Select Page

আফসোসের নাম সিমলা

আফসোসের নাম সিমলা

‘ও ফুলি তোর নাম কি?

নাম দিয়া তোর কাম কি?

গাছের আগায় করমচা

মন্টু মিয়ার গরম চা’…♥

১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ম্যাডাম ফুলি’ ছবির জনপ্রিয় সংলাপ ছিল এটা। গ্রামের ছোটরা সিমলার সাথে এভাবে মজা করে বলত সিমলাও পাল্টা জবাব দিত। একেবারে কুচকুচে কালো গায়ের  রং নিয়ে পর্দায় হাজির হয় নতুন এক নায়িকা। প্রথমে তাকে দেখে সিনেমাহলে অনেক দর্শকই বিরক্ত ছিল, কেউ কেউ তো সরাসরি বলেছিল, ‘এটা কোনো নায়িকা হলো?’ কিন্তু তার অভিনয় যেন মুগ্ধ করল সবাইকে। প্রথম ছবিতেই একেবারে সরল আবার আধুনিক দুই চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করল। প্রথম ছবিতেই পেল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। কিংবদন্তি পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন সে বছর নতুন নায়িকা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং তিনি জিতেছিলেন। সে নায়িকাই ছিল সিমলা।

মূল নাম শামসুন নাহার, চলচ্চিত্রের নাম সিমলা। জন্ম ১২ এপ্রিল। নব্বই দশকের শেষ বছরে তার আগমন ঘটে চলচ্চিত্রে। নব্বইয়ের মানসম্মত নায়িকা/অভিনেত্রীদের যে ধারাবাহিকতা ছিল তার মধ্যে সিমলাও শেষের দিকের সংযোজন ছিল।

সিমলা যে সম্ভাবনা নিয়ে এসেছিল কাজ সেভাবে করেনি বা তার ট্যালেন্টকে সেভাবে কাজে লাগাননি পরিচালকরা। তার অভিনয়দক্ষতা সমসাময়িক নায়িকাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতোই ছিল। অভিনয় করত নিখুঁতভাবে। ‘ম্যাডাম ফুলি’ ছবিতেই তার প্রমাণ ছিল। প্রচুর সম্ভাবনা থাকার পরেও সিমলা হয়ে গেল আফসোসের নাম হারিয়েও গেল তাড়াতাড়ি।

উল্লেখযোগ্য ছবি: ম্যাডাম ফুলি, ধাওয়া, পাগলা ঘণ্টা, হাসন রাজা, না বোলো না, গঙ্গাযাত্রা, পরম প্রিয়, ভেজা বিড়াল, না বোলো না, লাল সবুজ, বোমা হামলা, ছোটবোন, নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ, ঝন্টু মন্টু দুই ভাই, আক্কেল আলীর নির্বাচন, জমিদার, লুটপাট, ছোট্ট একটু ভালোবাসা, ভালোবাসার মূল্য কত, ভণ্ড নেতা, মেজাজ গরম, ঠেকাও মাস্তান ও অশান্ত আগুন।

সিমলার ক্যারেক্টরাইজেশনে স্বল্প সময়ের মধ্যেই ভেরিয়েশন এসেছিল। নায়িকা থেকে অভিনেত্রী হবার মতো গুণ দেখিয়েছিলো। তার ক্যারেক্টারাইজেশনের কথা বললে প্রথমেই চলে আসে ‘ম্যাডাম ফুলি’-র কথা। গ্রামের কালো একটি মেয়ে থেকে সময়ের সাথে বদলে গিয়ে আধুনিক একটি মেয়ে হয়ে ওঠার যে ট্রান্সফরমেশন দেখিয়েছে সিমলা এক কথায় অসাধারণ। প্রথম দৃশ্যেই দারুণ স্বতঃস্ফূর্ত ছিল সে। সিমলার অভিনয়ের তুলনায় সে ছবিতে তার নায়ক আলেকজান্ডার রুবেলকেই দুর্বল লেগেছিল কিছুটা।

‘তোরে আমি গুলিতে মারব না, তোরে আমি ধাওয়ায় মারব’ এই সংলাপটি অসাধারণভাবে বলেছিল সিমলা ‘ধাওয়া’ ছবিতে। লেডি অ্যাকশন ছবির তালিকা করলে এ ছবি মাস্ট লিস্টেড হবে। ডিপজলের অত্যাচারের বিপরীতে একসময় বদলে যায় সিমলা। অভিনয়ের গুণে অ্যাটেনশনটা নিজের দিকেই নিয়ে নেয় সিমলা।

‘বোমা হামলা’ ছবিতে ডাবল রোলের মান্নার স্ত্রী ও মায়ের ভূমিকাতে সিমলা চ্যালেঞ্জ নিয়েই অভিনয় করেছিল। ‘পাগলা ঘণ্টা’-র মতো কমেডি ছবিতেও মানিয়ে গিয়েছিল। ‘ভেজা বিড়াল’ ছবিতে মৌসুমীর প্যারালাল হিসেবে অসাধারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখিয়েছিল। কমার্শিয়াল ধুমধাড়াক্কা ছবির বিপরীতে শান্তশিষ্ট চরিত্রের ছবিতেও চমৎকার ছিল সিমলা যার প্রমাণ ‘না বোলো না, লাল সবুজ, পরম প্রিয়’-র মতো ছবিগুলো। ‘না বোলো না’ ছবিতে সিমলার সৌন্দর্যটা পারফেক্টলি এসেছিল। এ ছবির ‘নদী চায় চলতে’ গানে তাকে অত্যন্ত সুন্দর লেগেছে দেখতে। গানের অভিনয়ও অসাধারণ।

‘হাসন রাজা’ ছবিতে যে কয়েকটি নারী চরিত্র ছিল তার মধ্যে ওয়ান অফ দ্য বেস্ট ছিল সিমলা। বাঈজীর চরিত্রে তার নৃত্য, সংলাপ বলার ধরন, এক্সপ্রেশন অনবদ্য ছিল। ‘গঙ্গাযাত্রা’ ছবিতে তার অভিনয়ের তো তুলনাই ছিল। এটাতেও জাতীয় পুরস্কার ডিজার্ভ করে সিমলা। ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’-ও দারুণ। ক্যারেক্টারের ভেরিয়েশনে অল্প কাজেই সিমলা নিজের সম্ভাবনা দেখিয়েছিল কিন্তু তাকে নিয়ে পরিচালক সিরিয়াসলি আরো ভাবেনি কিংবা তারও কোনো অভিমান বা সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।

সিমলা-র কিছু জনপ্রিয় গান: নদী চায় চলতে তারা চায় জ্বলতে, গানে গানে চেনা হলো (না বোলো না), আমি একশো বছর তোমারই অপেক্ষাতে আছি, বলো তো আমি তোমার কে (পাগলা ঘণ্টা), বধূ বধূ ও বধূ (বোমা হামলা) এবং হ্যাপি নিউ ইয়ার (ম্যাডাম ফুলি)।

সিমলা বলিউড অভিনেতা গোবিন্দর বিপরীতে ‘সমাধি’ ছবিতে অভিনয় করেছে। সামনে তার নিষিদ্ধ প্রেম, নাইওরী ছবিগুলো মুক্তির অপেক্ষায় আছে।

সিমলার ফিটনেস এখনো ঠিক আছে। গল্পনির্ভর ছবিতে তাকে সিরিয়াসলি কাজে লাগানো উচিত যেখানে তার অভিনয়ের সুযোগ থাকে। আফসোসের সিমলাকে আরো কিছুদিন দেখতে চাই ইন্ডাস্ট্রিতে।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন