আরেক চরিত্র ফারুক কলেজের সুদর্শন, ভদ্র ও মেধাবী ছাত্র। কলেজের অনেক মেয়ে ফারুককে প্রেম নিবেদন করে। কিন্তু সে কাউকে পাত্তা দেয় না। কলেজের নতুন ভর্তি প্রিয়দর্শিনী শিখার প্রেমে পড়ে ফারুক। কিন্তু বারবার প্রেম নিবেদনেও এ তরুণী পাত্তা দেয় না।

শিখা ফারুকের প্রতি বিরক্ত। ফারুক থেকে বাঁচতে বলে, তার অন্য কারো সাথে সম্পর্ক আছে। তখন ফারুক প্রমাণ চায়। শিখা প্রমাণ দিতে বড়ভাই’র সাথে অভিনয় করে। বড়ভাই’কে বলে, আপনি আমার পছন্দ, আপনি আমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবেন আগামীকাল।

বড়ভাই’র দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হতে চলেছে। শিখার এমন প্রস্তাব তো মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতন। কিন্তু পরেরদিন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতেই শিখার বাবা দ্বারা চরম অপমানিত হয়। আর শিখা বলে সবই ছিল অভিনয়। ফারুক থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য। শিখা ক্ষমা চায়। আহত হৃদয়ে বড়ভাই শিখাকে ক্ষমা করে দেয়।

শিখা ও ফারুক চরিত্রে অভিনয় করেছে যথাক্রমে মৌসুমী ও মার্শাল আর্ট নায়ক রুবেল।

ফারুকের ব্রেইন টিউমার। আয়ু মাত্র ছয়মাস। বিষয়টি জানতেন ডা. মামুন, শিখা, ফারুকের মা-বাবা। কিন্তু ফারুক জানতেন না। শিখা যখন জানতে পারে ফারুক আর ছয়মাস বাঁচবে। তখন ফারুকের প্রেম গ্রহণ করে গোপনে বিয়ে করে। কিন্তু এই বিয়ে শিখার মা-বাবা মেনে নেয় না। তখন ফারুক বড়ভাই’র সাহায্য কামনা করে।

বড়ভাই শিখা-ফারুককে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেয়।

ডা. মামুনের মেডিকেল শিক্ষক বিদেশ থেকে আসে। তখন ফারুকের ব্রেইন অপারেশন হয়। এমন দিনে শিখা বড়ভাই’র বাড়িতে ছিল। হঠাৎ তার বুকের ওড়না সরে যায়। তা দেখে বড়ভাই শিখাকে হত্যা করতে চায়।

শুরুতেই অনেকে বুঝে গেছেন, এতক্ষণ বলছিলাম শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘বিশ্বপ্রেমিক’ ছবির কাহিনী।

আজ থেকে প্রায় পঁচিশ বছর আগে চট্টগ্রামের লায়ন সিনেমা হলে এই ছবি দেখি। ‘বিশ্বপ্রেমিক’ ছবির কাহিনীর দুটি বিষয় আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায় ও ভাবায়।

বড়ভাই’র হৃদয় এমনিতেই ক্ষতবিক্ষত। তার ওপর স্বপ্ন দেখতো কেউ একজন তাকে ভালোবাসবে, জীবন সঙ্গী হবে। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ হচ্ছিলো না। হাহাকার হৃদয়ে হঠাৎ শিখা স্বপ্ন দেখায় আবার ভেঙে দেয়। আহত হৃদয়ে আরো আহত হয় বড়ভাই।

আমরা অনেকেই অন্যের সাথে শিখার মতো আচরণ করি। এপ্রিল ফুল করি। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেই। যাদের সাথে আমরা এমন করি, তাদের হৃদয়ের খবর কি আমরা নিয়ে থাকি? না! শিখার মতো জোকস কাউকে করে তুলতে পারে মারাত্মক অপরাধী।

বড়ভাই’র সহিংস চরিত্র, বিকৃত মানসিকতা ও প্রতিহিংসা পরায়ণতায় জন্য দায়ী তার মা। আমাদের সমাজে আজকাল ঘরে ঘরে পাপাচার হচ্ছে। হয় স্বামী পরকীয়ায় লিপ্ত, না হয় স্ত্রী। অশান্ত সংসারের সন্তানরা বড়ভাই’র মতো না হলেও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। পুরুষ বিদ্বেষী হয়ে পড়ে নারী, নারী বিদ্বেষী হয়ে পড়ে পুরুষ।

একটি সুন্দর সংসার, সুন্দর পরিবার সমাজকে দিতে পারে সুনাগরিক। আর ভোগবাদী অনাচার শুধু পাপের জন্ম দেয়। পাপাচার হলো সুন্দরের বিপরীত। আসুন সুন্দর পরিবার গঠন করি,সমাজকে সুনাগরিক উপহার দেই।

বড়ভাই ও তার মায়ের গল্প আমাদের যে বার্তা দিয়ে গেল তা আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। কিন্তু আমরা কি শিক্ষা নিচ্ছি? আমরা শুধু সিনেমাকে বিনোদন ভাবি, বুঝি। কিন্তু সিনেমার গল্প বোঝার চেষ্টা করি না।


মন্তব্য করুন