আন্ডাররেটেড ‘আগামীকাল’!
‘আগামীকাল’ অঞ্জন আইচের প্রথম সিনেমা। ছোটপর্দায় পনের বছর ধরে নাটক বানালেও বড়পর্দায় অঞ্জন ‘নাটক’ না ‘সিনেমা’ই দেখিয়েছেন এটুকু বলতে পারি। গল্পনির্ভর এই সিনেমায় ব্যক্তিগতভাবে আমার চাওয়ার জায়গায় একটু বেশিই পেয়েছি শেষটা দেখে।
সিনেমা শুরু হয় পুরো গল্পটার মাঝ থেকে। সাফায়েত, রূপা, অবন্তী এই তিনজনের পারস্পরিক সম্পর্কের জটিলতা এই সিনেমার প্রাণ। মাঝ থেকে বলছি এ জন্য, শুরুতেই দেখি অবন্তী তদন্ত করছে রূপার ক্ষমতাধর স্বামী টুটুল চৌধুরীর নিখোঁজ হবার কেসটা নিয়ে। টুটুল বেশ কিছুদিন ধরে নিখোঁজ থাকায় তার সচিব ভাইয়ের ক্ষমতার জেরে তদন্ত চলে খুব শক্তভাবে। এক্ষেত্রে অবন্তীসহ সবার ধারণা রূপাই তার স্বামীর হারিয়ে যাবার জন্য দায়ী। কিন্তু জেরা করলে রূপা সেটা বারবার অস্বীকার করে। এমন কোন শক্ত প্রমাণও পাওয়া যায় না, যাতে রূপাকেই দোষী সাব্যস্ত করে ফেলা যায়।
রূপা তার প্রথম প্রেমিক সাফায়েতকে হ্যালুসিনেশনে দেখে, দেখে স্বামী টুটুলকেও। মূলত টুটুলের ভয়টাই রূপাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। মানসিকভাবে অসুস্থ বোধ করা রূপা সাহায্য নেয় ঢাকা থেকে আসা মনোবিদের। শুধু সমস্যা থেকে উত্তরণ না, রূপাকে আইনি লড়াইয়ে জিতে আসতে পুরো গল্পটা জানতে চান মনোচিকিৎসক। রূপা বলতে থাকে তার ব্যথাতুর অতীতের গল্প যেখানেও জড়িয়ে আছে সাফায়েত, অবন্তী ও তাকে আশ্রয় দেয়া মায়ের বান্ধবী যিনি আবার অবন্তীর মা।
গল্প হিসেবে মূল উত্তেজনার জায়গাটা শুরু হয় বিরতির পর। তবে প্রথম অংশেও খুব একটা ঝুলে যায়নি স্ক্রিনপ্লে। প্রায় ১৬০ মিনিটের সিনেমাটিতে গল্পের থ্রিল অংশটা জমিয়ে তোলার জন্য অনেক জায়গায় ধীর ডেভেলপমেন্ট আছে। তবে দীর্ঘদিন নাটক লেখার জন্য হলেও সিনেমায় নাটকীয়তা বেশ ভালোই ফুটিয়ে তুলেছেন নির্মাতা অঞ্জন।
পারফরমেন্স বিচারে রূপা চরিত্রে মমকেই এগিয়ে রাখবো। সিনেমার প্রচারে তাকে দেখা না গেলেও ‘আগামীকাল’ মম’কে মনে রাখতে বাধ্য করবে। মম’র সেই ‘দারুচিনি দ্বীপ’ থেকে আজ অবধি অভিনয় জীবনে একটা ভালো অভিনয় প্রদর্শনী ছিল এখানে। ইমন তার অভিনয়ে জোর দিয়েছেন, নায়ক না সত্যি যে অভিনেতা হবার চেষ্টা ছিল তা বোঝা গেছে। সূচনা আজাদের চরিত্রে দুইটা শেড আছে। পুলিশ থেকে তাকে প্রেমিকা হিসাবে দেখতে স্বচ্ছন্দ মনে হয়েছে, তাকে আরো উন্নতি করতে হবে। এছাড়া শতাব্দী ওয়াদুদ একটু ধীর ভয়েসে বেশ জমিয়ে অভিনয় করেছেন। সাবেরী আলম, মরহুম মহসিন আলী বেশ ভালো। তবে টুটুল চৌধুরী বেশ চমক দেখিয়েছেন। সাইকোথ্রিলার জনরার আসল খেলার জায়গাটা ছিল এই প্রভাব বিস্তারকারী চরিত্রে।
পাহাড়ী জায়গা ও বাংলো বাড়ি সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার সিনেমাটিতে আলাদা আবেশ তৈরি করেছে। তার সঙ্গে ভালো সিনেমাটোগ্রাফি আর বিজিএম একটা সাম্যতা এনেছে আহামরি না হলেও। তবে হতাশ করেছে সাপোর্টিং রোলগুলোর অতি অভিনয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুর্বল ও আরোপিত ডায়লগ আর ডাবিং। কথা বলার সময় আশপাশের সব শব্দ থেমে যাওয়াটা এই সময়ে এসে খুব বাজে দেখায়। সিন সাউন্ডের ব্যবহার বাড়াতে পারলে ভালো লাগতো। গানের দিক থেকেও খুব একটা ভালো সাড়া মেলেনি সিনেমার গল্পের সঙ্গে ভালো সিঙ্ক করার জন্য, গান এভারেজ লেগেছে।
দুই ঈদের মাঝখানের সময়টা সিনেমাপাড়ার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সিনেমাহল ঈদের ছবি দিয়ে একমাস ব্যবসা করে হল বন্ধ রাখে, পরের ঈদে খুলে দেয়। তাই এক ঈদ থেকে আরেক ঈদ পর্যন্ত সেইসব সিঙ্গেল স্ক্রিন খোলা রাখার জন্য চাই সিনেমা। ঈদে তিনটি সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পর ১৫০ বেশি হলে যে সিনেমা চলার যে আশার আলো দেখা গেছে সেটি জিইয়ে রাখার জন্য দরকার ছিল আরো কয়েকটি পরপর সিনেমার মুক্তি। ‘আগামীকাল’ জুনের প্রথম শুক্রবার ত্রিশ হলে মুক্তি পেয়ে সেই দরকারটা কিছুটা হলেও মিটিয়েছে।
তবে হলে দর্শককে নেয়ার পর বসিয়ে রাখার জন্য দরকার দুই ঘণ্টার একটা পোক্ত গল্প যেখান থেকে দর্শক বের হবেন একেবারে সিনেমা শেষ করে। ‘আগামীকাল’ কোন মাসালা, ফর্মুলা সিনেমা না। সিনেমাহলে এটি রমরমা ব্যবসা করছে বা সব শো হাউজফুল যাচ্ছে তাও না। তবে যারা একবার একটা বিশ্বাস নিয়ে টিকিট কেটে ঢুকেছেন তাদের বেশিরভাগ বলছেন, তারা হতাশ হননি। তাই বলব, গল্প ও পারফরমেন্স বিচারে অল্প বাজেটের সিনেমা হলেও নির্মাতা প্রথমবার খারাপ করেননি। সেই হিসাবে আলোচনা ও দর্শকের কথাবার্তায় আরো আসা দরকার ছিল ‘আগামীকাল এর নাম।
রেটিং: ৭/১০