বুকের মধ্যে আগুন: দর্শকরা মিথ্যা বলছে?
কোনো ঘোষণা ছাড়াই রিলিজ হয়ে গেল হইচইয়ের ওয়েব সিরিজ ‘বুকের মধ্যে আগুন’। বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে বেশি বিক্রিত নামটিই শুরু থেকে ব্যবহার করা হয়েছে। আবার অস্বীকারও করা হয়েছে।
মুক্তির পর যারা সিরিজটি দেখেছেন তারা জানাচ্ছেন, সিরিজটি সালমান শাহর জীবনের বিভিন্ন ঘটনা থেকে নির্মিত। ঘটনার পরবর্তী সময়ে যুক্ত হওয়া কয়েকটি চরিত্র কাল্পনিক। কিন্তু তাতেই অনুপ্রেরণা বা গালগল্পকে ধামাচাপা দেয়া যায়? অথবা দর্শকরা কি মিথ্যা বলছেন?
গল্পে দেখা যায়, রহস্যজনকভাবে ৯০ দশকের একজন সুপারস্টার ও স্টাইল আইকন মারা যান। সেই মৃত্যু রহস্য উন্মোচন করবেন অপূর্ব। সালমান শাহর মৃত্যু রহস্য কিনা সেই বিষয়ে পরিষ্কার করেনি কর্তৃপক্ষ। গল্পে দেখানো হয়েছে, সেই সুপারস্টার নায়কের ভক্ত হলেন অপূর্ব।
‘বুকের মধ্যে আগুন’ স্ট্রিমিংয়ের আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি সালমান শাহর পরিবারের তরফ থেকে এর নির্মাতা তানিম রহমান অংশুকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সালমানের মামা আলমগীর কুমকুম। নোটিশে দাবি করা হয়েছে, সংবাদ মাধ্যমের কল্যাণে তারা জেনেছেন এটি সালমান শাহকে নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। মুক্তি বন্ধ না করলে আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
মজার বিষয় হলো, গুঞ্জন তুলেই চুপ করে আছেন নির্মাতা। তাদের হয়ে (ধোঁয়াশাপূর্ণ) কথায় শামিল হয়েছে অভিনেতারা। আরো মজার বিষয় হলো, সিরিজের সঙ্গে সালমানের জীবনী মিলিয়ে লেখা দর্শকদের অনেক পোস্ট শেয়ার করেছেন নির্মাতা তানিম রহমান অংশু।
গত ৪ মার্চ রাতে একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে জিয়াউল ফারুক অপূর্ব বলেন, এটি একটি ফিকশন হিসেবে পরিচালক তুলে ধরেছে। যদি ওনাকে (সালমান শাহ্) নিয়ে তৈরি হতো তাহলে ‘বেইজড অন অ্যা ট্রু স্টোরি’ (সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত) উল্লেখ থাকতো। গল্পে কোথাও তা উল্লেখ নাই। তাই এটি শুধুই ফিকশন হিসেবে কাউন্ট করা উচিত।
যদি সালমান শাহ্র পরিবার থেকে সত্যি সত্যি মামলা করা হয়? জানতে চাইলে অপূর্ব বলেন, যদির কথা নদীতে থাক। এসব নিয়ে আর কথা না বলি।
এদিকে তানিয়া আহমেদের চরিত্রটির সঙ্গে সালমান শাহর মায়ের চরিত্রের সঙ্গে মিল পেয়েছেন অনেকে। তিনি ধোঁয়াশাপূর্ণ কথা বলে প্রথম আলোর কাছে বিষয়টি এড়ালেন। তানিয়া বলেন, ‘আমাদের জীবনের অনেক কিছুই অনেকের সঙ্গে মিলে যায়। আমার শৈশব, তরুণ বয়স কেমন সেই গল্পটা কিন্তু মাঝে মাঝে অন্যের গল্পে দেখি। তার মানেই কি সেটা আমার গল্প। আমি মনে করি জীবন একটাই। সেখানে কারও সঙ্গে কারো মিল যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। জীবনে কাকতালীয় ভাবে অনেক কিছুই মিলে যায়। আমাদের গল্পটার চিত্রনাট্য যখন হাতে পাই তখন এটাকে আমার কাছে একটি আর ১০টি গল্পের মতোই মনে হয়েছিল। যেখানে অপূর্বের পয়েন্ট অব ভিউ থেকে গল্পটি দেখানো হয়। এই উপস্থাপনাটাও ভালো লেগেছিল। কিন্তু কারও সঙ্গে চরিত্রটি মিলে যাবে এটা মাথায় আসেনি।’
২৭ বছর আগে সালমান শাহ্ মারা গেলেও আজও কোটি বাঙালির কাছে আবেগ হয়ে আছেন। তার মৃত্যুর পর পত্রপত্রিকার কল্যাণে মানুষ যা জেনেছেন ‘বুকের মধ্যে আগুন’ দেখে অনেকাংশে মিল পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, সালমান শাহ যা যা করতেন ঠিক তেমনভাবে ‘বুকের মধ্যে আগুন’-এর আরমান চরিত্রে অভিনয়ের চেষ্টা করেছেন ইয়াশ রোহান।
সালমান শাহ্র মতো স্টাইল, স্টারডম সবকিছুতে মিল! অমীমাংসিত মৃত্যু রহস্য উঠে এলেও সিরিজটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। তাই এটি দেখে এ প্রজন্মের দর্শকরাও স্পষ্ট হলেন, গল্পটি আসলে সালমান শাহর জীবন থেকেই নেওয়া!
সালমান এর আদলে সিরিজে যেমন আরমান চরিত্রে আছেন ইয়াশ রোহান, তেমনি তার স্ত্রীর (সামিরা)-এর মতো অবিকল দেখা গেছে তমা মির্জাকে। সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের গেটআপে তৌকীর আহমেদ, প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের অবয়বে তারিক আনাম খানের মিল পেয়েছেন দর্শক।
সেই সঙ্গে শাহানাজ সুমি অভিনয় করেছেন শবনম চরিত্রে, অনেকেই বলছেন তার চরিত্রটি শাবনূরের! গল্পে দেখা যায়, ইয়াশ রোহানের সঙ্গে নায়িকা শবনমের গোপন প্রেম ও অবৈধ সম্পর্ক ছিল। যা সেই সময় অনেকেই জানতো! মোটামুটি সালমান শাহ কেন্দ্রিক তৎকালীন সব চরিত্রকেই ‘বুকের মধ্যে আগুন’-এ পর্দায় দেখা গেছে। যেটি দেখে ৯০ দশকের দর্শক-নির্মাতা-শিল্পী-সাংবাদিকরা হুবহু মিল খুঁজে পাচ্ছেন সালমান শাহের জীবনের গল্পের সঙ্গে।