আমাদের নায়িকারা : কবরী
অলকে কুসুম না দিয়ো
শুধু শিথিল কবরী বাঁধিয়ো
কাজলবিহীন সজল নয়নে
হ্রদয় দুয়ারে ঘাঁ দিয়ো
কবিগুরু রবী ঠাকুরের এ কবিতা কোন কাল্পনিক প্রেয়সীর প্রতি অঞ্জলি স্বরুপ লেখা তা জানা নেই। তবে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়িকা কবরীর জন্য এ কবিতা শতভাগ প্রাসঙ্গিক। কুসুম ছাড়াই এ নায়িকা কুসুমের সুবাস ছড়ান। কাজল ছাড়াই তাঁর আঁখিতে আটকে যায় কোটি মানুষের চোখ।
১৯৬৪ সালে “সুতরাং” সিনেমায় ১৩/১৪ বছরের যে কিশোরী ভুবন ভুলানো মিষ্টি হাসি দিয়ে জিতে নিয়েছিল লাখো মানুষের মন, আজ ৫০ বছর পরেও সে হাসি বিন্দুমাত্র ফিকে হয়ে যায় নি।
১৯৬৯ সালে মুক্তি পায় রাজ্জাক-কবরী অভিনীত “কখগঘঙ” ছবি টি।এ ছবির শুটিং হয়েছিল চুয়াডাঙ্গার একটি বাড়ীতে।কালের বিবর্তনে সেই বাড়ী টি আজ মেসে রুপান্তরিত হয়েছে আর নাম তার “কবরী মেস”।যে রোডে বাড়ী টি ছিল সেই রোডের নাম এখন “কবরী রোড”। এই ছোট্ট ঘটনা টি থেকে কবরীর জনপ্রিয়তার একটু আঁচ পাওয়া যায়।
অভিনেত্রী হিসেবে কবরীর সবচে পজিটিভ দিক হলো তাঁর স্বতঃস্ফূর্ততা। সংলাপ প্রক্ষেপণে তিনি এতোটাই সাবলীল যে, তাঁর সংলাপ প্রক্ষেপণ দেখলে মনে হয় সংলাপ প্রক্ষেপণের মতো এতো সহজ কাজ আর নেই।
“সাত ভাই চম্পা” সিনেমার “শোনেন শোনেন জাহাঁপনা” গান টি দেখলেই বোঝা যায় তিনি চোখের মুভমেন্টে কতোটা পারদর্শী ছিলেন।যারা ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “আরাধনা” ছবি টি দেখেছেন তারা নিশ্চয় “রুপা” নামের মেয়েটি কে ভুলতে পারেন নি।মানসিক ভারসাম্যহীন একটা মেয়ের চরিত্রে কি দারুন অভিনয় করেছিলেন কবরী।কিন্তু দূর্ভাগ্য! এ ছবির জন্যে জাতীয় পুরষ্কার পান নি কবরী।জাতীয় পুরষ্কারে অন্য আরো কয়েকজন অভিনেত্রীর মতো কবরীও বঞ্চনার শিকার হয়েছেন।
১৯৮৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “দুই জীবন” সিনেমার “তাহমিনা” ও বাংলা চলচ্চিত্রে মনে রাখার মতো একটি চরিত্র।আরো আছে “বধু বিদায়” সিনেমার “মায়া”।মায়ার লিপে “ইকটুশ খানি দেখ” এখনো সিনেমাপ্রেমীদের গভীর মায়ায় আচ্ছন্ন করে।
কবরী করেছেন আন্তর্জাতিক ক্ল্যাসিক “তিতাস একটি নদীর নাম”।বাংলাদেশের প্রথম একশ্যান সিনেমা “রংবাজ” আছে কবরীর ঝুলিতে। বালাদেশের প্রথম এডভেঞ্চার ফিল্ম “মাসুদ রানা”র নায়িকাও কবরী। গ্রামীন পটভূমিতে অনবদ্য প্রেমের গাঁথা “সুজন সখী” যেমন করেছেন তেমনি করেছেন শরৎচন্দ্রের অমর চরিত্র “পার্বতী”। দেবদাসের জন্যে কবরীর জাতীয় পুরষ্কার না পাওয়া ছিল হতাশাজনক।
তবে শহীদুল্লাহ কায়সারের “নবীতুন” হতাশ করে নি কবরী কে। “সারেং বউ” সিনেমায় “নবীতুন” সেজে্বীই তিনি পেয়েছিলেন প্রধান চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর একমাত্র জাতীয় পুরস্কার। সম্প্রতি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারের জুরিবোর্ড এই কিংবদন্তি অবিনেত্রী কে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করে সুবিবেচনার পরিচয় দিয়েছেন।
পরিচালক হিসেবেও সফল হয়েছেন কবরী। প্রথম ও এখনো পর্যন্ত একমাত্র পরিচালিত চলচ্চিত্র “আয়না” রুচিশীল দর্শকের মন জয় করেছে। প্রথম চলচ্চিত্রেই এমন সামাজিক বক্তব্যধর্মী গল্প নির্বাচন করে তিনি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন।
কবরীর ব্যক্তিজীবন ও বর্ণাঢ্য।একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী থেকে তিনি স্বীয় যোগ্যতায় আসীন হয়েছেন জাতীয় সংসদে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন মানুষের জন্যে। জীবনের পরতে পরতে তিনি বপন করেছেন সাফল্যের বীজ।
কবরী আমাদের বাংলা চলচ্চিত্র কে অনেক দিয়েছেন। তাঁর সুস্থ, সুন্দর আগামী ও দীর্ঘায়ু কামনা করে শেষ করছি “আমাদের নায়িকারা” সিরিজের কবরী পর্ব।