Select Page

আবদুর রহমান ও আমরা

আবদুর রহমান ও আমরা

জ্বী হুজুর; পরিচালক: জাকির হোসেন রাজু; শ্রেষ্ঠাংশে: সায়মন সাদিক, সারা জেরিন, ডলি জহুর, আব্বাস উল্লাহ, জামিলুর রহমান শাখা প্রমুখ; মুক্তি: ১৩ এপ্রিল ২০১২

আমরা সবাই এক একজন আবদুর রহমান হতে পারলে সমাজের সব অবস্থান থেকে অপরাধের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব। ‘জ্বী হুজুর’ ছবিটি সেই সচেতনতা তৈরির ছবি।

অনেকেই সায়মন সাদিকের সেরা ছবি মনে করে ‘পোড়ামন’-কে। কিন্তু ছবির বিষয়, অভিনয় এসব জরুরি দিক খেয়াল করলে ‘জ্বী হুজুর’ তার সেরা ছবি। এ ছবিটিতে তার ব্যক্তিত্ব, অভিনয়, গেটআপ, ডেডিকেশন সবকিছুই ছিল অসাধারণ। কোনো কৃত্রিমতা ছিল না।

ইসলামী চেতনা থেকে সমাজের প্রচলিত অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য এ ছবিতে একজন আবদুর রহমানকে দেখানো হয়েছে। গ্রামে যে ছেলেটি ধর্মকর্মে ছিল সবার প্রিয়। বাবার কথা রাখতে মাকে একা রেখে সে চলে যায় শহরে। আব্বাস উল্লাহ-র পরিবারে তাকে রাখা হয়। পরিবারের দুই মেয়ের সাথে ছেলেটির অমিল দেখা দেয়। একসময় তাদের একটি ভুলের কারণে আবদুর রহমান বাড়ি ছাড়ে এবং ঘটনাক্রমে একটি খুনের সাক্ষী হতে গিয়ে অপরাধীদের নজরে পড়তে হয়। গল্পটি অন্যদিকে মোড় নেয়। আবদুর রহমান নিজের আত্মবিশ্বাস, শক্তি, বুদ্ধির সাহায্যে বাস্তব যুদ্ধে নামে। আবদুর রহমানই ছবির নায়ক সায়মন।

আবদুর রহমান চরিত্রে সায়মনকে আব্বাস উল্লাহর দুই মেয়ের সাথে কিছু মতাদর্শগত পার্থক্যে যেতে হয়। এই তিনজনের মাধ্যমে ছবিটির গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ দেয়া হয়। মতাদর্শের চিত্র তুলে ধরতে সিটুয়েশন তৈরি করা হয় ছবিতে। যেমন –

১. হুজুর আবদুর রহমান বা সায়মনকে ছবির নায়িকা সারা জেরিন ও তার বোন মিলে নানাভাবে ছোট করতে থাকে। দুষ্টুমি বা ছেলেমানুষি করে তারা এবং এর মাধ্যমে পরীক্ষা করতে থাকে সায়মন কেমন মানুষ। সায়মন কথা বলার সময় তাদের দিকে তাকায় না। তাদের পোশাক হাঁটুর উপরে দেখে তার কমফোর্ট ফিল হয় না। জানিয়ে দেয় তার সামনে এভাবে না আসতে।

২. বাড়িতে জন্মদিনের পার্টি হয় এবং আবদুর রহমান যেতে চায় না পার্টিতে। সারার অনুরোধের পর যায়। সবার সামনে নিজের পরিচয় দিয়ে নিজের কথা বলে সাদামাটাভাবে-’sorry, I’m not habituated this culture because it’s not our culture.’ তারপর সারার মাথায় হাত রেখে তাকে দোয়া করে পার্টি থেকে চলে যায়। উপস্থিত অতিথিরা তার কথায় খুশি হয়ে করতালি দেয়।

৩. আবদুর রহমান বা সায়মনের দাড়ি ঘুমের মধ্যে কেটে দেয় সারার ছোটবোন। সায়মন সারাকে ডেকে চড় মারে। জানায়-’একজন মুসলমানের দাড়িতে হাত দেয়া মানুষ খুন করার থেকেও বড় অপরাধ।’ ছোটবোনের জন্য নীরবে মার খায় সারা।

ছবির সিচুয়েশনগুলো এভাবে আবদুর রহমানের নিজস্ব ইসলামী মতাদর্শকে তুলে ধরে। তার লাইফস্টাইলে তার দর্শনের প্রতিফলন ছিল চমৎকার। ছবির সেরা পার্ট ছিল এগুলো।

গল্পকে ভিন্নভাবে নেয় একটা খুনের সাক্ষী হওয়া আবদুর রহমানকে সন্ত্রাসীরা টার্গেট করার পর। সাহসী হয়ে আবদুর রহমান সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করতে থাকে। পথের মধ্যে তাকে আক্রমণ করলে নিজের শক্তি দিয়ে রক্ষা করে নিজেকে। এ পার্টটি ছিল অ্যাকশনের। সায়মন অসাধারণ পারফর্ম করেছে। স্পেশালি ফাইটগুলোতে দারুণ ছিল। নায়িকা পরে পুলিশের চাকরিতে যায় এবং সায়মনকে সেভ করতে থাকে। আবদুর রহমান তার বাস্তবতা থেকে সন্ত্রাস দমন করতে পুলিশ প্রশাসনের সাথে নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করতে থাকে। সুইসাইডের অ্যাটেম্পট অপরাধীদের ধরে ভালোভাবে বুঝিয়ে অপরাধ স্বীকার করাতে থাকে।

আবদুর রহমানের চরিত্রটি ছিল সম্পূর্ণ ইসলামী চেতনা থেকে সমাজের প্রচলিত অভ্যাস ও অপরাধ থেকে সমাজকে ভালোর দিকে নিয়ে আসার চেষ্টা। চরিত্রটিতে সায়মন সাদিক অসাধারণ অভিনয় করেছে। তার গেটআপে দাড়ি, পাণ্জাবি, পাগড়ি এসব শতভাগ মানিয়েছে ছবিতে। নায়িকার অভিনয় মোটামুটি। আবদুর রহমান শেষ পর্যন্ত তার দ্বিতীয় মিশনে সফল ছিল কিনা, নায়িকাকে সে গ্রহণ করতে পেরেছিল কিনা কিংবা সেখানে কোনো শর্ত ছিল কিনা এগুলো চমক যারা ছবিটি দেখেনি।

‘জ্বী হুজুর’ ইসলামী চেতনা থেকে নির্মিত একটি পরিচ্ছন্ন বাণিজ্যিক ছবি। ছবিটি দেখার পর দর্শকের মনে হবে এ ধরনের ছবি আরো হওয়া উচিত।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন